স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সারাসরি বলেছেন, ‘বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে মারধর করার পুরস্কার হিসেবেই তাকে পদক দেয়া হয়েছে।’
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
অসীম সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ কাজ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে হারুনকে এ পদক দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পদক পরিয়ে দেন।
এতদিন পর হারুনকে পদক দেয়া হলো কেন, এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে যারা ভূমিকা রেখেছেন, তাদের এখনও পদক দেয়া হয়। সময় কোনো বিষয় নয়।’
ডিসি হারুনকে পদক দেয়ার খবরে জয়নুল আবদিন ফারুক প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এভাবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে পুলিশকে কলঙ্কিত করা হলো।’
এছাড়া বিএনপি নেতারা প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্যই এ পদক দেয়া হয়েছে। এটা পুলিশ বাহিনীকে দলীয়করণের এক মহোৎসব।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৬ জুলাই বিরোধী দলের হরতালের সময় ‘শুয়োরের বাচ্চা, চড় মেরে দাঁত ফেলে দিব’ বলে ডিসি হারুন অর রশিদ জাতীয় সংসদের সামনে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের ওপর হামলা চালান। এ সময় লাঠি দিয়ে আঘাত করে ফারুকের মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া তার বুকের ওপর উঠে বুট দিয়ে লাথি মারে পুলিশ সদস্যরা। রক্তাক্ত অবস্থায় প্রাণ বাঁচাতে ফারুক এমপি হোস্টেলে গিয়ে আশ্রয় নিলে সেখানেও তার ওপর হামলা চালায় পুলিশ। গুরুতর আহত ফারুককে পরে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যেতে হয়।
ডিসি হারুন সে সময় তেজগাঁও থানার এডিসি ছিলেন। পরে তাকে পদন্নোতি দিয়ে লালবাগ থানার ডিসি করা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা কামরুল আসহান বাংলামেইলকে বলেন, ‘সব বিধি মেনেই পুলিশ পদক দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অন্য কোনো বিষয়ের অবকাশ নেই।’
ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার এএসপি গাজী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘পদক কে পাবেন না পাবেন সে বিষয়ে পুলিশের কোনো ভূমিকা নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কে কোন বিষয়ের জন্য পদক পেল তা মন্ত্রণালয়ের বিষয়।’
মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ডিসি হারুনকে পিপিএম পদক দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে মোট ৬৭ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম), বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম-সেবা) এবং রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা) এ চার ধরনের পদক প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের পদক পরিয়ে দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাই না। তাদের কাজ হবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষাসহ ‘দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন’ এই ব্রত রেখে অপরাধীদের সনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া।”