টানা ৪৬ দিন ধরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। এর মধ্যে তিনি একবারের জন্যও বাইরে বেরোননি। রিজভীর ভাষায়, তিনি ‘আধা-কারারুদ্ধ’।
পুলিশ অবশ্য রিজভীর এই দাবির সঙ্গে একমত নয়। তাদের বক্তব্য, কেউ বের হতে না চাইলে সে দায় পুলিশের নয়। গত ৯ ডিসেম্বর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচির দিন এবং এর আগের রাতে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৩৭টি মামলা হয়। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগে পল্টন থানার একটি মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদকে আসামি করা হয়। গত ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পথে গ্রেপ্তার হন মির্জা ফখরুল। তখন দলীয় কার্যালয়েই ছিলেন রিজভী। এরপর আর তিনি সেখান থেকে বের হননি। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় দপ্তর সম্পাদকের কার্যালয় । এর পেছনে ছোট্ট একটি ঘর; লম্বায় বড়জোর সাত-আট হাত আর প্রস্থে তিন-চার হাত। ওই ঘরেই ঘুম, পড়াশোনা—সবকিছুই। রিজভী জানান, প্রতিদিন সকালে ও দুপুরে সহকর্মীরা তাঁর জন্য খাবার নিয়ে আসেন। আর রাতের খাবার পাঠানো হয় বাসা থেকে । সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজ পড়া, বিভিন্ন বই পড়া, নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা আর দলের দপ্তরের বিভিন্ন কাজ করে ‘একঘেয়ে’ সময় কাটে তাঁর। সকাল ১০টা থেকে রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত কার্যালয়ে থাকেন নেতা-কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা ছাড়াও দলের বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন রিজভী। তিনি মনে করছেন, বাইরে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা দেওয়ার চেয়ে এভাবে দলের কাজ চালিয়ে যেতে পারাটা অনেক ভালো। তিনি বলছেন, এটা পালিয়ে থাকা নয়, ‘অত্যাচারী সরকারের বিরুদ্ধে একটি কৌশল।’ দলীয় সিদ্ধান্তে এটি করছেন কি না জানতে চাইলে রিজভী বলেন, এটি রাজনৈতিক বা দলীয় সিদ্ধান্ত নয়। এটি তাঁর নিজেরই সিদ্ধান্ত। যেহেতু একই মামলায় দলের মহাসচিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং এরপর একের পর একটি মামলায় জড়ানো হচ্ছে। এ কারণেই তিনি এই কৌশল নিয়েছেন। রিজভীর ভাষায়, ‘গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেলে তো আর দায়িত্ব পালন করা যাবে না। গ্রেপ্তার করলে করুক। আমি তো আর লুকিয়ে নেই। তারা দলের কার্যালয়ে ঢুকেও আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারে। কিন্তু হাতে নাতে ধরা দেওয়ার চেয়ে যতক্ষণ এভাবে দলের কাজ করা যায় ভালো।’ রিজভীর আশঙ্কা, তিনি কার্যালয় থেকে বের হলেই পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করবে। তবে পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, আপাতত রিজভীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা পুলিশ করছে না। রিজভী নিজেকে ‘অবরুদ্ধ’, ‘আধা-কারারুদ্ধ’ দাবি করলেও পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। এ বিষয়ে পুলিশের মতিঝিল অঞ্চলের পুলিশের উপকমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, তাঁরা কাউকে অবরুদ্ধ করে রাখেননি। কেউ যদি স্বেচ্ছায় বাসা থেকে বা অন্য কোথাও থেকে বের না হয়, তাহলে তা পুলিশের দায় নয়।
সম্পাদক : অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন | নির্বাহী সম্পাদক : কে এম মিঠু
প্রকাশক কার্যালয় : বেবি ল্যান্ড, বাজার রোড গোপালপুর, টাঙ্গাইল -১৯৯০, বাংলাদেশ।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - ২০১৯-২০২৩