বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে গেছে জার্মানির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুন্ডেস বাংক। টাকা জালকারীদের শাস্তি হিসেবে বাংলাদেশ মৃত্যুদণ্ডের আইন করছে এমন খবরে তারা ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাল টাকা শনাক্তকরণে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রযুক্তি সহায়তা দেয়ার কথা ছিল তাদের। একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাতিল করেছে তারা। বুন্ডেস বাংক বলেছে, টাকা জালকারীদের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পরিকল্পনা রাখার কারণে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ থেকে সরে যাচ্চে। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এ খবর দিয়েছে। এছাড়া এর আগে অনলাইন দ্য ইকোনমিস্ট এক প্রতিবেদনে বলেছে, টাকা জালকারীদের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার খুব কাছাকাছি বাংলাদেশ। ওই অসাধু চক্রকে ধরতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে বাংলাদেশকে প্রস্তাব করেছে জার্মানির সুপরিচিত ব্যাংক জার্মান বুন্ডেসবাংক। কিন্তু এ অপরাধে যে দেশে এমন শাস্তি দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে তাদেরকে সহায়তা দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইকোনমিস্ট। গতকাল এর এশিয়া বিভাগে (ব্যানিয়ান) ‘বাংলাদেশ অ্যান্ড কাউন্টারফেইটিং; ক্যাপিটাল কন্ট্রোল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, জার্মান বুন্ডেসবাংক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সুনামের সঙ্গে ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে। জনজীবনের মান উন্নয়নে তারা যেসব কাজ করেছে তার জন্য তারা সুনামের দাবিদার। কিন্তু বাংলাদেশ টাকা জালকারীদের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার খুব কাছাকাছি। ওই ব্যাংক সেই বাংলাদেশকে টাকা জালকারীদের ধরতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এ বিষয়ে বুন্ডেসবাংক কি ভাবছে? ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রের বৈধতা না নিয়ে যারা জাল টাকা বানায় তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার দেশ চীন ও ভিয়েতনাম। বাংলাদেশ কেন তাদের দলে যোগ দিতে যাচ্ছে তা পরিষ্কার নয়। তবে এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই যে, জার্মানির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশকে এ বিষয়ে পরামর্শ বা সহায়তা দেবে তা বেমানান। বেমানান এজন্য যে বুন্ডেসবাংক বাংলাদেশকে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির বিষয়ে বয়ান দেয়া শুরু করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক অসীম কুমার দাসগুপ্ত বলেছেন, আগামী মাসে জার্মানির কর্মকর্তাদের ঢাকা পৌঁছার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে তারা জাল নোট বিশ্লেষণ কেন্দ্র (ফেক নোট এনালাইসিস সেন্টার) প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবেন। এর মাধ্যমে জাল নোটের যে বিস্তার ঘটছে তা থেকে নিরাপত্তা উন্নততর করা হবে। জার্মানির ওই সব কর্মকর্তা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সমন্বিত প্রশিক্ষণ দেবেন- কিভাবে জাল মুদ্রা শনাক্ত করা যায় ও তা বিতরণ বন্ধ করা যায় তা নিয়ে। অসীম কুমার দাসগুপ্তের মতে, প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য বুন্ডেসবাংকের সঙ্গে সংযোগ রেখে একটি নতুন আইন করা হচ্ছে। এর নাম দেয়া হয়েছে- ফেক নোট প্রিভেনশন্স অ্যাক্ট বা জাল টাকা প্রতিরোধ আইন। তিনি বলেন, নতুন এই আইন দেশকে জাল টাকা থেকে মুক্ত হতে সহায়তা করবে। টাকা জালকারীদের যদি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় তাহলে তাতে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। কারণ, বাংলাদেশে টাকা জাল করা খুব জনপ্রিয় একটি বিষয়। দেশের বিভিন্ন আদালতে বর্তমানে ৫ হাজারেরও বেশি টাকা জাল বিষয়ক মামলা স্থগিত হয়ে আছে। টাকা জাল করা রোধে আইনের যে খসড়া করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক তা আইন মন্ত্রণালয়ে পরীক্ষাধীন রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, তা স্বাক্ষরিত হয়ে এ বছরেই আইনে পরিণত হবে। তবে মঙ্গলবার বুন্ডেসবাংক বলেছে, টাকা জালকারীদের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ এ বিষয়ে তারা জানতো না। নতুন ওই আইন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রয়োজন হলে এ বিষয়ে তারা আরও তথ্য সংগ্রহ করে প্রযুক্তিগত সহায়তা ইস্যুতে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করবে। ওদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক একটি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য জার্মানির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। কিন্তু ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে প্রায় ৭০০০ কিলোমিটার দূরে যে দেশে ডয়েসমার্কের কেনাবেচা নেই বললেই চলে সেখানে জার্মানির বহুদিনের পুরনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি তাদের সুনাম খর্ব করবে কি না তা ভেবে দেখার সময় আছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জার্মান বুন্ডেস বাংক জানিয়ে দিয়েছে, তারা বাংলাদেশে আসছে না এ মিশনে।
সম্পাদক : অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন | নির্বাহী সম্পাদক : কে এম মিঠু
প্রকাশক কার্যালয় : বেবি ল্যান্ড, বাজার রোড গোপালপুর, টাঙ্গাইল -১৯৯০, বাংলাদেশ।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - ২০১৯-২০২৩