পুঁজিবাজারে পুঁজির নিরাপত্তা না পেয়ে নিজেদের পকেটকেই নিরাপদ ভাবছেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ, ভয়াবহ ধসের পর গত ২ বছরের দর পতনে বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশ সম্বল গায়েব হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে অবশিষ্টাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করাকে নিরাপদ মনে করতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, পুঞ্জীভূত লোকসান কাটিয়ে উঠা যাবে বিনিয়োগকারীদের এমন স্বপ্ন বিগত ২ বছরে মলিন হয়ে গেছে। সূচক, দৈনিক লেনদেন এবং বাজার মূলধন অর্থাৎ এমন কোনো সূচক নেই যা গত ২ বছর ধরে কমেনি। যে বাজারে দৈনিক প্রায় আড়াই থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হওয়া স্বাভাবিক ছিল সে বাজারে এখন দৈনিক লেনদেন দেড়শ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অথচ এ সময়ের মধ্যে বাজারে প্রায় দেড় ডজন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এতে করে সূচক এবং বাজার মূলধন বেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ঘটেছে উল্টোটা। দিনের পর দিন তলানিতে পড়ে আছে দেশের পুঁজিবাজার। অথচ এখানে সামান্য মুনাফার আশায় বিনিয়োগকারীরা জীবনের সঞ্চিত পুঁজি বিনিয়োগ করতে এসেছিলেন। তাদের পকেটের টাকা পুঁজিবাজারে গায়েব হয়ে গেলেও তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এমনতাবস্থায় বিনিয়োগকারীরা পকেটকেই অবশিষ্টাংশ পুঁজির নিরাপত্তা হিসাবে দেখছেন। এদিকে সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন মূদ্রানীতি নিয়ে কিছুটা চিন্তিত বিনিয়োগকারীরা। কারণ, দেশের রাজনৈতিক অবস্থা যে খুব একটা ভালোর দিকে যাচ্ছে তার প্রমান নেই। এছাড়া ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তনের উপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। যে কারণে সংশ্লিষ্ট সবাই এসব বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশি। আর উল্লিখিত পরিস্থিতিগুলো পুঁজিবাজারবান্ধব হলে বিদ্যমান অস্থিরতা অনেকটা কেটে যাবে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। এদিকে দীর্ঘ ২ বছরেও বাজারে স্বাভাবিক পরিবেশ উপহার দিতে না পারায় নীতি নির্ধারকদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। তাদের মতে, এ সময়ের মধ্যে বাজারে শুধু নানামুখী সংস্কার হয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বাভাবিক বাজার উপহার দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে চলমান লেনদেন পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের সব আশা ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছে। ফলে সহসাই বাজার নিয়ে ভুক্তভোগীরা আর আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। অপরদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা নিয়েও সন্তুষ্ট নন বিনিয়োগকারী এবং বাজার সংশ্লিষ্টরা। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তারল্য সংকটের দোহাই দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বাজারবিমুখ রয়েছে। অপরদিকে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকট নেই বললেও বিনিয়োগে ফিরছেনা। বাজারের উন্নয়নে নেই কোনো বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা হাল ছেড়ে দিলেও হারানো পুঁজির মায়া ছাড়তে পারছেন না। তাই বাজারে সামান্য ঊর্ধ্বমুখী প্রবনতা দেখা দিলে তারা পুরনায় হাউজমুখী হন। লেনদেনে অংশ নেয়ার কথা চিন্তা করেন। কিন্তু অংশ নেয়ার আগেই পরিস্থিতি পুনরায় পাল্টে যাওয়ার কারণে তাদের হতাশা ক্রমেই বাড়ছে। এমতাবস্থায় পকেটকেই নিরাপদ ভাবছেন বিনিয়োগকারীরা। অনেকের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিনিয়োগকারী রাসেল আরমান বলেন, বাজার সর্ম্পকে সবকিছু চিন্তা করে বিনিয়োগের মতো কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। কারণ, যখনই বিনিয়োগে এসেছি তখনই লোকসানে পড়েছি। তাই স্বাভাবিকতার লক্ষণ না দেখে আর না।