বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে খুলনা ভেন্যুতে সর্বোচ্চ দর্শক উপস্থিত হয়েছে। এর মূলে ছিল আগের ম্যাচে শাহরিয়ার নাফীসের অপরাজিত ১০২ রানের সেঞ্চুরি। আগের ম্যাচের জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেতে গিয়ে প্রায় হেরেই
বসেছিল খুলনা রয়েলস। রংপুরের বোলিং তোপের মুখে মাত্র ২৮ রানে চার উইকেট হারিয়ে দিশেহারা খুলনা নাফীসের (৫৩) ব্যাটে ভর দিয়ে শেষ অবদি ১৫০ রান জমা করে।
জবাব দিতে নেমে রংপুর ধারাবাহিকভাবেই উইকেট হারাতে থাকে। তবে শেষ পর্যন্ত রংপুর লড়াই করেছে। কিন্তু জয়টা শেষ পর্যন্ত দুর্দন্তভাবে নিজের করে নিয়েছে শাহরিয়ারের দল খুলনা। ১৫১ রানে টার্গেটে শেষ ছয় বলে ২১ রান দরকার।
এক বলে চার আরেক বলে দুই, তৃতীয় বলে রাজ্জাবক বোল্ড। তিন বলে দরকার জয় পেতে ১৫ রান। তা সম্ভব হয়নি রংপুরের পক্ষে। ফলাফল খুলনা বিপিএলে নিজের ৫ম ম্যাচে দ্বিতীয় জয়ের মুখে দেখেছে নয় রানে। রংপুরের স্কোর সাত উইকেটে ১৪১ রান। ৫ ম্যাচ খেলে খুলনা রয়েলসের পয়েন্ট চার। কারন হেরেছে তিন ম্যাচে।
অন্যদিকে রংপুর হেরে গেলেও এক ম্যাচ কম খেলে খুলনার চেয়ে এগিয়ে আছে। রংপুরের চার ম্যাচে দুই জয় আর দুই হার নিয়ে চার পয়েন্ট। আগের ম্যাচে বিনা উইকেটে ২০ ওভারে ১৯৭ রান করা খুলনা টস জিতে ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে জমা করেছে নয় রান।
টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় খুলনা আগের ম্যাচের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি। ০.৩ ওভারে ওপেনার ভিনসেন্ট (আগের ম্যাচে অপরাজিত ৮৯ রান) মাত্র দুই রান যোগ করে বোল্ড হলেন অ্যাডওয়ার্ডের বলে।
মাসক্যারেনহাজ ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে রিকি ওয়েসেলসকে নয় রানে আর পরের বলে ব্রিটকে শূন্য রানে বোল্ড করে হ্যাট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি করেন। আর খুলনাকে ঠেলে দিলেন অন্ধকারে।
১৬ রানেই তিন উইকেট নেই! তারওপর যোগ হল ৫.৪ ওভারে নাজিমউদ্দিনকে পেসার শরিফের শূণ্য রানে ক্যাচে পরিণত করা। চার উইকেটে ২৮ রান!
এমন কঠিন অবস্থায় অধিনায়ক শাহরিয়ার নাফীস (বিপিএলে প্রথম অপরাজিত সেঞ্চুরির মালিক) ধৈর্য্য ধারন করলেন। একজন সঙ্গী খুঁজছিলেন তিনি। মিডল অর্ডারে হ্যারিস নাফীসকে সঙ্গ দিলেন। আর দল ভরাডুবির হাত থেকে রেহাই পেল। ১৪.১ ওভারে চার উইকেটে ৮২ রান, নাফীস ৪৬ বলে ৪৫ রান পাঁচটি চার ও একটি ছয়। হ্যারিস তখন ১৮ রানে। ১৪.৩ ওভারে বোলার অমিত কুমারকে আকাশে ভাসিয়ে ছয় মেরে ফিফটি পূরন করলেন। ৪৮ বলে ৫২ রানে নাফীস। মারকুটে হয়ে উঠলেন নাফীস। মনে হচ্ছিল আগের ম্যাচের মতো আজও বুঝি নাফীস আরও একটি সেঞ্চুরির পালক মাথায় গেঁথে নিতে চলেছেন। কিন্তু নাফীসের ব্যাটিং ধারা বুঝেই তাকে থামিয়ে দিলেন মাসক্যারেনহাজই। সরাসরি বোল্ড হলে খুলনার রানের চাকা কিছুটা হলেও গতি হারিয়ে ফেলে। ৫ম উইকেট জুটিতে ৭০ রান যোগ করে নাফীস ফেরত যাবার সময় হ্যারিস ২৫ রানে অপরাজিত। হ্যারিস সঙ্গী পেলেন ফরহাদ রেজাকে।
৬ষ্ঠ উইকেটে এই জুটি দেখে শুনে পরে মারকুটে রূপ ধারন করে। ১৯তম ওভারে রাজ্জাকের ওভারে ছয় বলে এ দুই ব্যাটসম্যান দুইটি ছয়, একটি চার আর ডাবলস দিয়ে নিলেন ২১ রান। পাঁচ উইকেটে রান ১৩৭! অনেক দূর এগিয়ে যায় খুলনা। হ্যারিস ৩৮ বলে ৩৯ রানেআর ফরহাদ ১০ বলে ২০ রানে। পেসার শরিফের ওভারে প্রথমবলে ফরহাদ রেজা চার মারলেন। আর পরের বলে তুলে মারতে গিয়ে ১২ বলে ২৪ রানে ক্যাচ দিলেন নাসিরের হাতে। আর এক বল পর মিড অফে তুলে মারলেন আসিফ আহমেদ। দুই জনেই ছয় মারতে গিয়ে শলিফের শিকার। স্কোর ১৯.৪ বলে ১৪২ রান। শেষ দুই বলে ড্যানিয়াল হ্যারিস ছয় আর চার দিয়ে খুলনা স্কোর নিয়ে গেলেন ১৫০ রানে। নিজে অপরাজিত রইলেন দুটি চার আর একটি ছয় দিয়ে ৪৮ রানে।
১৫১ রানের জবাবটা ভালভাবে দিতে পারেনি রংপুর রাইডার্স। শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে উইকেট হারাতে থাকে রংপুর। দলের ১০ রানে ওপেনার ইমরুল কায়েস (৯), ১৫ রানে শামসুর রহমান ১ রানে ৪.২ ওভারে ক্যাচ দিলেন। আর এরপর ভরসা করার মতো নেইল ওব্রাইন এক বল বিরতি দিয়ে ক্যট দিলেন। ওব্রাইন কোনো রানই যোগ করতে পারলেন না। সাপুন যাদরান তিন উইকেট শিকার করে মুলত রংপুরের
ব্যাটিং মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছেন। তিন উইকেটে ১৫ রানে দিশেহারা রংপুর। ১৫১ রান তো অনেক দূরের পথ।
৪র্থ উইকেটে হ্যায়েট আর বোরগেজ দলকে টেনে নিতে চেস্টা করেন। ১০ ওভারে তিন উইকেটে ৫৪ রান। দরকার ৬০ বলে ৯৭ রান। ১২.২ ওভারে বোরগেজ তিন রান করে রান আউট হলে রংপুরে চাপটা আরও একদাপ বেড়ে যায়। ক্রিজে তখন নাসির ৩১ রানে আর হ্যায়েট ১০ রানে ব্যাট করছেন। হাতে আছে সাতটি উইকেট। ম্যাচ কে জিতবে সেটা আগাম বলা কঠিন কাজভ। কারন এটা টি২০ ম্যাচ। স্কোর ৫ উইকেটে ৭৫ রান। ৪১ বলে ৭৬ রান দরকার। টার্গেটটা তখন ডাবল হয়ে গেছে। একমাত্র নাসির ছাড়া অসম্ভবকে সম্ভববে পরিনত করার মতো স্বীকৃত ব্যাটসম্যান তো রংপুরে আর শেষ দিকে ছিল না। মাসক্যারেনহাজ ১৬ ওভারের শেষ বলে ১৯ রান করে শফিউলের বলে বোল্ড হয়ে ফেরত গেলেন। রান ছয় উইকেটে ১০১, ২৪ বলে ৫০ রান দরকার। কিন্তু নাসিরকে খুলনা ফেরত পাঠাতে পারছিল না। তাই ম্যাচ জেতা কথা আগাম চিন্তা করা সম্ভব হচ্ছিল না। নাসির তখন ৩৬ বলে ৪৮ রানে চারটি চার ও দুটি ছয় মেরে খুলনার চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। নাসির ৪৯ রানে, দল জয় পেতে দরকার ২১ বলে ৪৮ রান। চার বা ছয় ছাড়া তো সম্ভব নয়। নাসির সেই চেস্টাই করলেন। সাতটি চার আর দুটি ছয় দিয়ে ৪৬ বলে ৬৮ রানে থাকা নাসিরের সামনে ছয় বলে ২১ রান করার চ্যালেঞ্জ। নাসির স্ট্রাইকে ছিলেন
না। তাই সম্ভব হয়নি রংপুরের জয় হাতের মুঠোয় আনা।
২০ ওভারে রংপুরের স্কোর সাত উইকেটে ১৪১ আর নাসির অপরাজিত রইলেন ৪৯ বলে ৭০ রানে অপরাজিত