বেসরকারি স্কুলে ভর্তিতে সাংসদদের জন্য কোটা পদ্ধতি চালু না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে ভর্তিতে তাঁদের জন্য কোটা পদ্ধতি চালু হচ্ছে না।
সাংসদসহ চার ধরনের কোটা চালুর বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়ে গতকাল সোমবার সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন মহলে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তির জন্য কোটা চালু না করার জন্য শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সূত্রমতে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী বিরক্তি প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব বোঝার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন করে কোটা পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে আসছে। গতকাল সোমবার সাংসদদের কোটা এক না দুই শতাংশ হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল। এদিন ভর্তির নীতিমালা জারির কথা থাকলেও তা এক দিন পেছানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আরেকটু পর্যালোচনা করে আজ মঙ্গলবার নীতিমালা জারি করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষাসচিব।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, আজ নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে।
সূত্রমতে, গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বেলারুশের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের চুক্তি সই অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শিক্ষাসচিবের কথা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভর্তিতে কোনো ব্যক্তির কোটা থাকা উচিত নয়। মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা উচিত। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান না পাওয়া গেলে নাতি-নাতনি কোটা এবং প্রতিবন্ধী কোটা রাখার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী।
দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফিরে এসে মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে শিক্ষাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাংসদের কোটা রাখার বিষয়টি নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করছি। আজ শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি অবহিত করবেন।’ সাংসদের কোটা রাখা হচ্ছে কী হচ্ছে না, সে সম্পর্কে সরাসরি জবাব এড়িয়ে সচিব বলেন, চাপের মুখে মন্ত্রণালয় কোনো কাজ করবে না।
সূত্রমতে, সাংসদ ও বিভিন্ন পর্যায়ে কোটাসহ নতুন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক (সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরসহ) বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে অনুসরণীয় নীতিমালার খসড়ায় সাংসদ ছাড়াও প্রবাসীদের সন্তান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য এক শতাংশ কোটা আরোপ করা হয়। এর সঙ্গে আগের মতো মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা নাতি-নাতনি কোটা, প্রতিবন্ধী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কমর্চারীদের কোটাও রাখা হয়। সব মিলিয়ে কোটা রাখা হয় ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ।
আদালতে রিট: এদিকে স্কুলগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে সাংসদদের জন্য কোটা পদ্ধতি প্রবর্তনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান ও বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুসের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে আবেদনটি দাখিল করা হয়। আদালত বিষয়টি স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রেখেছেন।
বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে রিটটি করা হয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না।
পরে জেড আই খান পান্না প্রথম আলোকে বলেন, কোটা পদ্ধতি প্রবর্তনসংক্রান্ত সরকারের আদেশে বা গেজেটের কপি জমা দেওয়া যায়নি বলে আদালত বিষয়টি স্ট্যান্ডওভার রেখেছেন। পরে শুনানি হবে।
আবেদনে সাংসদদের জন্য কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং এ পদ্ধতি অব্যাহত রাখা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, এ মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে। রিট আবেদনে শিক্ষাসচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (ডিজি) বিবাদী করা হয়েছে।
শুনানিতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার-এর প্রতিবেদন তুলে ধরে জেড আই খান পান্না বলেন, স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে সাংসদেরা কোটা পাচ্ছেন। ভর্তি মেধার ভিত্তিতে হচ্ছে না। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে আইনের দৃষ্টিতে সমতা এবং ৪০ অনুচ্ছেদে পেশা বা বৃত্তির স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। খবর- প্রথম আলো অনলাইন