আজ || বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪
শিরোনাম :
  গোপালপুরের মোহনপুরে পোস্টঅফিসের ঘর না থাকায় ভোগান্তি       গোপালপুরে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে গুণী শিক্ষক সংবর্ধনা       গোপালপুরে আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মোমেন গ্রেফতার; ফাঁসির দাবিতে মিছিল       গোপালপুরে ডেইরি ফার্ম মালিক ও আইএফআইসি ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতবিনিময়       গোপালপুর উপজেলা ডেইরি ফার্ম মালিক সমিতির কমিটি গঠন       বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে -ইলিয়াস হোসেন       গোপালপুরে সীরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিল অনুষ্ঠিত       গোপালপুরে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা       গোপালপুরে ১০ম গ্রেড প্রদানের দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন       গোপালপুরে জাতীয়করণের দাবিতে বেসরকারি শিক্ষকদের মানববন্ধন     
 


গুম, গুপ্তহত্যা ও ক্রসফায়ার নিয়ে গত ছয় বছরে উচ্চ আদালত কমপক্ষে ছয়টি রুল জারি,নিষ্পত্তি হয়নি একটিও

গুম, গুপ্তহত্যা ও ক্রসফায়ার নিয়ে গত ছয় বছরে উচ্চ আদালত কমপক্ষে ছয়টি রুল জারি করলেও এখনো একটি রুলেরও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।কয়েকটি রুল শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এলেও এখতিয়ার পরিবর্তনের কারণে শুনানি হয়নি। ফলে বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো উৎঘাটিত হয়নি প্রকৃত রহস্য

অভিযোগ রয়েছে, গত ৮ বছর ধরে সংঘটিত এসব গুম, গুপ্তহত্যা ও ক্রসফায়ারের অধিকাংশের পেছনেই রয়েছে এলিট বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটিলিয়ন (র‌্যাব)।

তবে ক্রসফায়ারের কথা স্বীকার করলেও গুম ও গুপ্তগত্যার দায় অস্বীকার করে আসছে এ বাহিনী।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৪ সালে সন্ত্রাসী দমনের নামে গঠন করা হয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটিলিয়ন (র‌্যাব)। সেই সময় থেকে ক্রসফায়ারে সন্ত্রাসী নিধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই বাহিনীর কার্যক্রম। শুরু থেকেই র‌্যাবের কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের কথিত ক্রসফায়ারে হত্যা করায় অনেকে র‌্যাবের প্রশংসাও করেন। কিন্তু সন্ত্রাসীদের হত্যার পাশাপাশি তৎকালীন বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও বর্তমান বিরোধী দলের নেতাকর্মী এবং কোন কোন ক্ষেত্রে নিরীহ মানুষও রাষ্ট্রীয় এ বাহিনীর হাতে হত্যার শিকার হন বলে অভিযোগ উঠে। ফলে খুব দ্রুতই র‌্যাবের প্রশংসাকারীদের মোহ ভঙ্গ হয়। মানবাধিকার কর্মীরাও র‌্যাবের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্ছার হয়ে উঠেন।

২০০৬ সালে কথিত সন্ত্রাসী টুন্ডা ইসমাইল নিহত হওয়ার ঘটনার ওপর ভিত্তি করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকার বৈধতার প্রশ্নে প্রায় ছয় বছর আগে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০০৬ সালের ২৫ মে রুলও জারি করেন আদালত। কিন্তু এখনো এ রুলের নিষ্পত্তি হয়নি। এছাড়াও দুইটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দুইটি রুল এবং হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি রুল জারি করেন।

এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ২০০৬ সালের আগস্টে হাইকোর্টে রিট করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন এবং বিচারপতি মামনুন রহমানের বেঞ্চ এ নিয়ে রুল জারি করে। রুলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

এ বিষয়ে সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, এই রুলের শুনানির জন্য কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। হাইকোর্টের তিনটি বেঞ্চে রিটটি শুনানির জন্য উত্থাপন করা হয় এবং কার্যতালিকায়ও আসে। বেঞ্চের এখতিয়ার পরিবর্তনের কারণে কয়েক মাস কার্যতালিকায় থাকার পর এ রুলের আর শুনানি করা সম্ভব হয়নি। এখন পর্যন্ত এ রুলের জবাবও পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বন্ধে এ রুলের নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

২০০৯ সালের ২৯ জুন বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- নিয়ে আরেকটি রিট আবেদন করা হয়। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও কর্মজীবী নারী যৌথভাবে রিটটি করে। ক্রসফায়ার কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। এ রুলেরও এখন পর্যন্ত শুনানি শুরু হয়নি।

ক্রস ফায়ার নিয়ে ২০০৯ সালের ১৭ নভেম্বর বিচারপতি এএফএম আব্দুর রহমান ও বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে আরেকটি রুল জারি করেন। রুলের জবাব দিতে র‌্যাবের মহাপরিচালক, স্বরাষ্ট্র সচিব ও র‌্যাব-৮-এর অধিনায়ককে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলেন আদালত। ২০১০ সালের ১৪ নভেম্বর বিচারপতি এএফএম আব্দুর রহমান ও বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের বেঞ্চে এই রুলের শুনানি শুরুর কথা ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের সময় নেয়া এবং এরপর বেঞ্চের এখতিয়ার পরবর্তনের কারণে এ রুলেরও নিষ্পত্তি হয়নি।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার পথে আশুলিয়ার নবীনগরে হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে নিঁখোজ হন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রশিবির নেতা আল মুকাদ্দাস ও মুহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ। তাদের র‌্যাব গ্রেপ্তার করে দাবি করে এবং তাদের হাইকোর্টে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট (হেভিয়াস কর্পাস) করা হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালত এ নিয়ে রুল জারি করেন। বিচারপতি  মো. আবদুল আউয়াল এবং বিচারপতি আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চে রুলটির শুনানিও শুরু হয়।

এ সময় র‌্যাবের মহাপরিচালক হাইকোর্টকে জানান, তাদের র‌্যাব গ্রেপ্তার করেনি। তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করা হলে তিনিও একই কথা জানান আদালতকে। তাদের এ জবাবে সন্তষ্ট হতে না পেরে আদালত আইজিপিকে তলব করে। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ এই তলবের আদেশ স্থগিত করেন। এরপর আর এ বিষয়ে শুনানি হয়নি।

সর্বশেষ গত ১৯ এপ্রিল বিএনপির নিঁখোজ সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীকে আদালতে হাজির করা নিয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। ইলিয়াসের স্ত্রীর করা হেভিয়াস কর্পাস রিটে পরিপ্রেক্ষিতে এ রুল জারি করা হয়। বিচারপতি  মো. আবদুল আউয়ালের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চে রুলটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায়ও এসেছিল। কিন্তু বাদিসহ কোন পক্ষই রুল শুনানির বিষয়ে উদ্যোগী হয়নি। ফলে এ রুলটির এখন পর্যন্ত শুনানিই শুরু হয়নি।

এছাড়া বিএনপি দলীয় ঢাকার ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়েছে দাবি করে ২০১০ সালের ৫ জুলাই হাই কোর্টে একটি হেভিয়াস কর্পাস রিট করা হয়। এই রিটে কোন রুল জারি না করলেও ওই বছরের ১৯ জুলাই হাইকোর্ট এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন। ওই বছরের ২৫ জুন থেকে পুলিশ চৌধুরী আলম নিখোঁজ রয়েছে। সর্বশেষ ৬ জানুয়ারি গত সোমবার র‌্যাব পরিচয় দিয়ে শশুর বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে হত্যা করে ঢাকার ৫৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামকে। এ হত্যাকাণ্ডের জন্যও তার পরিবার র‌্যাবকে দোষারোপ করছে। তবে বাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়টিও রীতিমতো অস্বীকার করে আসছে।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!