দুপুরের মধ্যেই পাম্পগুলোতে মজুদ জ্বালানি তেল ফুরিয়ে গেছে। ডিপোগুলো থেকেও দুপুর থেকে জ্বালানি তেলের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
শনিবার দুপুর থেকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোক্তাদের তাদের গাড়ির জন্য পেট্রোল, অকটেন কিনতে দেখা গেছে। তবে ধর্মঘটের আতঙ্কে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি তেল নেয়ার কারণে পাম্পগুলোতে তেলের মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিশেষত অকেটন ও পেট্রোলের তেলের মজুদ বিকালের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। চাহিদা অনুযায়ী কেউই জ্বালানি তেল কিনতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন। অনেকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও তেল কিনতে পারেননি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগের কর্মী সোহেল আহমেদ প্রতিদিন পেশাগত কাজেই মোটরবাইকে চড়েন। চারটি পাম্পে ঘুরে তিনি আসেন ঢাকার ফকিরাপুলে অবস্থিত এমকে পেট্রোলপাম্পে। সেখানে তাকে পেট্রোলপাম্পেটর বিক্রয়কর্মী তানভীর জানান, ‘তেল নেই।’
হতাশ সোহেলের সাথে পাম্প স্টেশনটিতে কথা হয় রিয়েল-টাইম নিউজ ডটকম- এর নিজস্ব প্রতিবেদক আরেফিন শাকিলের। সোহেল তাকে জানান, ‘তিনি বিকাল থেকেই পেট্রোল কেনার জন্য বিভিন্ন পাম্প স্টেশনে যাচ্ছেন। কিন্তু কোথাও পেট্রোল পাচ্ছেন না।’
‘সব জায়গা বলছে ফুরিয়ে গেছে। সকালে কিভাবে বাসা থেকে বের হব ভাই, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’- যোগ করেন সোহেল।
পাম্পটির বিক্রয়কর্মী তানভীর জানান, ‘দুপুর ২টার মধ্যে পাম্প খালি হয়ে গেছে। নারায়ণগঞ্জের ডিপো থেকে শনিবার কোনো তেল সরবরাহ করা হয়নি।’
ওয়াকিল আহমেদ তার প্রাইভেট কার নিয়ে মিরপুর ১২ নম্বর থেকে কাজীপাড়ায় একটি পাম্প স্টেশনে এসেছেন। তিনি শুনেছেন এখানে একটি পাম্পে তেল পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এখানে এসে দেখেন একটি নোটিস ঝুলছে- ‘সরবরাহ বন্ধ থাকায়, পাম্প বন্ধ।’
সেলফোনে তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেল নিয়ে এমন অবস্থা মানা যায়? কাল সকাল থেকে ধর্মঘট শুরু হবে। অথচ আজকেই নোটিস ঝুলিয়েছে নেই!’
জ্বালানি তেল নিয়ে ভোক্তাদের মধ্যে এখনই হাহাকার শুরু হলেও এ সমস্যার সমাধানে জ্বালানি মন্ত্রণালয় তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান ইউনুচুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ‘গত ১৭ জানুয়ারি জ্বালানি তেলের কমিশন বৃদ্ধির ব্যাপারে ঐক্য পরিষদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। আগামী সোমবার এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় তাদের সঙ্গে মিটিং ডেকেছে। আমরা আশা করেছিলাম ঐক্য পরিষদ সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।’
তবে ৯ দফা দাবিতে ধর্মঘট আহ্বানকারী বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাঙ্ক-লরি মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহবায়ক মো. নাজমুল হক জানিয়েছেন, ‘সরকার এখন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করেনি। আলোচনার কোনোও প্রস্তাব দেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে প্রতি লরিতে (৯ হাজার লিটার) তেল পরিবহনে তাদের বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে। একই কথা পেট্রোল ও অকটেনের ক্ষেত্রেও। এ কারণে কমিশন বাড়াতে হবে সরকারকে।’
নাজমুল হক আরও বলেন, ‘ধর্মঘট চলাকালে সারা দেশের মানুষ কোথাও তেল পাবে না। সরকার দাবি না মানা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।’
ঐক্য পরিষদের ৯ দাবি
বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাঙ্ক-লরি মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের দাবির মধ্যে রয়েছে- সরকার গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী জ্বালানি তেল বিক্রিতে ডিজেলে ৩ দশমিক ৪ ভাগ, পেট্রোল ও অকটেনে ৪ ভাগ কমিশন নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন। ট্যাঙ্ক-লরির ভাড়া বৃদ্ধি, ট্যাঙ্ক-লরির চালকদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও কাগজপত্র নিয়ে বিশেষ বিবেচনায় ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন, ট্যাঙ্ক-লরি চালকদের প্রয়োজনীয় প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে পাঁচ লাখ টাকার দুর্ঘটনা বীমা চালু, পেট্রোল পাম্প স্থাপনে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) কর্তৃক একতরফাভাবে প্রণীত নীতিমালা সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ, চট্টগ্রাম, ফতুল্লা, দৌলতপুর-খুলনা, চাঁদপুর ও সিলেটসহ যেসব স্থানে টার্মিনাল নেই সেখানে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ ও গোদনাইলে পদ্মা ও মেঘনা টার্মিনাল সংস্কার, তেলের ভেজাল রোধ করা ও অবৈধ তেল বিক্রি বন্ধ, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) টলারেন্স মাত্রা যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ ও শ্রমিক নেতা মীর মোকসেদ ও আমির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি পূরণের জন্য ঐক্য পরিষদ আজ শনিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। দাবি পূরণের ব্যাপারে সরকার কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় গত শুক্রবার ঐক্যপরিষদ ঘোষণা দেয় মধ্যে দাবি পূরণ না হলে রোববার থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যাবে।