চীনে সংবাদপত্রের ওপর সরকারি বিধিনিষেধের প্রতিবাদে প্রভাবশালী একটি পত্রিকার সাংবাদিকরা ধর্মঘট শুরু করেছেন।
প্রেস সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের এরকম সরাসরি চ্যালেঞ্জের নজির চীনে নেই।
ফলে গুয়াংজু শহর থেকে প্রকাশিত এই সাপ্তাহিকীর কিছু সাংবাদিকের এই ধর্মঘট চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
ধর্মঘটী সাংবাদিকদের সমর্থনে শহরে বেশ কিছু লোক মিছিলও করেছেন।
সমস্যা শুরু হয় গত বছরের শেষ দিনে। নতুন বছর উপলক্ষ্যে পত্রিকাটির জন্য একটি সম্পাদকীয় লেখা হয় – যেখানে নানা ধরনের সংস্কার চালানোর চীনা কর্তৃপক্ষের প্রতি ডাক দেয়া হয়।
কিন্তু ঐ অঞ্চলের জন্য নিয়োজিত সরকারি প্রচার কর্মকর্তা এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন এবং সম্পাদকীয়টির পুরো বক্তব্যই পাল্টে দেন।
সমালোচনার বদলে এতে চীনের কমিউনিষ্ট নেতাদের প্রবল প্রশংসা করা হয়।
এটা নিয়ে সংবাদকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। আর সেই সূত্রেই এই ধর্মঘট। সাংবাদিকরা একই সঙ্গে ঐ প্রচার কর্মকর্তার পদত্যাগ দাবি করছেন।
গুয়াংজু থেকে যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে জানা যাচ্ছে যে পত্রিকারটির অফিসের সামনে সাংবাদিকরা এবং তাদের কিছু সমর্থক জড়ো হয়েছেন। তারা যেসব ব্যানার বহন করছেন তাতে লেখা: আমাদের দাবি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, সংবিধান এবং গণতন্ত্র।
সাউদার্ন উইকলি নামের এই পত্রিকাটি সম্ভবত চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আস্থাভাজন পত্রিকাগুলির অন্যতম। অতীতে এই পত্রিকা চমকপ্রদ সব তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে।
সেই কারণে পত্রিকা অফিসটির আশপাশে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
চীনের সরকারি প্রশাসনযন্ত্র এবং সংবাদমাধ্যমের মধ্যে এই ধরনের ‘শো-ডাউন’ বা মুখোমুখি সংঘাতের ঘটনা একেবারেই অভূতপূর্ব। এর আগে পত্রিকাগুলোকে পার্টির নেতাদের একান্ত অনুগত ভূমিকাতেই দেখা গেছে। পার্টি যা বলতো তা বিনা বাক্যে তারা সেটা মেনে নিতো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সেই আনুগত্যে চিড় ধরেছে।
সাউদার্ন উইকলির সঙ্গে পার্টির এই সমস্যা শুরু হওয়ার পর চীনের সরকারি পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস গত শুক্রবার একটি সম্পাদকীয় লিখেছে।
এতে মন্তব্য করা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অতীতে যেসব আইনকানুন তৈরি করা হয়েছিল, সময় বদলে যাওয়ার জন্য সেগুলো এখন আর কাজ করছে না। এতে আরও বলা হয়েছে, সমাজে যদি পরিবর্তন ঘটে তাহলে যারা সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করছে. পরিচালনা করছে তাদেরও বদলে যেতে হবে।
চীনে বিবিসির সংবাদদাতারা মনে করছেন সাউদার্ন উইকলিতে এই ধর্মঘট যদি চলতে থাকে তাহলে চীনের নতুন নেতা শি জিনপিং-এর জন্য সেটা একটা মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
মাস দুয়েক আগে পার্টির সর্বোচ্চ কর্মকর্তার দায়িত্ব হাতে নেয়ার পর তিনি সযত্নে তার যে ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন তাতে তাকে একজন খোলা মনের নেতা, উদারপন্থী নেতা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা চলছে।
কিন্তু এখন এই ধর্মঘট যদি তাকে কঠোর হতে বাধ্য করে তাহলে তা তার সেই ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করতে পারে। [সুত্র- বিবিসি]