নবম জাতীয় সংসদ পঞ্চম তথা শেষবর্ষে পা রাখল আজ। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল বর্তমান সংসদের প্রথম অধিবেশন। গত চার বছর সংসদের অভ্যন্তরে ও সংসদকে ঘিরে নানা ঘটনার জš§ হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সংসদ অধিবেশনে বিরোধী দলের নামমাত্র উপস্থিতি। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া নবম সংসদে এ পর্যন্ত ৩৩৭ কার্যদিবসের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৭ দিন। ফলে নবম সংসদ পরিণত হয়েছে মূলত ক্ষমতাসীন দলের সংসদে। তবে সরকারি দলের অনেক এমপি বিশেষ করে মন্ত্রীদের উপস্থিতিও সন্তোষজনক নয়। অনেক মন্ত্রী আছেন, যারা ২০০ দিনও অধিবেশনে যোগ দেননি। সেক্ষেত্রে সংসদ কার্যকর না হওয়ার জন্য শুধু বিরোধী দল নয়, সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
বস্তুত নব্বইয়ের পর থেকে প্রতিটি সংসদেই বিরোধী দলের বর্জন একরকম নিয়মে পরিণত হয়েছে। সংসদ বর্জনের এ সংস্কৃতি আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রকে আশানুরূপ শক্তিশালী করতে পারছে না। অতীতের মতো বর্তমান সংসদেও অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য কিছু পূর্বশর্তের কথা বলে আসছে বিরোধী দল। এসব শর্তের ব্যাপারে তারা যেমন অনমনীয়তার পরিচয় দিয়েছে, তেমনি সরকারি দল নিদেনপক্ষে দু’-একটি শর্ত পূরণেরও আগ্রহ দেখায়নি। ফলে দু’পক্ষে অনাস্থা আরও গভীর হয়েছে। তবে সে তুলনায় সংসদীয় কমিটিগুলোকে দেখা গেছে সক্রিয়। বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরাও সংসদীয় কমিটির সভায় যোগ দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, সংসদীয় কমিটির সভায় যোগ দেয়া গেলে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে সমস্যা কোথায়? জাতীয় সংসদ কোন সরকারি স্থান নয়। সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়ার অধিকার রয়েছে প্রত্যেক সদস্যেরই। এটা তাদের দায়িত্বও বটে। কারণ জনগণ তাদের নির্বাচিত করেছে সংসদে তাদের সুবিধা-অসুবিধা তথা সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য, সংসদ অধিবেশন বর্জন করার জন্য নয়। সেক্ষেত্রে সংসদে অনুপস্থিত থাকা জনগণের সঙ্গে প্রতারণার শামিলও বলা চলে। এটিও ঠিক, বিরোধী দলকে সংসদ অধিবেশনে নেয়ার ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলকে কখনও আন্তরিক মনে হয়নি। আওয়ামী লীগ উদ্যোগ নেয়নি সংসদকে কার্যকর করার। এর দায় তারা এড়াতে পারেন না। তবে বিরোধী দলকে নিজেদের অধিকারের জায়গাটিতে যেতে সরকারি দলের উদ্যোগের অপেক্ষায় থাকতে হবে কেন, এটিও একটি বড় প্রশ্ন।
সংসদীয় ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে হলে সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বিরোধী দলকে। মনে রাখতে হবে, বিরোধী দল মানে চিরদিনের বিরোধী দল নয়। আজকের বিরোধী দল আগামীতে ক্ষমতায় গেলে তখনকার বিরোধী দল যেন সংসদ বর্জনের অজুহাত না পায়, তা নিশ্চিত করার জন্য হলেও তাদের সংসদে যাওয়া উচিত। আমরা আশা করব, আগামী ২৭ জানুয়ারি সংসদের যে শীতকালীন অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে, তা বিরোধী দলের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে এবং নবম সংসদের শেষ দিন পর্যন্ত তারা এ ধারা বজায় রাখবেন।