আজ || বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪
শিরোনাম :
  গোপালপুরের মোহনপুরে পোস্টঅফিসের ঘর না থাকায় ভোগান্তি       গোপালপুরে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে গুণী শিক্ষক সংবর্ধনা       গোপালপুরে আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মোমেন গ্রেফতার; ফাঁসির দাবিতে মিছিল       গোপালপুরে ডেইরি ফার্ম মালিক ও আইএফআইসি ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতবিনিময়       গোপালপুর উপজেলা ডেইরি ফার্ম মালিক সমিতির কমিটি গঠন       বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে -ইলিয়াস হোসেন       গোপালপুরে সীরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিল অনুষ্ঠিত       গোপালপুরে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা       গোপালপুরে ১০ম গ্রেড প্রদানের দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন       গোপালপুরে জাতীয়করণের দাবিতে বেসরকারি শিক্ষকদের মানববন্ধন     
 


আদমশুমারির ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

আদমশুমারি-২০১১-এর প্রকল্প পরিচালক অসীম কুমার দের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক কর্মকর্তা। অভিযোগ তদন্ত শেষে এক মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি মহিবুল হক। এ সংক্রান্ত অভিযোগের কপি নতুন বার্তা ডটকমের হাতে রয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ কৃষিশুমারি ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্প ব্যয় হয় ৩৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ১২০ কোটি টাকা। পরিসংখ্যান ব্যুরোর আদমশুমারির প্রকল্প-২০১১-এর প্রকল্প পরিচালক অসীম কুমার দে (উপসচিব, পরিচিতি নং-৭৪৫৯) এবং আদমশুমারির অন্য কর্মকর্তাদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে শুমারিটি সম্পূর্ণ ‘প্রহসনে’ পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষিশুমারি ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রকল্প প্রণয়ন করা হয় ১২০ কোটি টাকা অথচ ব্যয় করা হয়েছে ৩৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। তা ২০১০ সালে একনেকের সভায় অনুমোদন করা হয়। এক বছরের মধ্যে আবারো পিপি সংশোধন করে ১৩৩ কোটি টাকা বৃদ্ধি করে ২৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প প্রণয়ন করে তা আবার একনেকে অনুমোদন করা হয়।
খাতওয়ারি দুর্নীতি চিত্র
আদমশুমারির গণনাকারী, সুপারভাইজার, কো-অর্ডিনেটর সংখ্যা ছিল তিন লাখ ৫০ হাজার। এসব গণনাকারী, সুপারভাইজার ও কো-অর্ডিনেটর প্রশিক্ষণ ও গণনা কাজের জন্য প্রতিজনে দুটি পেন্সিল, একটি ইরেজার, একটি সাপনার বরাদ্দ ছিল। এর বিপরীতে জনপ্রতি একটি করে দেয়া হয়েছে। এসব মাল ক্রয়ের সময় পিপি সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৯ কোটি নয় লাখ টাকা। কিন্তু ব্যয় করা হয়েছে দুই কোটি টাকা। বাকি ১৭ কোটি নয় লাখ টাকা প্রকল্প পরিচালক অসিম কুমার দে এবং ইউএনএফপির কর্মকর্তা জহর লাল দাসের যোগসাজশে এ খাত থেকে টাকা উত্তালন করে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়া হয়েছে।
মুদ্রণ খাতে দুনীতি
২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর অত্যাধুনিক নিজস্ব প্রিন্টিং প্রেস রয়েছে। শুধু আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য সরকারি প্রিন্টিং প্রেসে কাজ না করে বাইরে থেকে মুদ্রণের জন্য ১৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা প্রাক্কলন করে মূল পিপিতে প্রণয়ন করে। কিছুদিন পরে আবার সংশোধিত পিপিতে এর বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ২৩ কোটি ৬৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা করা হয়। কিন্তু চার কোটি প্রশ্নপত্র মুদ্রণের জন্য এক কোটি ৪০ লাখ টাকা রাখা হয়েছিল। মূল পিপিতে প্রতিটি প্রশ্নপত্র মুদ্রণে ব্যয় ধরা হয়েছিল চার টাকা ১০ পয়সা। আর সংশোধিত পিপিতে প্রতিটি প্রশ্নপত্র মুদ্রণে খরচ দেখানো হয়েছে পাঁচ টাকা ১৩ পয়সা। পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রিটিং প্রেসে এগুলো মুদ্রণ করা হলে এতে ব্যয় হতো ১০ হাজার রিম কাগজ, যার মূল্য এক কোটি ৮০ লাখ এবং অন্যান্য বাবদ খরচ হতো দুই থেকে তিন কোটি টাকা। এরপর ভারত থেকে নিম্নমানের কাগজ ও এমআর/আইসিআর প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়েছে। এ খাতে ১৮ কোটি টাকা প্রকল্পে পরিচালক নিজেই উত্তোলন করে নিয়েছেন।
স্পোয়ার ক্রয় খাতে দুর্নীতি
স্পোয়ার ক্রয়ের জন্য প্রথমে মূল পিপিতে এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছিল। পরে ১৭ কোটি ৪৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১৯ কোটি ১৮ লাখ করা হয়। কিন্তু চার কোটি প্রশ্নপত্র আউট সোর্সিং করলে দুই কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এ খাতে ১৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। এসব টাকা ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে কেনাকাটা দেখিয়ে প্রকল্প পরিচালক অসীম কুমার দে তুলে নিয়েছেন।
প্রচার-প্রচারণা খাতে দুর্নীতি
প্রচার-প্রচারণা, পোস্টার, স্টিকার, ব্যানার ও ব্রুসিয়ার বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে দুই কোটি ৭২ লাখ টাকা। কিন্তু এ খাতে খরচ হয়েছে মাত্র দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা। বাকি টাকা কাজ না করে তুলে নেয়া হয়।
প্রকল্প পরিচালক অসীমের দেশ-বিদেশে বাড়ি
আদমশুমারি প্রকল্পের পরিচালক অসীম কুমার দের বন্ধু সুবোধ কুমারের ইন্টিগ্রেশন ফার্মের মাধ্যমে সব টেন্ডার, কোটেশন পাইয়ে দিয়ে অর্থপাচার করে সুবোধের মাধ্যমে ভারতে বাড়ি নির্মাণ শুরু করেছেন এবং ওয়াশিংটনের মেরিল্যান্ডে একটি বাড়ি ক্রয় করেছেন। এছাড়া রাজধানীর লালমাটিয়া ও ধানমণ্ডিতে স্ত্রী ও সন্তানের নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
ইউপিএস ক্রয়ে দুর্নীতি
পরিসংখ্যান ব্যুরোতে এক মিনিটের জন্যও বিদ্যুৎ যায় না। এরপরও এক হাজার ৪০০ হাই ভোল্টেজ প্রতিটি ইউপিএসের মূল্য ৪০ হাজার টাকা  করে। এ খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে পাঁচ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কিন্তু প্রতিটি ইউপিএস ক্রয় করা হয়েছে ২২ হাজার টাকা করে।  এ খাতে দুই কোটি ৫২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এ বিষয় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক গোলাম মোস্তাফা কামালের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে পড়েছে। তারা ব্যবস্থা নেবেন।” এর বেশি কিছু তিনি বলতে চাননি।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একজন উপ-পরিচালক বলেন, সরকারি দলের ক্ষমতা দেখিয়ে অসীম কুমার কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন এবং দেশ-বিদেশে বাড়ি বানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে।
অন্যদিকে অভিযুক্ত প্রকল্প পরিচালক অসীম কুমার দের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, “আমি দুই মাসের প্রশিক্ষণে আছি, কে অভিযোগ করেছেন তা আমি জানি না।” তিনি দুর্নীতি কথা অস্বীকার করেন।
এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি মহিবুল হকের সঙ্গে কথা হলে তিনি নতুন বার্তাকে বলেন, “তদন্ত করা হচ্ছে। প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!