আজ ১১ জানুয়ারি শুক্রবার। বাংলাদেশে দিনটি আলোচিত ওয়ান-ইলেভেন (১/১১)নামে পরিচিত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বড় পরিবর্তনগুলোর একটি ঘটে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির এই দিনে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষাপটে এদিনে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি এই দিন রাতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ড.ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন। রাষ্ট্রপতি তার দায়িত্বে অতিরিক্ত প্রধান উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি দল ওই নির্বাচন বর্জন করে। ফলে এক বিশেষ অবস্থায় দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়। মানুষ আশা করেছিলো ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্রুত একটি জাতীয় নির্বাচন দেশবাসীকে উপহার দেবেন। কিন্ত তাদের বিতর্কিত সংস্কারের নামে বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ দুই নেতাকে বাদ দেয়ার মাইনাস টু ফর্মুলা প্রয়োগের মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে নেতৃত্বশূন্য করার জোর চেষ্টা চালানো হয়।নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠিত এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড শুরু থেকেই সমালোচিত হতে থাকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট আন্দোলন অব্যাহত রাখে। ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, ভুয়া ভোটার তালিকা সংশোধন, নির্বাচন কমিশন সংস্কারসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন রূপ নেয় গণআন্দোলনে।
সেনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমদ সব আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে চলে আসেন। তিনিই এক অনুষ্ঠানে ১১ জানুয়ারির জরুরি অবস্থা জারির দিনটিকে ওয়ান-ইলেভেন বা এক এগারো(১/১১) নামে আখ্যায়িত করেন। জরুরি অবস্থা জারির পর রাজনৈতিক দলগুলোর সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়। সেনা সমর্থিত ওই সরকারকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় ছাত্ররা। ২০০৭সালের অগাস্টে সেনা সদস্য কর্তৃক ছাত্র লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ এনে বিক্ষোভেফেটে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। পরে তা সারাদেশে ছাত্রবিক্ষোভেরূপ নেয়।ছাত্র বিক্ষোভের ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রকে। পরে সাজা হলেও রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সরকার।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হলেও বিভিন্নভাবে আন্দোলন গড়ে ওঠে। দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দিক থেকেক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়।এক পর্যায়ে আন্দোলন রাজপথে নেমে আসে।পরিস্থিতি অনুধাবন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। সেইসঙ্গে ঘরোয়া রাজনীতিরও অনুমতি দেয়।
প্রায় দুই বছর অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকার পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সংসদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে।