মঙ্গলবার হঠাৎ করেই দুর্নীতির অভিযোগ এনে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত এ নির্দেশ দেয়। তবে রাজা পারভেজ আশরাফ দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কেন্দ্রীয় পানি ও বিদ্যুত মন্ত্রী থাকাকালে ২০১০ সালে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে রাজা আশরাফের বিরুদ্ধে একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ওই নির্দেশ দিয়েছে।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওই আদেশের পর সন্ধ্যায় বিক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে। প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ শোনার পর বিক্ষুব্ধ পিপিপি কর্মীরা রাস্তায় নেমে আসে।
করাচি, হায়দ্রাবাদ, সুক্কর, সিন্ধ প্রদেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধ করে, মার্কেট ও দোকানপাট জোর করে বন্ধ করে দেয়। করাচিতে দলের কর্মীরা রাস্তায় রাস্তার টায়ার জ্বালিয়ে বেরিকেড সৃষ্টি করে।
এদিকে, পাকিস্তান সরকার রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র দুর্নীতি মামলায় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দেয়া সুপ্রিম কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বুধবার সরকারের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা ইরফান কাদির আদালতে রিভিউ পিটিশন দাখিল করবেন। তিনি এই নির্দেশের বিরুদ্ধে শক্তিশালী যুক্তি স্থাপন করবেন বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়।
তবে সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশ সরকার, আইন মন্ত্রণালয়, এবং প্রধানমন্ত্রী কেউই লিখিতভাবে এখনো পাননি বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী কামার জামান কাইরা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাহমান মালিক বলেছেন, অভিযুক্ত আর অপরাধী এক নয়। যে কোনো ধরনের সংশয় দূর করতে তিনি বলেন, রাজা পারভেজ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
মঙ্গলবার হঠাৎ করে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের ওই আদেশে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়। অনেকেই মন্তব্য করেন হয়তো পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ আবারো সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে।
প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা তাহিরুল কাদরির নেতৃত্বে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে এগিয়ে যাওয়া এক দুর্নীতি বিরোধী লংমার্চে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সর্বোচ্চ আদালত প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই আদেশ জারি করে। এর ফলে এ লং মার্চের সাথে যোগসূত্র খুঁজছেন কেউ কেউ।
দুর্নীতির অভিযোগ এনে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছেন ওই ধর্মীয় নেতা। তার আন্দোলনের পেছনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মদদ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এমনটি নয়। তবে ধর্মীয় নেতাদের বিক্ষোভে বিচার বিভাগ ও সেনাদের মদদ আছে বলে অনেকে মনে করছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের সরকার, বিচার বিভাগ ও প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর মধ্যে বিরোধ চলছে।
এর আগে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অন্য একটি দুর্নীতির মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে না পারার দায়ে আদালত আগের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিকে দায়ী করার পর তাকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়।
এখন সেই একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফও। প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির দুর্নীতির মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় অক্টোবরে আশরাফকে তলব করেছিল পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত।
উল্লেখ্য, রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র দুর্নীতির মামলাটিতে নয়টি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প প্রতিষ্ঠানকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত আরো ১৬ জনের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তার আদেশ দেওয়া হয়।
এর আগে ২০১২ সালের মার্চে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট অস্বচ্ছতার অভিযোগে এ চুক্তিটি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল।