বন্দুকের নল থেকে নয়, ক্ষমতা এখন কম্পিউটারের মাউস এর ক্লিক-এ। তাই অর্থবহ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ইন্টারনেট হতে পারে অনন্য মাধ্যম।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে ‘দক্ষিণ এশিয়ার ইন্টারনেট ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এই মন্তব্য করেন।
সংলাপে মূল বিষয়ের ওপর বক্তব্য দেন টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ আবু সাঈদ খান। এতে আরো বক্তব্য দেন তথ্য কমিশনার এম এ তাহের, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল, শ্রীলংকার অধ্যাপক রোহান সামারাজি।
এ সময় খাবারের মতো ইন্টারনেট ব্যবাহরের অধিকারকেও জনগণের সাংবিধানিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী।
হাসানুল হক ইনু বলেন, “জঞ্জাল থেকে গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা করেছি। তথ্য-প্রযুক্তি সেই দিকেই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “তথ্য পণ্য নয়, সামাজিক বিষয়। তাই তথ্য নিয়ে যিনি কাজ করবেন তাদের সমাজ, ইতিহাস ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধ হতে হবে। তাই এর ব্যত্যয় ঘটলে সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যাবে।”
ইনু বলেন, “গণমাধ্যমকে ওয়াচডগ এর মতো কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে ভারসাম্য নীতি অবলম্বন করতে হবে।”
হাসানুল হক ইনু জানান, তার সরকার বর্তমানে ব্রডকাস্ট ও অনলাইন নীতিমালা নিয়ে প্রণয়নের জন্য কাজ করছে। এই নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সরকারের বাইরে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “গণতন্ত্র মানুষকে সব স্বাধীনতা দেয় না। গণতন্ত্র ও কারা ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। তথ্য প্রযুক্তি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।”
বক্তব্যের শেষে ব্লগার আসিফের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে অঙ্গীকার করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ লোকই কোনো না কোনোভাবে মোবাইল বা টেলিফোন ব্যবহার করে এমন তথ্য উপস্থাপন করে অধ্যাপক রোহান সামারাজি বলেন, “ইন্টারনেট ব্যবহারও বেড়েছে। বিশ্বের নানা দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করে থাকে। কিন্ত তাদের এই অবস্থান শেষ পর্যন্ত ঠিক রাখা সম্ভব হয় না।”
তথ্য কমিশনার এম এ তাহের বলেন, “মানুষ তথ্য জানতে চায়। তথ্য নিয়ে সরকারের প্রতি জনগণের অসন্তোষ থাকে। আমরা আশা করি, সরকার মানুষের তথ্য অধিকার ও তথ্য প্রকাশের পর নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে ভাববে। ইন্টারনেটের স্বাধীনতা ও তথ্যের স্বাধীনতা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত।”
তিনি বলেন, “নানা কারণে স্বাধীন মত প্রকাশকারী বা ব্লগাররা নিরাপদ নয়। দুর্নীতিবিরোধী আইন পরিবর্তিত হচ্ছে। এখন আইনে মানবাধিকার, জেন্ডার, নিরাপত্তাসহ সব ধরনের ইস্যু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।”
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “অস্ত্র মানুষের রক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে, কিন্ত এখন অস্ত্র দিয়ে মানুষ মারা হচ্ছে। আমরা ই- গভর্নমেন্টের কথা বলি। এ ধরনের সরকারব্যবস্থা আলাদা কিছু নয়। এ ধরনের সরকার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা থাকে, সব শ্রেণির মানুষের সমান প্রবেশাধিকার থাকে। শুধু তাই নয় এতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ে।”
মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, “শুধু ফেসবুক ও ব্লগিংয়ে সক্রিয় থাকলে চলবে না। এর সঙ্গে মেধা ও মননের যোগসূত্র থাকতে হবে। যাতে করে বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় অংশ নেয়া যায় কিংবা বিতর্ক করা যায়।”
জাতিসংঘের ইন্টারনেট ডেমোক্রেসি প্রকল্পের প্রতিনিধি ড. আজা কোভাকস বলেন, “সব মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। নাগরিক সাংবাদিকতা ও ব্লগিংকে উৎসাহিত করতে হবে।”