একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার পাকিস্তান থেকে তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন। একটি গোয়েন্দা সূত্র ও ফরিদপুরে তার এলাকা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে বর্তমানে পাকিস্তানের করাচি শহরের বাঙালি অধ্যুষিত ‘আয়শা মঞ্জিল’ কলোনিতে আশ্রয় নিয়েছেন বাচ্চু রাজাকার। তিনি সেখান থেকে ইরান বা তুরস্কে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা (তদন্ত সংস্থা) মো. নুর হোসেন সমকালকে বলেন, ‘বিভিন্ন সূত্র থেকে
জানা গেছে, বাচ্চু রাজাকার পাকিস্তানের করাচি শহরের আয়েশা মঞ্জিলে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে তিনি স্বস্তিতে নেই। পাকিস্তানের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় বাচ্চু রাজাকারকে দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে_ এ আশঙ্কায় তিনি তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয় নিতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন।’
গত বছরের ৭ মে মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাচ্চু রাজকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু এর আগেই বাচ্চু রাজাকার রাজধানী ঢাকার বাড়ি থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান। তাকে পালাতে সহায়তা করে তারই ছেলে এবং এক নিকটাত্মীয়। এ ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতারও করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তবে ঘটনার মূল খলনায়ক এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। গ্রেফতারকৃতরা বাচ্চু রাজাকারকে হিলি সীমান্তে পেঁৗছে দেয় বলে জানা যায়।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ৫০ হাজার রুপির বিনিময়ে বাচ্চু রাজাকারকে সীমান্ত পার করে দেয় হিলির এক মাদক সম্রাজ্ঞীর স্বামী রানা ও তার ছেলে অস্ত্র ব্যবসায়ী কালু। গোপাল নামে এক দালাল ১০ হাজার রুপির বিনিময়ে তাকে নিয়ে যায় কলকাতার হাওড়া রেলস্টেশনে। সেখানে আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী দলের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। ওই দলের অন্য সদস্যরা ভারতীয় ১০ হাজার রুপি নিয়ে টোকেন তুলে দেয় তার হাতে। টোকেনটি দেখালে ভারতীয় পুলিশ কাউকে চেক করে না। হাওড়া থেকে বাচ্চু রাজাকার ট্রেনে পাঞ্জাবের অমৃত শহরে পেঁৗছেন ৯ মে। শহরটি ভারতের শেষ এবং পাকিস্তানের পাঞ্জাব সীমান্তে। পাঞ্জাব সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় সেখানে বাচ্চু রাজাকারকে অবস্থান করতে হয় ৭ দিন। ১৭ মে ১৫ হাজার রুপির বিনিময়ে তাকে পাঞ্জাব সীমান্ত পার করে দেয় দালাল চক্র। ২৪ মাইল পাহাড়ি পথ হেঁটে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের কায়েদ-এ-আজম রেলস্টেশনে পেঁৗছেন বাচ্চু রাজাকার। সেখান থেকে ১৮ মে ট্রেনযোগে পেঁৗছেন করাচি শহরে। সর্বশেষ তথ্যমতে, বাচ্চু রাজাকার পাকিস্তানের করাচি শহরের আয়েশা মঞ্জিলে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে পাকিস্তান থেকে তিনি এখন দালালের মাধ্যমে বেলুচিস্তান প্রদেশের বুলু বাজার দিয়ে ইরানের বান্দরাবাজ শহরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ওই শহর থেকে নৌপথে তুরস্ক, দুবাই, ওমান, গ্রিস, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়া যায়।
বাচ্চু রাজাকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে তার গ্রাম সালতা উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী জানান, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের হুলিয়া নিয়ে করাচির আয়েশা মঞ্জিলে বাচ্চু রাজাকারের আশ্রয় নেওয়াকে ভালোভাবে দেখছে না সেখানকার অনেকেই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া বাঙালি মুসলমানরা এই আয়েশা মঞ্জিলের অধিবাসী (কলোনি)। তারা মনে করছেন, এতে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। বাচ্চু রাজাকারও বিষয়টি জানেন। তাই তিনি তৃতীয় কোনো মুসলিম দেশে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে টেলিফোনে বাচ্চু রাজাকার গ্রামের বাড়িতে যোগাযোগ করেন বলেও ওই সূত্রে জানা যায়।
এদিকে পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার দাবি করেছেন, ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আবুল কলাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের অবস্থান শনাক্ত করা গেছে। বাচ্চু রাজাকারকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সোহরাব হোসেন সমকালকে বলেন, ‘বাচ্চু রাজাকার পাকিস্তানে আছেন বলে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। সরকার চাইলে তাকে খুঁজে পেতে সহযোগিতা করা হবে।’ [নিউজ ক্রেডিটঃ টাইমস এজেন্সি /সমকাল/রঞ্জিত সরকার]