আজ || রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
শিরোনাম :
  গোপালপুরে মাদরাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে গণশুনানি       ভূঞাপুর মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নতুন কমিটি       গোপালপুরে ১৮ বছর পর স্বনামে ফিরলো আব্দুস সালাম পিন্টু কলেজ       গোপালপুরে বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত       ক্ষেতের আইল দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে ভোগান্তিতে শিশু শিক্ষার্থীরা       গোপালপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কমিটি গঠন       গোপালপুরে জামায়াতে ইসলামীর পৌর শাখার কর্মী সম্মেলন       ইমনরা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে: টাঙ্গাইল জেলা জামায়াত আমীর        গোপালপুরে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন       ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগকে এদেশের মানুষ মাথা তুলে দাড়াতে দিবেনা : সালাউদ্দীন আহমেদ    
 


ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে বিএসইসির ইদুর বিড়াল টুর্নামেন্ট

ভয়াবহ ধসের পর দেশের পুঁজিবাজারে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অধিকাংশ উদ্যোগই সফলতার মুখ দেখেনি। সর্বশেষ ২০১১ সালের ২৩ নভেম্বর ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজারের ইতিহাসে নজির সৃষ্টি করলেও শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা তার সুফল পাননি। প্যাকেজের আওতায় বিশেষ স্কিমের অধীনে বিভিন্ন কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) ২০ শতাংশ কোটা নিয়ে সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে ইদুর বিড়াল খেলছে বলে বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেছেন।

গত দেড় মাস ধরে প্রায় প্রতিদিন বিনিয়োগকারীরা শেয়ারনিউজ২৪ডটকমে ফোন করে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নির্ধারিত আইপিও কোটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন। কারণ, পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বিএসইসির পক্ষ থেকে যৌথ হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত কোটায় আবেদন বিবেচনা না করার নিয়ম চালু করা হয়েছে। যৌথ হিসাবে আবেদনকারীদের বিশেষ স্কিমের অধীনে ক্ষতিগ্রস্ত কোটার আবেদন গ্রহণ না করার জন্য হাউজগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অথচ বিশেষ স্কিম ঘোষণার সময় এমন নির্দেশনা ছিল না। এতে করে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, অনেকে জেনারেশন নেক্সটের আইপিওতেও যৌথ কোটায় আবেদন করে এলোটমেন্ট পেয়েছেন। অনেকে যৌথ একাউন্টে আবেদন করায় তা বাতিল করা হয়েছে। যৌথ একাউন্টে আবেদনের অপরাধে অনেকের টাকাও কেটে নেয়া হয়েছে। এরপর আর্গন ডেনিমসের আবেদন করতে গিয়ে তারা জানতে পারেন এখন থেকে যৌথ হিসাবে আবেদন করা যাবে না।

তারা আরো বলেন, অনেক বিনিয়োগকারী আছেন যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবার পর একক হিসাবটি নবায়ন করেননি। শুধু যৌথ একাউন্টের মাধ্যমে বর্তমানে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন। এমতাবস্থায় তাদের প্রশ্ন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও কেন তারা যৌথ হিসাবে আবদেন করতে পারবেন না?

ই সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী বদরুল ইসলামের অভিযোগ, জেনারেশন নেক্সেটের যৌথ হিসাবে (হিসাব নং-১২০২৮৮০০৪৫৩৩১০) আবেদন করায় তার ৫০ শতাংশ টাকা কেটে নেয়া হবে বলে হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। অথচ এ ব্যাপারে কোনো পূর্ব ঘোষণা দেয়া হয়নি। আর বিশেষ স্কিম ঘোষণার সময় একক এবং যৌথ একাউন্টের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করেও কিছু বলা হয়নি। তাহলে এখন কেন এমন প্রহসন?

মৌলভীবাজারের বিনিয়োগকারী শাহ আলম অভিযোগ করেন, প্রিমিয়ার সিমেন্টে যৌথ হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত কোটায় আবেদন করায় তার টাকা কেটে নেয়া হবে বলে হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। উইফাং সিকিউরিটিজে তার ট্রেডিং কোড ১৬৯০।

গ্রীণল্যান্ড ইক্যুইটির বিনিয়োগকারী বিকাশ মল্লিক এবং প্রদীপ কুমারও একই অভিযোগ করেন। এছাড়া এসবি সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী সাইফুল ইসলাম রনি (বিও নং- ১২০৪২৪০০৪৫৯৪৩২০৭), এমদাদ হোসেন (বিও নং- ১২০৪২৪০০৪৫৯৪০১০৪) এবং মো. রমজান (বিও নং- ১২০৪২৪০০৪৫৯৬০৩১৫) সানলাইফের আইপিওতে ক্ষতিগ্রস্ত কোটায় জয়েন্ট একাউন্টে (যৌথ হিসাব) আবেদন করে এলাটমেন্ট পাননি। অথচ আবেদনের পূর্বে তারা এ ধরণের কোনো নির্দেশনা পাননি বলে অভিযোগ করেন।

মশিহর সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী জোবায়রুল ইসলাম জেনারেশন নেক্সেটের আইপিওতে যৌথ হিসাবে আবেদন করে এলোটমেন্ট পেলেও আর্গন ডেনিমসের এলোটমেন্ট পাননি।

ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, স্কিম ঘোষণার সময় যদি যৌথ একাউন্টের আবেদন বিবেচনায় নেয়া হবে না জানিয়ে দেয়া হতো তাহলে তাদের নতুন করে ক্ষতির মুখে পড়তে হতো না। কারণ, যৌথ একাউন্টে আবেদন করার অপরাধে অনেকের টাকা কেটে রাখা হয়েছে। এছাড়া সময়মতো রিফান্ড না পেয়ে অনেকে অন্য কোম্পানিতে আবেদন করতে পারেননি।

বিনিয়োগকারীরা বলেন, একই কোম্পানির ক্ষেত্রে তারা দু’রকম নিয়মও পেয়েছেন। আর্গন ডেনিমস, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ারের আইপিও ফরমের কোনোটিতে যৌথ একাউন্টে আবেদন না করার জন্য বলা হয়েছিল। আবার কোনোটিতে এ ব্যাপারে কিছুই উল্লেখ ছিল না। হাউজগুলোতে গেলে তারাও স্পষ্ট করে কিছু বলতে চায় না। হাউজের পক্ষ থেকে বিএসইসিতে যোগাযোগ করতে বলা হয়। বিএসইসিতে যোগাযোগ করা হলে অধিকাংশ সময় কেউ ফোন ধরে না। ফোন ধরলেও এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে চায় না। বিষয়টি তাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক বলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে শেয়ারনিউজের পক্ষ থেকে বিভিন্ন হাউজে যোগাযোগ করা হলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকটি হাউজের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিএসইসির নির্দেশে এমন করা হচ্ছে বলে জানান।

অপরদিকে এ ব্যাপারে বিএসইসিতে যোগাযোগ করা হলে কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ আসলে বিষয়টি দেখা হবে বলে জানানো হয়।

এ ব্যাপারে খ্যাতনামা একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিনিয়োগকারীদের নিয়ে ইদুর বিড়াল খেলা বিএসইসির পক্ষে মানায় না। অভিভাবক হিসাবে বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে ষ্পষ্ট করা জরুরি। কারণ, অষ্পষ্ট জিনিস থেকে বিভ্রান্তি ছড়ায়, আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কেউ না কেউ ফায়দা হাসিল করে।

তিনি আরো বলেন, স্কিম ঘোষণার সময় এ বিষয়টি স্পষ্ট করা উচিত ছিল। এতোদিন পর গোপনে গোপনে কেন এমন নিয়ম চালু করা হলো তা আমার বোধগম্য নয়।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!