কূটনৈতিক তদবির ও আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমেও তাকে কারামুক্ত করতে না পারায় সব শেষে আন্দোলনে যাওয়ার এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে দলটি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও দলের শীর্ষ নেতারকে আন্দোলনে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানসূচি ও ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচি শেষে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রিয়েল-টাইম নিউজ ডটকম-কে বলেন, ১৮ দলীয় জোটের চলমান আন্দোলন কর্মসূচিতে মির্জা ফখরুলের মুক্তির দাবি সংযুক্ত করা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী থাকায় তার মুক্তির জন্য আপাতত আলাদা কর্মসূচি দেয়নি দল।
তিনি বলেন, ২৫ জানুয়ারি জোটের ঘোষিত কর্মসূচি শেষ হবে। এরপর দলের নীতিনির্ধারকরা আলোচনা করে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রি. জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ রিয়েল-টাইম নিউজ ডটকম-কে বলেন, মির্জা ফখরুলকে সরকার ষড়যন্ত্র করে একের পর এক মিথ্যা মামলায় আটক করে রেখেছে। অবিলম্বে তাকে মুক্তি না দেওয়া হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা দলের নীতিনির্ধারকরা শিগগিরই চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বসে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের মুক্তির জন্য আলাদা কর্মসূচি ঠিক করবো।’
প্রসঙ্গত, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে ১৮ দলের রাজপথ অবরোধ কর্মসূচিতে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় পল্টন ও শেরে-বাংলা নগর থানার পৃথক দুই মামলায় মির্জা ফখরুলকে গত ১০ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ফখরুলকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও তার মুক্তির দাবিতে গত ১৩ ডিসেম্বর সারাদেশে আধাবেলা হরতাল পালন করে। এরপর ঠাকুরগাও জেলা বিএনপি ও রংপুর বিভাগেও আলাদা করে হরতাল পালন করে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। পাশাপাশি দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো ঢাকায়ও বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধন করে।
বিএনপি সূত্রে জানায়, আন্দোলন করেও মির্জা ফখরুলকে কারামুক্ত করতে না পেরে আইনি লড়াইয়ের ওপর নজর দেয় বিএনপি। গত ২ জানুয়ারি দুই মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। জামিন পেলেও তাকে মুক্তি না দিয়ে গত ৩ ডিসেম্বর মতিঝিল এবং সূত্রাপুর থানায় দায়ের করা আরও দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গত ১৫ জানুয়ারি সূত্রাপুরের মামলায় মঞ্জুর করলেও মতিঝিলের মামলায় তার জামিন নামঞ্জুর করে মহানগর দায়রা জজ আদালত। এরপর ১৬ জানুয়ারি পল্টন ও কলাবাগান থানায় দায়ের করা দুটি পৃথক মামলায়ও তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিন করে রিমান্ড চায় পুলিশ।
কলাবাগানের মামলায় আগামী ২৪ জানুয়ারি ওই রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি হবে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর মাজিস্ট্রেট মোহাম্মাদ আলী হোসেইনের আদালতে। আগামী ২৭ জানুয়ারি পল্টনের মামলার রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানির হবে ঢাকার মহানগর মাজিস্ট্রেট রেজাউল করিমের আদালতে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তারের পর দলটি প্রথম দিকে কঠোর মনোভাব দেখালেও পরে নমনীয় আচরণের সিদ্ধান্ত নেয়। মার্চের আগে আর কোনো কঠোর কর্মসূচিতে যাবে না বলেও দলটির পক্ষ থেকে সরকারকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল।
ঢাকায় গণসংযোগ কর্মসূচিতে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সরকারকে মেয়াদ পূরণের সুযোগ দেয়ার কথা বলেন। দলটির নীতিনির্ধারকরা আশা করেছিল এর ফলে মির্জা ফখরুল মুক্তি পাবেন। খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার ব্যাপারেও ছাড় দেবে সরকার। কিন্তু বিরোধী দলের প্রতি সরকারের মনোভাব কঠোরই থাকে।
জানা গেছে, এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু হয়। গত ১৭ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার সাথে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে মির্জা ফখরুলের মুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর গতকাল ১৮ জানুয়ারি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর বাসায় ১৪ দেশের কূটনীতিকদের এক ভোজসভা হয়। সেখানেও মির্জা ফখরুলের মুক্তির বিষয়টি আলোচিত হয়।
বিএনপি সূত্র নিশ্চিত করেছে, মির্জা ফখরুলকে নতুন কোনো মামলায় গ্রেপ্তার না দেখিয়ে অবিলম্বে মুক্তি দিতে সরকারের সাথে যোগাযোগ করতে দলটির পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের অনুরোধ জানানো হয়।
একই সাথে কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে, সরকার মির্জা ফখরুলের ব্যাপারে নমনীয় না হলে এ মাসের শেষের দিকে আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকছে না দলটির। মির্জা ফখরুলের মুক্তির ব্যাপারে দলের নমনীয় আচরণের বিষয়টি এরই মধ্যে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।