১৫ জানুয়ারি ২০০৪ সালের এই দিনে দুপুর ১ টায় চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের বোমার আঘাতে খুলনা প্রেসক্লাবের অদূরে নিহত হন সাবেক ছাত্রনেতা কমরেড মানিক সাহা। আজ মঙ্গলবার দেশ-বিদেশে আলোড়ন তোলা হত্যাকাণ্ডটির ৯ম বার্ষিকী। সন্ত্রাসী হামলায় নিহত খুলনার সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যার ৯ বছর পার হলেও খুনিদের বিচার হয়নি। তিনি বিবিসি, দৈনিক সংবাদ, একুশে টেলিভিশন এবং নিউ এইজ পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন।
দীর্ঘ সময়েও এ হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন না হওয়ায় ন্যায়বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন নিহতের স্ত্রী নন্দা সাহা, মেয়ে নাতাশা ও পর্শিয়া। নিহত মানিক সাহা খুলনা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ছিলেন।
সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের পর সেদিন রাতেই খুলনা থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) রনজিৎ কুমার পাল বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। দু’টি অংশের ওই মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরক) তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিলে তদন্ত শেষে আরো একজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হয়।
আসামিদের মধ্যে তিনজন ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- আব্দুর রশিদ, আলতাফ ওরফে বিডিআর আলতাফ এবং মাহফুজ ওরফে মফিজ ওরফে নাসিম ওরফে শফিকুল ইসলাম। এছাড়া দুই জন জেলহাজতে রয়েছেন। তারা হলেন মিঠুন ও নুরুজ্জামান। আর বাকিরা সকলেই পলাতক রয়েছেন।
বর্তমানে মামলা দুটি (হত্যা ও বিস্ফোরক) খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে। আদালতের সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত মোট ৩৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। অপর সাক্ষীদের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ান আব্দুস সামাদকে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আদালত একাধিকবার তলব করেছে। তিনি সাক্ষ্য দিতে আসেননি। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১২ নভেম্বর মামলার ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ানকে সাক্ষ্য প্রদানে আদালতে হাজির হওয়ার জন্যে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর সমন প্রেরণ করা হয়। আগামী ২৯ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০০৪ সালের পর থেকে প্রতি বছর ১৫ জানুয়ারি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় সংবাদিক মানিক সাহার প্রতি। শ্রদ্ধা জানাতে আসা সকলে ফিরে যান প্রকৃত হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে না পারার গ্লানি মাথায় নিয়ে।
জঘন্যতম এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর সেই সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী খুলনায় ছুটে এসেছিলেন। বলেছিলেন, প্রকৃত হত্যাকারীরা চিহ্নিত হবে, সাজা পাবে। কিন্তু গত ৯ বছরেও হত্যাকাণ্ডটির বিচার কাজ শেষ হয়নি। প্রকৃত হত্যাকারী চিহ্নিত না হওয়া এবং খুনিরা সাজা না পাওয়ায় মানিক সাহার স্বজনেরা হতাশ। খুলনার চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার না হওয়ার উদাহরণ থাকায় এ মামলার বিচার নিয়ে মানিক সাহার স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও এক সময় এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তুলেছিলেন। ছুটে এসেছিলেন নিহতের পরিবারে কাছে। যার কারণে খুলনা অঞ্চলের মানুষ আশা করেন, বর্তমান সরকারের আমলে হত্যাকাণ্ডটির রহস্য উন্মোচিত হবে। শাস্তি পাবে প্রকৃত দোষীরা।
খুলনার সাংবাদিক, রাজনৈকিত ও সাধারণ মানুষ মনে করেন, একুশে পদকে ভূষিত করে যে সম্মান দেওয়া হয়েছে সাংবাদিক মানিক সাহাকে, ঠিক সেভাবেই হত্যাকাণ্ডটির সুষ্ঠু পুনঃতদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দেবে এ সরকার।
মানিক সাহার ভাই প্রদীপ সাহা বাংলাদেশটাইমস.নেট’কে জানান, ‘‘আমাদের প্রত্যাশা ছিলো এই মহাজোট সরকারের আমলে মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হবে। কিন্তু এ সরকারের চার বছর পেরিয়ে গেলেও তেমনটি এখন দেখছি না। আমরা রীতিমতো হতাশ, ক্ষুব্ধ।’’
খুলনা বিভাগীয় প্রেসক্লাব ফেডারেশনের চেয়ারপার্সন আলহাজ লিয়াকত আলী বাংলাদেশটাইমস.নেট’কে জানান, ‘‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে প্রয়োজন বোধে পুন:তদন্ত হতে পারে।’’ খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি মকবুল হোসেন মিন্টু বলেন, ‘‘বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। আমরা তখন বিচার পাইনি। ভেবেছিলাম, বর্তমান সরকারের আমলে বিচারকার্য সম্পন্ন হবে।’’
এ হত্যা মামলার পিপি অ্যাডভোকেট কাজী আবু শাহীন বাংলাদেশটাইমস.নেট’কে জানান, ‘সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যা মামলা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলা। রাষ্ট্রপক্ষ মনে করে, ন্যায়বিচারের স্বার্থে যে সকল সাক্ষ্য ইতোপূর্বে হয়নি, সেই সকল সাক্ষ্য হওয়া উচিত।
এদিকে মানিক সাহার নবম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে খুলনা প্রেসক্লাব, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন, মানিক সাহা স্মৃতি পরিষদ, উদীচী, রতন সেন পাবলিক লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাবীবী সংগঠন এবং নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
[বাংলাদেশটাইমস.নেট/রতন রাজ/টাইমস ডেস্ক]