অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা এটা এখন রাখঢাক ছাড়াই মেনে নিচ্ছেন, প্রবৃদ্ধি বাড়াতে জাপানের নেয়া সাম্প্রতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো লাভবানই হবে। বিশেষ করে, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এ অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিগুলোয় সরবরাহ আদেশ বাড়ছে। এ সুযোগে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কাছা খুলে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। সূত্র: ইন্টারনেট।
বিশ্লেষকরা এটা মনে করছেন, চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বৈরী সম্পর্কের কারণে জাপান দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে বিশেষ মনোযোগী হওয়ার কারণে এশিয়ার অর্থনীতিতে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এইচএসবিসির এশিয়া ইকোনমিক রিসার্চের প্রধান ফ্রেডরিক নিউম্যান বলেন, সহজ অর্থায়নের কারণে জাপানি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলো এখন দ্রুত বিনিয়োগ করতে পারবে। ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিনিয়োগ বাড়বে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে সম্পদমূল্য, বিনিয়োগ এবং ব্যয়ের পরিমাণ বাড়বে, যা চলতি বছর স্থিতিশীল অর্থনীতি ধরে রাখতে সহায়তা করবে।
গত পাঁচ বছরের মধ্যে তিনবার মন্দায় পড়েছিল জাপান। এ কারণে অর্থনীতিতে গতি ফিরিয়ে আনতে নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী আবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। ১৯৯০’র দশকে এই জাপানি বিনিয়োগের কারণেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অর্থনৈতিক প্রসারণ শুরু হয়েছিল। এজন্যই দেশটি এখন বিনিয়োগে গুরুত্ব দিচ্ছে। সেসঙ্গে ঋণ ব্যয় কমে আসায় জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশে বিনিয়োগের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
জাপানের দ্বিতীয় বৃহত্তম অটোমোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিশান গত নভেম্বরে থাইল্যান্ডে ৩৭০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়। একই মাসে টয়োটাও ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি ইন্দোনেশিয়ায় উত্পাদনক্ষমতা দ্বিগুণ করবে। চীনের সঙ্গে বিরোধে জাপান যতই জড়িয়ে যাচ্ছে, ততই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে দেশটির বাণিজ্যিক ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যাচ্ছে।
এইচএসবিসি হোল্ডিংস ও ক্রেডিট সুইসের মতে, জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের নেয়া সাড়ে ১১ হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা কর্মসূচির কারণে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে।
ক্রেডিট সুইসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, জাপানের শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো পণ্য রফতানিকারক দেশগুলো সবচেয়ে লাভবান হবে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংস্থাটির এক অর্থনীতিবিদ সান্তিতার্ন সাথিরাথাই জানান, জাপানের সঙ্গে ‘সরবরাহকারী’ এবং ‘ভোক্তা’র সম্পর্ক রয়েছে – তারাই এখানে জিতবে। এছাড়া দেশে সরকারি ব্যয় এবং ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করেছে সেসব দেশেও জাপানের প্রণোদনা প্রকল্পটি সহায়তা করবে।
ক্রেডিট সুইসের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে জাপানি মুদ্রা ইয়েনকে অবমূল্যায়িত করায় জাপানি অটোমোবাইল এবং ইলেকট্রনিকস শিল্পগুলোর রফতানি বাড়বে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কোরিয়া।
হংকংয়ে জেপি মরগান চেজের কৌশলবিদ জেসন মর্টিমার জানান, এশিয়ার যেসব দেশের মুদ্রা বর্তমানে অবমূল্যায়িত, সেখানেও মুদ্রা সামঞ্জস্যের প্রয়োজন দেখা দেবে। বিনিয়োগের খুবই ভালো সুযোগ এটি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পূর্ব চীন সাগরে দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে চীনের সঙ্গে বিতর্কও আবেকে বাধ্য করেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে নজর দিতে। গত মাসে দায়িত্ব নেয়ার পরই সম্পর্ক উন্নয়নে তিনি গত সপ্তাহে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া সফর করেছেন। এ তিন দেশও চীনের সঙ্গে সীমান্ত-সম্পর্কিত বিরোধে জড়িত।
জাপানের কাস্টমসের দেয়া তথ্যমতে, গত বছরের প্রথম ১১ মাসে আসিয়ানের (জাপানের তৃতীয় বৃহত্তম রফতানি বাজার) ১০টি দেশে যে পরিমাণ রফতানি করা হয়, তা মোট রফতানির ১৬ দশমিক ২ শতাংশ; যা ২০১১ সালের তুলনায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। চীনে (জাপানের বৃহত্তম রফতানি বাজার) একই সময়ে রফতানি কমেছে ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ১ শতাংশ।