স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ওইদিন পুলিশের ওপর নির্দেশ ছিল রাজপথে কোনো ধরনের জনসমাবেশ যেন করতে দেয়া না হয়। কারণ তারা সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছিল। ডিসি হারুন নিজের জীবন বাজি রেখে সেদিন ফারুকের নেতৃত্বে রাজপথের বিশৃঙ্খলা রুখে ছিলেন।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, “২০১২ সালে ডিসি হারুনের অনেক উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম রয়েছে। এজন্য তাকে ২০১৩ সালের পদক দেয়া হচ্ছে।”
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার ও ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহম্মেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৬ জুলাই বিএনপি’র হরতাল চলাকালে জাতীয় সংসদে দলটির চিফ হুইপ ফারুকের ওপর ওই পুলিশি হামলার ঘটনা ঘটে। ‘শুয়ারের বাচ্চা, থাপরাইয়া তোর দাঁত ফেলে দেবো’’- পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এভাবেই অকথ্য গালিগালাজ দিয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে পেটাতে শুরু করেন। এই মারমুখী আচরণ দেখে কনস্টেবলরাও জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। শুরু হয় কিল-ঘুষি-লাথি।
সেদিনের সংবাদভাষ্য অনুযায়ী, শুরু থেকেই মারমুখী আচরণ করছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) বিপ্লব কুমার সরকার। বিএনপির ৩০ জন এমপিকে ঠেকাতে সেখানে পুলিশ সদস্য ছিলেন শতাধিক। ন্যাম ভবনের সামনে তারা সমবেত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ঘিরে ফেলে পুলিশ। ফারুকের গায়ে ছিল নীল-সাদা স্ট্রাইপের গেঞ্জি। পুলিশের এক কর্মকর্তা তাকে টিটকারি দিয়ে বলেন, “হরতাল করবি, এই কারণে গেঞ্জি পড়ে বের হয়েছিস। দেখি, কিভাবে হরতাল করিস।” এরপরই দু’পক্ষে কথা কাটাকাটি শুরু হয়।
এক পর্যায়ে এক কথা-দু’কথায় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে গালিগালাজ শুরু করে পুলিশের দুই কর্মকর্তা। উত্তেজিত হয়ে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘‘শুয়ারের বাচ্চা, থাপরাইয়া তোর দাঁত ফেলে দেবো’’। তখন ফারুক চিৎকার করে বলতে থাকেন, “পারলে ফেল দেখি।” তৎক্ষণাৎ এডিসি হারুন-অর-রশীদ পেছন দিক থেকে তেড়ে এসে অন্যান্য পুলিশ কনস্টেবলদের নিয়ে ফারুকের ওপর হামলা চালান। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিপ্লব সরকার ও হারুন-অর-রশিদকে অনুসরণ করে তাদের অধীনস্থ পুলিশ সদস্যরা অমানবিকভাবে পেটাতে থাকেন জয়নুল আবদিন ফারুককে। কর্মকর্তারা চিৎকার করে বলতে থাকেন, “মার”। কনস্টেবলরা ঝাঁপিয়ে পড়ে ফারুকের ওপর। শুরু হয় কিল-ঘুষি-লাথি।
তিনি পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাকে ঘিরে ফেলে পুলিশ। টানাহেঁচড়াতে ফারুকের গেঞ্জি খুলে নেয় পুলিশ। তখন দেখা যায়, ফারুকের মাথা থেকে রক্ত ঝরে সারা গা রক্তাক্ত হয়ে গেছে। এই অবস্থায় বিএনপির অন্যান্য এমপিরা ফারুককে ন্যাম ভবনের ভেতরে নেয়ার চেষ্টা করেন। সেখানেও পুলিশ তাকে তাড়া করে।
ফারুক লিফটে ওঠার চেষ্টা করেন। সেখানে থেকে পুলিশ সদস্যরা তাকে টেনে-হিঁচড়ে চ্যাংদোলা করে গাড়িতে ওঠায়। গাড়ির কিনারে উঠিয়েই ড্রাইভার গাড়ি চালিয়ে দেয়। গাড়ি থেকে ছিটকে পড়ে যান ফারুক। এ সময় তিনি মাথায় আঘাত পান। নিস্তেজ হয়ে কংক্রিটের সড়কে পড়ে থাকেন। তার জিভ বেরিয়ে আসে। এরপর তার সহকর্মীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
ওই ঘটনায় বিএনপির সংসদ সদস্য আশ্রাফ উদ্দিন নিজাম বাদী হয়ে ১২ জুলাই সিএমএম আদালতে পুলিশের দুই কর্মকর্তা এবং অজ্ঞাতনামা আরো ২৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশকে প্রতিবেদন দিতে আদেশ দেন। গত বছরের শেষ দিকে পুলিশ এ মামলায় প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে উল্লেখ করা হয়, ওই দিনের ঘটনায় পুলিশের কোনো দোষ নেই।