ইসরাইল ও তুরস্ক সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিস্তারের চেষ্টা করছে। তুরস্ক আবারো ইসরাইলের কাছ থেকে অস্ত্র কেনা শুরু করেছে। এর আগে তুরস্ক আমেরিকার কাছ থেকে অ্যাওয়াক্স গোয়েন্দা বিমান কিনে তা অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক্স সিস্টেমে উন্নীত করে ইসরাইলের কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল। কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, সম্প্রতি ইসরাইলের সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টির বিষয়টিকে তুরস্ক তার স্বার্থে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তুরস্ক গাঁজা অভিমুখে সেদেশের ত্রাণবাহী জাহাজে ইসরাইলি কমান্ড হামলা এবং অঞ্চলে ইসরাইলের আগ্রাসী নীতির নিন্দা জানায়। এ ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্কের ভাবমূর্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা সাময়িকভাবে হলেও বৃদ্ধি করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বেশ কিছু ঘটনায় তুরস্কের আসল রূপ প্রকাশ পেয়েছে। বিশেষ করে তুরস্কের মাটিতে ন্যাটো জোটের পেট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও উন্নত রাডার সিস্টেম স্থাপনের পদক্ষেপে তুরস্কের ব্যাপারে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মনে সন্দেহ দানা বেধে উঠতে থাকে। কিন্তু গাঁজা অভিমুখে তুরস্কের ত্রাণবাহী জাহাজে ইসরাইলি কমান্ডো বাহিনীর হামলার ঘটনায় ওই পরিকল্পনা স্থগিত হয়ে যায় এবং তুরস্ক ও ইসরাইলের সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তুরস্ক সরকার সেদেশের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার শর্ত হিসেবে ত্রাণবাহী জাহাজে হামলার ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য তেলআবিবের প্রতি আহ্বান জানায়। যদিও ইসরাইল তুরস্কের এ দাবি মেনে নিতে এখন পর্যন্ত স্বীকৃতী জানিয়ে আসছে কিন্তু তারপরও আঙ্কারা ও তেলআবিব সম্পর্ক উন্নয়নের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। তুরস্কের দৈনিক ইয়ানি এশিয়া সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে লিখেছে, তুরস্ক ও ইসরাইলের সম্পর্কের দিনদিন উন্নতি ঘটছে এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে ইসরাইল-তুরস্ক সম্পর্ক উন্নয়নের নানা দিক নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে।
অনেক বিশ্লেষক বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রামকে ধ্বংস বা দুর্বল করার জন্যই তুরস্ক সিরিয়ার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। কারণ মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র সিরিয়া ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সিরিয়ার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মোহাম্মদ শাহেদ আমিন খান সম্প্রতি সিরিয়ার একটি টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, কাতার ও তুরস্ক সরকার আল কায়দাসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়ে সিরিয়াকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছে। এ কারণে প্রাচ্যের দেশগুলোসহ মুসলিম বিশ্বে তুরস্কের ভাবমূর্তি মারা�কভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তুরস্কের রিপাবলিক পার্টিসহ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইহুদিবাদি ইসরাইলকে রক্ষা করার জন্যই তুরস্কের মাটিতে ন্যাটোর পেট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতা য়েনের প্রধান উদ্দেশ্য। তুরস্কের রাজনৈতিক দলগুলো ও জনগণ এমন সময় ইসরাইলের ব্যাপারে সরকারের দ্বিমুখী নীতির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে যখন সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের কারণে তুরস্ক সরকার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাব সমালোচিত হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘটনাবলীতে বিশেষ করে ইরাক ও সিরিয়ার ব্যাপারে তুরস্কের নেতিবাচক ভূমিকা এবং সামরিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসরাইলসহ পাশ্চাত্যে দেশগুলোর সঙ্গে আঙ্কারার ঘনিষ্ঠতা থেকে তুরস্ক সরকারের আসল চেহারা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
অবশ্য কোনো কোনো বিশ্লেষক তুরস্ক-ইসরাইল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও সহযোগিতা গড়ে ওঠার পেছনে মার্কিন চাপ ও প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। আমেরিকায় অবস্থিত তুর্কি রাষ্ট্রদূত নামিক তান বলেছেন, ইসরাইলের সঙ্গে তুরস্কের সরাসরি যোগাযোগের বিষয়ে তিনি অবহিত আছেন এবং দু’পক্ষের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের দরজা খোলা রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তুরস্ক সরকারের এ নীতি ক্ষমতাসীন জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে অনিশ্চিত করে তুলতে পারে। ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের সমালোচনা করে তুর্কি দৈনিক ইয়ানি মেসাজ প্রশ্ন তুলেছে, তুরস্ক কি ইসরাইলী ভূখণ্ডের অংশ হতে চলেছে? আবার কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একঘরে হয়ে পড়ার আশঙ্কায় তুরস্ক ন্যাটো জোট ও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের মতে, ইসরাইলের সঙ্গে ন্যাটোর সামরিক মহড়ার যে কথা রয়েছে তার প্রতি সমর্থন দিয়ে তুরস্ক পাশ্চাত্যের প্রতি তার আন্তরিকতার প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করছে।
[বাংলাদেশটাইমস.নেট/আন্তর্জাতিক ডেস্ক/ বিবিসি/সিএনএন]