বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ শেষে চলতি মাসেই চলে যাচ্ছেন এলেন গোল্ডস্টাইন।
দুর্নীতি সংক্রান্ত জটিলতার আবর্তে আটকে থাকা পদ্মা সেতু প্রকল্পে নিজের নাম ‘স্মরণীয়’ হয়ে থাকবে বলে মনে করেন ঢাকায় বিশ্ব ব্যাংকের বিদায়ী আবাসিক প্রতিনিধি এলেন গোল্ডস্টাইন।
বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর কাজ শুরু না হওয়ায় বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেছেন, জনগণের অর্থের স্বচ্ছ ব্যবহার নিশ্চিতই বিশ্ব ব্যাংকের উদ্দেশ্য।
চলতি মাসেই ঢাকায় দায়িত্বে মেয়াদ শেষ করতে যাওয়া গোল্ডস্টাইন শনিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে এক অনুষ্ঠানে পদ্মা প্রকল্প নিয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।
ওই অনুষ্ঠান চলাকালেই বিশ্ব ব্যাংকের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় এই সংস্থার মিশন প্রধানের দায়িত্ব নিচ্ছেন সালমান জহির। নতুন আবাসিক প্রতিনিধি না আসা পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করবেন।
২০০৯ সালের নভেম্বরে ঢাকায় মিশন প্রধানের দায়িত্ব নেয়া গোল্ডস্টাইন বলেন, “দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তার শক্তিশালী তদন্তের জন্য আমরা যে উদ্যোগ নিয়েছি, তা মাইল ফলক হয়ে থাকবে।
“বাংলাদেশে চায়ের দোকানে পর্যন্ত মানুষ এখন আমার প্রশংসা করে। মানুষ দেখতে চায়, তাদের অর্থের ব্যবহারে যেন স্বচ্ছতা থাকে।”
২৯১ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা। তবে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তারা অর্থায়ন স্থগিত এবং বাতিল করলে দেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণের কাজ আটকে যায়।
সরকারের নানামুখী তৎপরতায় বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্পে ফিরলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের ফলাফল পর্যবেক্ষণ করে অর্থ দেয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে।
গোল্ডস্টাইন বলেন, “পদ্মা সেতু প্রকল্পে আমি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম। আমি চেয়েছিলাম, জনগণের অর্থ ব্যবহারে যেন স্বচ্ছতা থাকে। আমার নাম এই প্রকল্পে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি।”
অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের বিদায়ী আবাসিক প্রতিনিধির বক্তব্যের আগে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আরাস্তু খান বলেন, “পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিষয়ে আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।”
অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ বিভিন্ন প্রকল্পে দেরির জন্য ঋণদাতা সংস্থাগুলোকেও দায়ী করেন।
একটি প্রকল্পের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “শুধু সরকারের কারণে প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকে এটা ঠিক নয়। আমরা একটি প্রকল্পের সব কাগজপত্র ঠিক করে দিলেও বিশ্ব ব্যাংক ১৪০ দিনেও অর্থ দেয়নি।”
তিন বছর দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন তরফ থেকে বিশ্ব ব্যাংকের সমালোচনা শুনতে হয়েছিল গোল্ডস্টাইনকে এবং তা মূলত পদ্মা প্রকল্প নিয়েই।
সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল পদ্মা সেতু, কিন্তু চার বছরেও তার কাজ শুরু করা যায়নি।
নতুন মিশন প্রধানের দায়িত্বে সালমান
বিশ্ব ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে দায়িত্বের মেয়াদ শেষে চলতি মাসেই চলে যাচ্ছেন এলেন গোল্ডস্টাইন। ফেব্রুয়ারি থেকে তার জায়গায় ঢাকায় দায়িত্ব পালন করতে আসছেন সালমান জহির।
তবে সালমান ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ভারতীয় নাগরিক সালমান বর্তমানে সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের কর্মসূচি পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
ঢাকায় এই বছরই নতুন আবাসিক প্রতিনিধি নিয়োগ দেবে বিশ্ব ব্যাংক। তা না দেয়া পর্যন্ত সালমানই ওই দায়িত্ব পালন করবেন।
সালমান জহির এর আগে দক্ষিণ এশিয়া জ্বালানি কর্মসূচি খাতের ব্যবস্থাপক হিসেবে কাছ করেছেন।
বিশ্ব ব্যাংকে তার কাজের প্রধান ক্ষেত্র হল- জ্বালানি খাত (বিদ্যুৎ, তেল ও গ্যাস)। ভারতে নগর অঞ্চলে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নেও কাজ করেছেন তিনি।
বিশ্বব্যাংকে যোগ দেয়ার আগে তিনি এক যুগ ধরে কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেমিক্যাল ও পেট্রোকেমিকেল খাতে। আর আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবসায় উন্নয়ন, নির্মাণ, গবেষণা ও কারিগরি সেবা খাতেও কাজ করেছেন তিনি।