আজ || মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
শিরোনাম :
  গোপালপুরে মুক্তিপনের দাবিতে অপহৃত শিশুর গলিত লাশ কালিয়াকৈর থেকে উদ্ধার; গ্রেফতার ২       গোপালপুরের মোহনপুরে পোস্টঅফিসের ঘর না থাকায় ভোগান্তি       গোপালপুরে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে গুণী শিক্ষক সংবর্ধনা       গোপালপুরে আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মোমেন গ্রেফতার; ফাঁসির দাবিতে মিছিল       গোপালপুরে ডেইরি ফার্ম মালিক ও আইএফআইসি ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতবিনিময়       গোপালপুর উপজেলা ডেইরি ফার্ম মালিক সমিতির কমিটি গঠন       বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে -ইলিয়াস হোসেন       গোপালপুরে সীরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিল অনুষ্ঠিত       গোপালপুরে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা       গোপালপুরে ১০ম গ্রেড প্রদানের দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন    
 


বাড়লো জ্বালানী তেলের দাম, বাড়বে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম

আবারো বাড়লো জ্বালানী তেলের দাম। বাড়বে গ্যাস-বিদ্যুতের দামও। বর্তমান সরকারের শাসনামলে গত চার বছরে জ্বালানী তেলের দাম বেড়েছে পাচ বার, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ছয় বার। গ্যাসের দামও কয়েক দফা বেড়েছে। দফায় দফায় জ্বালানীর দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জনগনের জীবনযাত্রার উপর। বাড়ছে দ্রব্যমূল্য, মূল্যস্ফীতি অনেক আগেই ১০ শর্তাংশ(গড়) ছাড়িয়ে গেছে। সরকার বলছেন, ভতুর্কী কমাতে বা তুলে নিতেই দাম বাড়নো হচ্ছে। জ্বালানী তেলের দাম বাড়তে গিয়ে এর আগে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দেয়া হতো। এখন বলা হচ্ছে ভতর্কী তুলে নেয়ার জন্যই দাম বাড়ানো হচ্ছে। তবে যে কারণেই হউক-জ্বালানীর দাম বাড়ানো ফলে যে সরকারের জন্য খুব একটা লাভবান হচ্ছে তা বলা যাবে না। সরকারের লোকসানও কমছে না, গোটা অর্থনীতির জন্যও কোন সুফল বয়ে আনছে না। গোটা জ্বালানীর মূল্য বৃদ্ধিও এর সার্বিক অবস্থার উপর এই রিপোট।

গত বৃহস্পতিবার রাতে সরকারের নির্বাহী আদেশে পঞ্চমবারের মতো বাড়ানো হলো জ্বালানী তেলের দাম। এই দাম বাড়ানোর ফলে অকটেনের দাম বেড়ে হলো ৯৯ টাকা লিটার, পেট্রোলের দাম হলো ৯৬ টাকা আর কেরোসিন ও ডিজেলের দাম হলো ৬৮ টাকা। গত কয়েক দিন আগে প্রধানমকন্ত্রীর জ্বালানী বিষয়ক উপদেষ্টা ডঃ তৌফিক-ই এলাহী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জ্বালানী তেলের দাম বাড়াতেই হবে। কারন- প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রিতে ১৮ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এভাবে সরকার যদি জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দিতে থাকে, তাহলে শিক্ষা ও মানবিক উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে না। এ কারণে জ্বালানির দাম বাড়াতেই হবে। বর্তমান সরকার প্রথম দফায় ৬ মে ‘১১ সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। ওই সময় সব ধরনের জ্বালানি তেলে লিটারে দুই টাকা বাড়ানো হয়। এর ফলে ডিজেল ও কেরোসিন ৪৪ থেকে বেড়ে হয় ৪৬ টাকা। অকটেন ৭৭ থেকে বেড়ে ৭৯ টাকা ও পেট্রল ৭৪ থেকে বেড়ে হয় ৭৬ টাকা। দ্বিতীয় দফায় ১৯ সেপ্টেম্বর সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা বাড়ায়। ওই সময় ৪৬ টাকার কেরোসিন ও ডিজেল বেড়ে হয় ৫১ টাকা। আর ৭৯ টাকার অকটেন ৮৪ টাকা এবং ৭৬ টাকার পেট্রল হয় ৮১ টাকা। তৃতীয় দফায় ১১ নভেম্বর আবারো চার শ্রেণির জ্বালানি তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা বাড়াানো হয়। এ ফলে ৫১ টাকার কেরোসিন ও ডিজেল হয় ৫৬, ৮৪ টাকার অকটেন হয় ৮৯ ও ৮১ টাকার পেট্রল হয় ৮৬ টাকা। এর আগে সর্বশেষ দফা অর্থাৎ চতুর্থ দফায় ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর লিটার প্রতি ৫ টাকা হারে দাম বাড়ানো হয় এই ৪ ধরণের জ্বালানি তেলের। এতে করে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম হবে লিটারপ্রতি ৬১ টাকা, অকটেন ৯৪ টাকা, পেট্রল ৯১ টাকা এবং ফার্নেস অয়েলের দাম হবে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে আসছিল। দাম বৃদ্ধির নানা যুক্তি আসছে সরকারের পক্ষ থেকে। আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে তেলের দাম কম হওয়ায় এ খাতে সরকারের ভর্তুকি কমিয়ে আনতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। বিদ্যুৎ ভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “তেলের দাম বাড়ানো হলে বাজেটে ভর্তুকির অর্থ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় করা যাবে।”চলতি মাসেই তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “এখনও প্রতি লিটার ডিজেলে আমরা ১৮ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছি।” এর আগে অর্থন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কাজ চলছে। ভর্তুকি কমাতে ডিসেম্বরের মধ্যেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর জন্য সুপারিশ জানিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। গত ৩ ডিসেম্বর আইএফএফের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তেলের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, “আমাদের আলোচনা হয়েছে, এটা যথাসময়ে করতে হবে। এজন্য শীতের শুরু একটা ভালো সময়। তবে সেই যথাসময়টা আমরা এখনো তাদের বলিনি।”বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর একাধিকবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলেও বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে তেল আমদানিতেই সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ৩২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৪ শতাংশ। এর মধ্যে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, কোরোসিন ও ফার্নেস অয়েলের দাম বাড়ায় সরকার। দাম বৃদ্ধির যে যুক্তিই দেয়া হউক না কেন, আসল কারণ হচ্ছে বেসরকারি বিদ্যুৎ খাত। বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সরকার চুক্তি অনুযায়ী জ্বালানী তেল দিতে হচ্ছে। এতে আমদানির পরিমান, ব্যয় আর লোকসান সবই বেড়ে গেছে। বর্তমান সরকারের চার বছরে জ্বালানী তেলের আমদানির পরিমান বেড়েছে প্রায় চারগুণ। বাংলাদেশ প্রেট্রোলিয়াম করপোরেশন(বিপিসি) সূত্রে জানা যায়- জেপি, কেরোসিন, অকটেন ও ডিজেল মিলিয়ে মোট আমদানির পরিমান ছিল গত ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৫৩৫ মেঃটন যা গত ২০১১-১২ অর্থবছরে বেড়ে প্রায় ২৮ লাখ টনে বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে আমদানি ব্যয় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকায় দাড়ায়। লোকসান বেড়ে (বিপিসি’র মোট) ২ হাজার ৬২৮ কোটি থেকে ১৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

আবার বাড়ছে গ্যাসের দাম। রূপান্তরিক প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) ৬৫১ দশমিক ২৯ টাকা থেকে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১১৩২ দশমিক ৬৭ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২০০৯ সালে বিইআরসি সব ধরনের গ্যাসের মূল্য ১১ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়িয়েছিল। এছাড়া গত বছরে দু’দফায় সিএনজির দাম বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার ৩০ টাকা করা হয়।গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে ১০ডিসেম্বর নির্ধারিত গণশুনানি স্থগিত করা হয়েছে।গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে ১০ডিসেম্বর নির্ধারিত গণশুনানি স্থগিত করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা নয় বিতরণ কোম্পানিগুলোকে পৃথক প্রস্তাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন(বিইআরসি)। পৃথক প্রস্তাব হাতে পেলে পরবর্তী গণশুনানি হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সংশ্লিষ্ট এক কর্তকর্তা। তিনি আরো জানান – “আইনানুযায়ী পেট্রোবাংলার প্রস্তাব বিবেচনা করার সুযোগ নেই।সে কারণে পেট্রোবাংলাকে বলা হয়েছে গ্যাসের বিরতণ কোম্পানিগুলোকে পৃথকভাবে দাম বাড়ার প্রস্তাব দেওয়ার জন্য পেট্রোবাংলাকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে । পেট্রোবাংলা ২০ মে আবাসিক ছাড়া  গ্যাসের ৭ ধরনের ব্যবহারকারীদের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। খাতগুলো হচ্ছে, বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদন, ক্যাপটিভ পাওয়ার, শিল্প, চা-বাগান, বাণিজ্যিক ও সিএনজি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১০২ দশমিক ৯৪ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ক্যাপটিভ পাওয়ার খাতে। পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে বর্তমান মূল্য (প্রতি হাজার ঘনফুট) ৭৯ দশমিক ৮২ টাকা থেকে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৮৪ টাকা, সার উৎপাদন খাতে ৭২ দশমিক ৯২ টাকা থেকে ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বাড়িয়ে ৮০ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১১৮ দশমিক ২৬ টাকা থেকে ১০২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বাড়িয়ে ২৪০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিল্পে ১৬৫ দশমিক ৯১ টাকা থেকে ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ টাকা, চা বাগান খাতে ১৬৫ দশমিক ৯১ থেকে ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০০ টাকা, বাণিজ্যিক খাতে ২৬৮ দশমিক ০৯  থেকে ৩০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা ও রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) ৬৫১ দশমিক ২৯ টাকা থেকে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১১৩২ দশমিক ৬৭ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাড়ছে বিদ্যুতের দামও। এই মধ্যে সিন্ধান্তও নেয়া হয়ে গেছে।  গ্রাহক পর্যায়ে দুটি বিতরণ কোম্পানির বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। এ বিষয়ে গণশুনানির পর মূল্যায়ন কমিটি বলেছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বর্তমান মূল্যহার ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ বাড়ালে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে লোকসান থেকে উঠে আসা সম্ভব হতে পারে। আর ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) লোকসান কাটানোর জন্য ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি প্রয়োজন বলে মূল্যায়ন কমিটি মনে করে। সর্বশেষ গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যুতের দাম খুচরা পর্যায়ে প্রায় ১৫ শতাংশ এবং পাইকারিতে ১৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। এরপর বিদ্যুত বিতরণকারী সংস্থাগুলো আবারো দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠায় বিইআরসিতে। এতে গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে ১২ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কথা বলে পিডিবি। আর ওজোপাডিকো ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। পিডিবির প্রস্তাবে বলা হয়, ১২ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি করা না হলে তাদের এ বছর ৫১৬ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হবে। আর ওজোপাডিকো বলছে, তাদের প্রস্তাবিত মূল্য না বাড়ালে লোকসান দাঁড়াবে প্রায় ৯৬ কোটি টাকা। ওই প্রস্তাবের ওপর রোববার গণশুনানির আয়োজন করে বিইআরসি। শুনানিতে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির আহবায়ক ও কমিশনের পরিচালক (বিদ্যুৎ) আবুল কাশেম এ দুই কোম্পানির বিদ্যুতের খুচরা মূল্য বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে বলে মত দেন। তবে এ বিষয়ে বিইআরসিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। গণশুনানিতে বিদ্যুতের মূল্য ফের বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। তিনি বলেন, “সরকারের শেষ সময়ে এসে বিদ্যুতের দাম বাড়ালে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া বিদ্যুতের দাম আরেক দফায় বাড়লে বিভিন্ন সেবা ও পণ্যের দাম বাড়বে। এতে প্রভাব পড়বে সরাসরি ভোক্তাদের ওপর।”তাই ব্যয় ও মুনাফার মধ্যে ঘটতি থাকলে দাম না বাড়িয়ে ‘অন্য কোনো পদ্ধতিতে’ তার সমাধান করা উচিৎ বলে মত দেন তিনি। এর আগে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (পবিবো) গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে ৯ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেও গত ২৭ ডিসেম্বর গণশুনানির পর কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি দাম না বাড়ানোর পক্ষে মত দেয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুতের দাম সাত বার বাড়ানো হয়েছে। এরপরও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর জন্য তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের ওপর চাপ দিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। গত ২০ সেপ্টেম্বর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসির তখনকার চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন জানান, দাম বৃদ্ধির পরও চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ৩ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি লাগবে। অপরদিকে  পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) মূল্যায়ন কমিটি ফিরিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি কমিশনের শুনানি কক্ষে গণশুনানিতে মূল্যায়ন কমিটি তাদের এ মতামত দেন। মূল্যায়ন কমিটি ২০১২-১৩ অর্থবছরে পল্লী বিদ্যুতের রাজস্ব চাহিদা থেকে চলতি পরিচালন রাজস্ব বেশি হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ট্যারিফ প্রবিধানমালা অনুযায়ী বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধির সুযোগ নেই বলে মত দেয়। কমিশনের চেয়ারম্যান প্রস্তাব সংশোধন করে আগামী ৩১ তারিখের মধ্যে কমিশনে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। জানা গেছে, গত ১৫ অক্টোবর বিতরণ কোম্পানিগুলো বিদ্যুতের দাম বাড়াতে বিইআরসিতে আবেদন করে। দু’দফা আবেদন সংশোধনের জন্য ফেরত পাঠানোর পর গত ২ ডিসেম্বর তারা সংশোধিত আবেদন জমা দেয়। আবেদনে আরইবি তাদের গ্রাহকদের জন্য খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে ৯ শতাংশ হার বাড়ানোর প্রস্তাব করে। এর প্রেক্ষিতে আরইবি’র শুনানিরও  করে। শুনানিতে আরইবি’র পক্ষ থেকে দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। আরইবি তাদের উপস্থাপনায় বলে, আরইবি’র গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে খরচ হচ্ছে ৬ টাকা ৪৯ পয়সা। কিন্তু তারা দাম পাচ্ছে গড়ে ৪ টাকা ৫০ পয়সা। এক্ষেত্রে তাদের দামে যে ব্যবধান হচ্ছে তা মেটাতে দাম বাড়ানো দরকার। আরইবি’র চেয়ারম্যান ব্রি. জে. মঈন উদ্দিন জানান, আরইবি লাভ নয়, লোকসান নয় নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। জনগণকে সেবা দেওয়াই এর প্রধান উদ্দেশ্য। তবে সঠিকভাবে সেবা দিতে হলে অন্তত বিদ্যুতের কেনা দাম দিতে হবে। লোকসানে বিদ্যুৎ দিলে এক সময় এ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি জানান, গত বছর ২০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। তাই আরইবি’র প্রচুর লোকসান হচ্ছে। এদিকে বিইআরসি’র মূল্যায়ন কমিটি তাদের মূলায়নে বিদ্যুতে দাম না বাড়ানোর সুপারিশ করে জানায়, কমিশন কর্তৃক মোট সুপারিশকৃত রাজস্ব চাহিদার পরিমাণ ৮৬,১৬১ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন টাকা। চলতি পরিচালন রাজস্বের পরিমাণ ৮৭,৩৩৭ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন টাকা। সুপারিশকৃত পরিচালন রাজস্ব থেকে চলতি পরিচালন রাজস্ব ১,১৭৬ দশমিক ১৯ মিলিয়ন টাকা বেশি। কমিটি জানায় আরইবি’র প্রদত্ত তথ্য এবং কমিশনের ট্যারিফ প্রবিধানমালা অনুযায়ী আরইবি’র বিদ্যমান দাম বাড়ানোর কোন অবকাশ নেই। গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো: ইমদাদুল হক দ্রই সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ ও মো: দেলোয়ার হোসেন। কশিশনের পক্ষে মূল্যায়ন কমিটির আহবায়ক মো: আবুল কাশেম তাদের মতামত তুলে ধরেন। আরইবি’র পক্ষে পরিচালক (ফাইন্যান্স মনিটরিং এ- ট্যারিফ) মো: বজলুর রহমান উপস্থাপন তুলে ধরেন। গণশুনানিতে অংশ নেয় ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম, এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতিসহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং গণসংহতি আন্দলনের আহবায়ক জোনায়েদ সাকি।

পেট্রোল ও অকটেনে ভতুর্কী নেই, আন্তর্জাতিক বাজার দর কমেছে

গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে জ্বালানী তেলে দাম ব্যারেল প্রতি তিন ডলার কমেছে। প্রতিবেশি দেশ ভারতে আন্তর্জাতিকবাজারের সাথে সমন্বয় করে জ্বালানী তেল(পেট্রোল ও অকটেনের) দাম কমানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশে দাম কমানো হয়নি। বিপিসি’র তথ্য হচ্ছে বর্তমানে প্রতিলিটার পেট্রোলের  সরকারের ক্রয় বা আমদানি ক্রয় মূল্য হচ্ছে ৯৬ টাকা। আর বিক্রি হচ্ছে (বৃহস্পতিবার মূল্য বৃদ্ধির পর) ৯৬ টাকা। কাজেই পেট্রোলে আর ভতুর্কী নেই। অকটেনের আমদানি বা সরকারের ক্রয় মূল্য প্রতিলিটার ৯৬ টাকা আর বিক্রি হচ্ছে এখন ৯৯ টাকা। ডিজেল ও কেরোসিন সরকারের ক্রয় মূল্য হচ্ছে প্রতিলিটার ৮৫ টাকা। বিক্রয় মূল্য ৬৮ টাকা। প্রতি লিটারে সরকারের ভতুর্কী কমেছে ১৮ টাকা। প্রতি টনে গড়ে প্রায় ১৮ হাজার টাকা। সর্বশেষ দাম বাড়ানো ফলে সরকারের ভতুর্কীর পরিমান কমে যাবে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। প্রশ্ন হচ্ছে সরকার জ্বালানী তেলে ভতুর্কী দিচ্ছে কত? বিপিসি ( বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) গত ২০১১-১২ অর্থবছরে তাদের সাময়িক হিসাবে ভতুর্কীর পরিমান দেখিয়েছে ৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা। অপর দিকে সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে বিপিসি ভতুর্কীর পরিমান দেখিয়েছিল ২ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা, আর সরকারকে রাজস্ব দিয়েছিল ২ হাজার ৩২৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সর্বশেষ জ্বালানী তেলের দাম বাড়ানোর ফলে ভতুর্কী বলেতো আর কিছুই থাকলো না। সরকার যদি অন্য ভাবে লোকসান দেয় তাহলেতো এর দায় জনগনের নয়। বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র যারা স্থাপন করবেন বা করছেন তাতের সাথে সরকারের চুক্তি হচ্ছে কম দামে জ্বালানী তেল দেয়া হবে। আর সরকার সেটাই করছেন। গত ২০০৮-০৯ অর্থবছরে গোটা জ্বালানী খাতে সরকার লোকসান  দিয়েছিল মাত্র ৩২২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আর গত ২০১১-১২ অর্থবছরে লোকসান দিতে হয়েছে ১৬ হাজার ৮১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কম দামে সরকার তেল দিতে গিয়ে এই লোকসানের পরিমান বাড়িয়ে দিয়েছে। জনগণ বিদ্যুৎ ঠিক মতো পাচ্ছে না। দাম দিচ্ছে বেশি। আবার জ্বালানী তেলে ক্ষেত্রে সেই দায় জনগণকে  বহন করতে হচ্ছে।

জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে জ্বালানী তেলের দাম এখনো অনেক কম। তাই দাম বাড়ানো হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিরোধী দলের হরতালের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেছেন, এটা বিরোধী দলের দায়িত্বহীনতার পরিচয়। যারা হরতাল ডাকেন তারা কি সরকারে ছিলেন না? তারা কি জানেন না সরকার কি করে চলে? মন্ত্রী বিরোধী দলের হরতাল ডাকাকে উম্মাদের সাথে তুলনা করেন। অর্থমন্ত্রী এখন থেকে প্রায় এক বছর আগেই বলেছিলেন যে- জ্বালানী তেলে দর নির্ধারন হবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে। তিনি বলেছিলেন -তিন মাসের মধ্যে দেশের ভিতর জ্বালানী তেলের দাম নির্ধারণের জন্য একটি নীতি বা পদ্ধতি করা হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় রেখে স্বয়ংক্রিয় ভাবে তেলে দাম উঠা-নামা করবে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম কমবে, আর আন্তর্জাতিক বাজার দর বাড়লে অভ্যন্তরীণ দরও বাড়বে। তবে মন্ত্রী যাই বলেন না কেন- বাজেট ঘাটতি মেটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)এর সাথে চুক্তি করা ১০০ কোটি ডলার ঋণ পেতে প্রধান যে শর্ত বাংলাদেশ সরকার মেনে নিয়েছিল তা হলে জ্বালানী তেলের দাম বাড়াতে হবে বা ভতুর্কী সম্পুর্ণ তুলে নিতে হবে। যার জন্যই দাম বাড়ানো হচ্ছে। আইএমএফ-এর শেষ কিস্তি ঋণের অর্থ পেতে রাতারাতি আবারো দাম বাড়ানো হলো।

জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক তথা সর্ব সাধারণ সহজে মেনে নিতে পারেন নি। অর্থনীতিবিদের মধ্যে দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করেছেন- ডঃ দেবপ্রিয় ভট্রাচার্জ, সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ডঃ মির্জা আজিজুল ইসলাম, ডঃ মোস্তাফিজুর রহমান, ডঃ মাহবুবুর রহমান, জায়েদ বখত সহ আরো অনেকেই। তারা বলেছেন- এই মুহুর্তে জ্বালানী তেল গ্যাস বা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো তেমন কোন যুক্তি নেই বা ছিল না। এই মুল্যবৃদ্ধির ফলে সরাসরি জনগনের উপর চাপ পড়বে। যেমন-ফসলের উৎপাদন খরচ বাড়বে যার ফলে কৃষক আর ভোক্তা সাধারণের উপর চাপ পড়বে। পরিবহন খরচ বাড়বে যার ফলে সরাসরি চাপ পড়বে জনগনের উপর। দ্রব্যমূল্য বাড়বে। মূল্যস্ফীতি বাড়বে, জীনবযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক ভাবে বাড়বে। আয়-ব্যয়ের মধ্যে বৈষম্য আরো বাড়বে। বর্তমানে দেশের নিম্ব-মধ্যবিত্তরা চড়ম কষ্টের মধ্যে আছেন। একদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, বাড়ি ভাড়া-ঘর ভাড়া বৃদ্ধি, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, লেখাপড়ার খরচ বৃদ্ধি অর্থাৎ সবকিছুই বৃদ্ধি। এই বৃদ্ধির চাপে নিম্ন-মধ্যবিত্তরা দিশে হারা।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!