আজ || মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
শিরোনাম :
  গোপালপুরে মুক্তিপনের দাবিতে অপহৃত শিশুর গলিত লাশ কালিয়াকৈর থেকে উদ্ধার; গ্রেফতার ২       গোপালপুরের মোহনপুরে পোস্টঅফিসের ঘর না থাকায় ভোগান্তি       গোপালপুরে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে গুণী শিক্ষক সংবর্ধনা       গোপালপুরে আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মোমেন গ্রেফতার; ফাঁসির দাবিতে মিছিল       গোপালপুরে ডেইরি ফার্ম মালিক ও আইএফআইসি ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতবিনিময়       গোপালপুর উপজেলা ডেইরি ফার্ম মালিক সমিতির কমিটি গঠন       বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে -ইলিয়াস হোসেন       গোপালপুরে সীরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিল অনুষ্ঠিত       গোপালপুরে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা       গোপালপুরে ১০ম গ্রেড প্রদানের দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন    
 


বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড

 স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মাওলানা আবুল কালাম আযাদের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে আনা আটটি অভিযোগের মধ্যে সাতটি প্রমাণিত হওয়ায় এ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। মাওলানা আযাদ বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।

সোমবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলার রায় পাঠ শুরু হয়। ১১২ পৃষ্ঠার ৩৩টি অনুচ্ছেদে বিভক্ত রায়টির সারসংক্ষেপ পাঠ করেন ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহিন।
স্বাধীনতার ৪১ বছর পর কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার এই প্রথম রায় ঘোষণা হলো।সোমবার সকাল পৌনে ১১টায় কোর্ট বসে। ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীন আদালত শুরুর আগেই সবার সহযোগিতা কামনা করেন। জনাকীর্ণ আদালতকক্ষে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান রায় পাঠ করেন। তার সঙ্গে ছিলেন অপর দুই সদস্য। ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থান সংকুলান না হওয়ায় আজকের আদালত বসে ট্রাইব্যুনাল-১ এ।

২৬ ডিসেম্বর এ মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। মামলায় আইনি পয়েন্টে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী। এরপর আসামিরপক্ষের আইনজীবী আবদুশ শুকুর খান তার যুক্তি উপস্থাপন শেষ করলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মামলার রায় যেকোনো দিন দেয়া হবে মর্মে বিএভি’তে রেখে দেন।

মাওলানা আযাদের পরিচয়: নাম মাওলানা আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু, পিতার নাম মৃত আবদুস সালাম মিয়া, মায়ের নাম মৃত মাগফুরা খাতুন।
স্থায় ঠিকানা: বড়খাড়দিয়া (ছয়আনি), থানা সালথা, জেলা ফরিদপুর। বর্তমান ঠিকানা: আযাদ ভিলা ২৭৯/৬ চানপাড়া, উত্তরখান, ঢাকা।

১৯৪৭ সালের ৫ মার্চ ফরিদপুরের বড়খাড়দিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবুল কালাম আযাদ। তিনি ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে লেখাপড়া করেছেন।

গত বছরের ৩ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকে তিনি পলাতক।

তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো: আযাদের বিরুদ্ধে ছয় ধরনের আটটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন।

প্রসিকিউশনের অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে রাজাকার বাহিনী গঠনের আগ পর্যন্ত আযাদ পাকিস্তানি সেনাদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করেন।

পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে মিলে আযাদ স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় ও স্বাধীনতাপক্ষের বাঙালি জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংস নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

তার বিরুদ্ধে আনা আট অভিযোগের মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও অষ্টম অভিযোগে মুক্তিযুদ্ধকালে অপহরণ, আটকে রাখা ও নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে।  তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ অভিযোগ হত্যার, পঞ্চমটি ধর্ষণ আর সপ্তম অভিযোগ হলো গণহত্যার।

প্রথম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে সকাল ১০টার দিকে আযাদ ও তার সহযোগীরা ফরিদপুর শহরের খাবাশপুরের রণজিৎনাথ ওরফে বাবুনাথকে ধরে নির্যাতন করা হয়।
তবে গভীর রাতে রণজিৎ জানালা ভেঙে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই সকাল ১১টার দিকে আলফাডাঙ্গা থেকে ধরে আনা আবু ইউসুফকে ফরিদপুর স্টেডিয়ামে আটকে রেখে আযাদ অমানবিক নির্যাতন করেন।

অষ্টম অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ১৮ মে সকাল ১০টার দিকে আযাদ সাত-আটজন রাজাকার সদস্যকে নিয়ে সালথা থানার উজিরপুর বাজারপাড়া গ্রাম থেকে হিন্দু এক তরুণীকে অপহরণ করে খাড়দিয়া গ্রামের চান কাজীর বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করেন। সাত-আট দিন পর মুক্তি পান ওই তরুণী।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৪ মে আযাদ ১০-১২ জন রাজাকার সদস্যসহ বোয়ালমারী থানার কলারন গ্রামের সুধাংশু মোহন রায়কে গুলি করে হত্যা করেন। এ সময় সুধাংশুর বড় ছেলে মনিময় রায় গুলিতে গুরুতর আহত হন।

চতুর্থ অভিযোগ হচ্ছে, ১৬ মে বেলা ৩টার দিকে আযাদ ১০-১২ জন রাজাকার সদস্যকে নিয়ে সালথা থানার (সাবেক নগরকান্দা) পুরুরা নমপাড়া গ্রামে যান এবং মাধবচন্দ্র বিশ্বাসকে গুলি করে হত্যা করেন।

৩ জুন আযাদের নেতৃত্বে ১০-১২ জন রাজাকার সদস্য সালথার ফুলবাড়িয়া গ্রামে হিন্দুপাড়ায় লুটপাট চালায়। সেখানে তারা চিত্তরঞ্জন দাসকে গুলি করে হত্যা করে বলে ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়।

পঞ্চম অভিযোগ হচ্ছে, একাত্তরের ৮ জুন দুপুর ১২টার দিকে আযাদ রাজাকার সদস্যদের নিয়ে বোয়ালমারী থানার নতিবদিয়া গ্রামের এক হিন্দু বাড়িতে হামলা চালান। আযাদ ও তার সহযোগীরা ওই বাড়ির দুই নারীকে ধর্ষণ করেন।

সপ্তম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ১৭ মে রাজাকার বাহিনীর ৩০-৩৫ সদস্যকে নিয়ে আযাদ বোয়ালমারী থানার হাসামদিয়া গ্রামের হিন্দুপাড়ায় লুটপাট চালান এবং ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন।

পরে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শরৎচন্দ্র পোদ্দার, সুরেশ পোদ্দার, শ্যামাপদ পোদ্দার, যতীন্দ্র মোহন সাহা, নীল রতন সমাদ্দার, সুবল কয়াল ও মল্লিক চক্রবর্তীকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।

এ মামলায় আযাদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। এসব সাক্ষীকে রাষ্ট্র নিয়োগ দেয়া আইনজীবী আবদুশ শুকুর খান জেরা করেছেন।

আসামিপক্ষে কোনো সাক্ষী না থাকায় এ মামলার কার্যক্রম অতিদ্রুত শেষ হয়েছে।

গত বছরের ২২ মার্চ চিফ প্রসিকিউটরের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারের আবেদন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে ৩ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে তখন থেকে তিনি পলাতক।

গত ৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল আবুল কালাম আযাদের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরুর আদেশ দিয়ে তার পক্ষে আইনি লড়াই করতে সরকারের খরচে মো. আবদুশ শুকুর খানকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

এরপর তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কয়েকদফা শুনানি শেষে গত বছরের ৪ নভেম্বর আযাদের বিরুদ্ধে আটটি সুনির্দিষ্ট ঘটনায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এর আগে প্রসিকিউশন তার বিরুদ্ধে ১০টি ঘটনায় ২২টি অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ৪৪৮ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেন, “আমারা গভীর প্রত্যাশা নিয়ে অধীর আগ্রহ ভরে বসেছিলাম। আমাদের প্রত্যয়দীপ্ত বিশ্বাস আগামীকাল মাওলানা আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে প্রত্যাশিত রায় ঘোষণা করা হবে।”

এ বিষয়ে মামলার দায়িত্বেরত প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান বলে, “মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কুখ্যাত রাজাকার মাওলানা আবুল কালাম আযাদের রায় ঘোষণা করা হবে।”

২২ ডিসেম্বর থেকে আবুল কালাম আযাদের মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে এ মামলার রায়ের জন্য নির্দিষ্ট দিন ধার্য না করে সিএভিতে রেখে দেন।

৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল আবুল কালাম আযাদের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরুর আদেশ দিয়ে তার পক্ষে আইনি লড়াই করতে সরকারের খরচে মো. আবদুশ শুকুর খানকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়।

গত ১১ অক্টোবর এ মামলার নথিপত্র (ডকুমেন্ট) ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে বুঝে নেন। ৯ সেপ্টেম্বর বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

গত ২৬ জুলাই তদন্ত সংস্থা বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্তকাজ শেষ করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেয়। এর আগে গত ৩ এপ্রিল বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর থেকে তিনি পলাতক। পরে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ডেইলি স্টার ও জনকণ্ঠ পত্রিকায় তাকে আদালতে হাজির হওয়ার হুলিয়া জারি করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনাল।

বাংলাদেশটাইমস.নেট/রঞ্জিত সরকার / ঢাকা
মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!