এ সময় দুই সংবাদকর্মী ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সৈয়দ আবুজাফর আহমেদসহ অন্তত ৩০ জন স্প্রে আক্রান্ত হয়েছেন।
বুধবার ভোর ৬টায় হরতাল শুরুর পরপরই রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় মিছিল করেছে বাম দলগুলো।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, সিপিবি ও বাসদ আলাদা মিছিল নিয়ে পুরান পল্টন মোড় থেকে জিপিও হয়ে প্রেসক্লাব এলাকা শান্তিপূর্ণভাবে প্রদক্ষিণ করে।
তবে সাড়ে ৬টার দিকে মতিঝিল এলাকা থেকে বাম মোর্চার একটি মিছিল পুরানা পল্টন মোড়ে এলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ ‘পিপার স্প্রে’ ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এছাড়া সিপিবি ও বাসদের নেতা-কর্মীদের একটি মিছিল পল্টন এলাকায় এলে পুলিশ পিপার স্প্রে ও জল কামান ব্যবহার করে তাদেরও ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
হরতালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বাস চলাচল তুলনামূলক কম হলেও প্রচুর রিক্সা চলতে দেখা গেছে। দোকান-পাটও তেমন একটা খুলেনি। রাজধানী থেকে দূরপাল্লার কোনো পরিবহন ছেড়ে যায়নি। অঅবার বাইরে থেকে কোনো গাড়ি রাজধানীতে প্রবেশ করেনি। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
গত ৩ জানুয়ারি ডিজেল পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিনের দাম লিটারে সর্বোচ্চ সাত টাকা পর্যন্ত বাড়ায় সরকার। এর প্রতিবাদে বামপন্থী দলগুলো দাম কমাতে সরকারকে সময় বেঁধে দেয়ার সঙ্গে কর্মসূচির হুশিঁয়ারি দিয়ে রাখে।
সময়সীমা পার হওয়ার পর ৯ জানুয়ারি সিপিবি সভাপতি সেলিম রাজধানীর কাওরান বাজারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সামনে সিপিবি-বাসদের ধরনা কর্মসূচি থেকে ১৬ জানুয়ারি হরতালের ঘোষণা দেন।
একই দাবিতে ওইদিন সংবাদ সম্মেলন করে আলাদাভাবে হরতালের ঘোষণা দেন গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
নতুন করে দাম বৃদ্ধির ঘোষণার ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ বামপন্থী এসব দলগুলোর।
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম এই হরতালে তার দলের সমর্থনের কথা জানান।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ রিয়েল-টাইম নিউজ ডটকম-কে সমর্থনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘জ্বালানি তেলে দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বামদের এই কর্মসূচিতে জনগণের সায় রয়েছে। আর বাংলাদেশের জনগণের যে কোনো আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন রয়েছে।’
রিজভী বিএনপির মুখপাত্র ও স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের পক্ষে গণমাধ্যমকে এই সমর্থনের খবর জানান।
তবে বিএনপির এই সমর্থনের প্রতিক্রিয়ায় সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘জনগণের দাবি নিয়ে এই হরতাল। এই হরতালে দেশবাসীর সবারই সমর্থন দেয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘তবে বিএনপি যদি সমর্থন দেয়ার আগে নাকে খত দিয়ে বলত, তারা অতীতে এভাবে দাম বাড়িয়ে অন্যায় করেছে, ভবিষ্যতে সরকারে গেলে আর কোনো দিন জ্বালানি তেলের দাম বাড়াবে না, তাহলে তাদের সমর্থন ও আন্তরিকতা অনেক বিশ্বাসযোগ্য হতো।’
একইভাবে বাম মোর্চার সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘জনগণের অধিকার রক্ষার এই হরতালে আমরা দেশবাসীর সমর্থন চেয়েছি। যে কেউ সমর্থন দিতে পারে। কিন্তু বিএনপি সরকারই কুইক রেন্টালের এই নীতি গ্রহণ করেছিল। এ ক্ষেত্রে বিএনপি-আওয়ামী লীগ একই অবস্থানে রয়েছে।’
এরআগেও জামায়াতসহ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বামপন্থী দলগুলো গত বছরের ১৬ ডিসেম্বরে হরতাল কর্মসূচি পালন করে। আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে গত ৬ জানুয়ারি সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল করে।
[বাংলাদেসটাইমস.নেট/রঞ্জিত সরকার/ঢাকা]