ময়মনসিংহ ও বাকৃবি থেকে সংবাদদাতা: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুই গ্রপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত দুইদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছিল। এর জের ধরে দুপুরে জব্বারের মোড়ে সংঘর্ষের সময় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে গরু চরানোর সময় রাব্বি (১০) নামের এক মাদ্রাসার ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির ঘন্টাখানেক পর মারা যায়। সংঘর্ষে দুই গ্রুপের অন্তত ১৫ জন আহত হয়। শিশু নিহত হওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের লোকজন দেশীয় অস্ত্র¿ নিয়ে দুটি হলে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। বিকালে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী জামাল হোসেন হল ও ঈশা খাঁ হলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং সোহরাওয়ার্দী হলে ভাংচুর করে। কোতয়ালী থানার ওসি ফজলুল করিম জানান, সংঘর্ষ ও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে তবে কত রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়েছে তা এখনও বলা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নাসরিন সুলতানা জোয়ানা জানান, সাধারণ একটি ঘটনা নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের এই সংঘর্ষ। আমরা প্রশাসনের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুই দিনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে।
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বাকৃবি ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে দেশি অস্ত্র নিয়ে মহড়ার পর ব্যাপক গোলাগুলি ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে সাবেক এক শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর। এর জের ধরেই আজ পুনরায় সংঘর্ষ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে বেশ কয়েক দিন ধরেই ক্যাম্পাসে সভাপতি শামছুদ্দিন আল আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুজ্জামান নিয়ন্ত্রিত পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। তার আগে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীর মধ্যে থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়। এর জের ধরে শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে সাধারণ সম্পাদক পক্ষের নেতা সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান খোকন ও শহীদ নাজমুল আহসান হলের সভাপতি জাকারিয়া আলম মোটরসাইকেলে করে জব্বারের মোড়ে গেলে তাদের ওপর সভাপতি পক্ষের নেতা-কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে আহত করে। ঘটনা জানতে পেরে সাধারণ সম্পাদক নিয়ন্ত্রিত ছয়টি হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক, রামদাসহ বিভিন্ন দেশি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জব্বারের মোড়ের দিকে অগ্রসর হয়। অন্যদিকে জব্বারের মোড় এলাকায় সভাপতি নিয়ন্ত্রিত তিনটি হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও দেশি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়। এ সময় কমপক্ষে ১৪ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। তবে গুলিতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।