নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাবা, ভাই, স্বামী ও আত্মীয়স্বজন বিএনপির কর্মী সমথর্ক হওয়ায় ক্ষমতাচ্যূত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারি শিক্ষিকা চাকরি হারিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বঞ্চনার শিকার ওই সহকারি শিক্ষিকার নাম হাফিজা খাতুন। তিনি গোপালপুর উপজেলার ভাদুড়ীচর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া ওরফে বকুলের সহধর্মিনী এবং হাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের বার বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও গোপালপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল হোসেন তালুকদারের কন্যা।
জানা যায়, প্রয়াত বিএনপি নেতা এবং চেয়ারম্যান আবুল হোসেন তালুকদার নিজ গ্রামে শিক্ষার আলো জ্বালানোর জন্য বাড়ির নিকট ১৯৯০ সালে বন্দআজগড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তার স্ত্রী রহিমা খাতুন স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় জমি ওয়াকফ করে দেন। স্কুলের জন্য নিজ খরচে একটি ভবনও নির্মাণ করে দেন তিনি। প্রতিষ্ঠার পর ০১.০৯.১৯৯০ তারিখে স্কুলের কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক নিয়োগ পত্রের মাধ্যমে মোট ৪জন শিক্ষক স্কুলে যোগদান করেন। এরা হলেন প্রধান শিক্ষক সাহাদত হোসেন, সহকারি শিক্ষক হাফিজা খাতুন, মোঃ সুরুজ্জামান ও মোহাম্মদ আব্দুল কদ্দুছ। এর মধ্যে হাফিজা খাতুন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান আবুল হোসেন তালুকদারের কন্যা। হাফিজা খাতুন অপর তিন শিক্ষকের সাথে দীর্ঘ দিন ওই স্কুলে বিনা বেতনে কাজ করেছেন।
পরবর্তীতে স্কুলটি রেজিষ্ট্রিপ্রাপ্ত হয়। রেজিষ্ট্রি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে ২০০৫ সাল থেকে বেতনভাতার সরকারি অংশ অন্যান্য শিক্ষকদের মতো তিনিও পেতে থাকেন। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর হাদিরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতাকর্মী হাফিজা খাতুনকে স্কুলে আসতে বারণ করেন। তার পরিবার কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা এবং সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর বিশ্বস্তভাজন হওয়ার অভিযোগ তুলে ওই শিক্ষিকা যেন স্কুলের হাজিরা খাতায় সই করতে না পারেন এজন্য ভয়ভীতি ও চাপাচাপি করতে থাকেন। হাফিজা খাতুন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসতে থাকেন।
পরবর্তীতে সরকার দেশের সকল রেজিষ্ট্রিপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করার কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ইন্ধনে গোপালপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে যে কাগজপত্র ও প্রতিবেদন পাঠান তাতে শিক্ষিকা হাফিজা খাতুনের নাম বাদ দেয়া হয়। ফলে স্কুলটি ২০১৩ সালে সরকারি হলেও হাফিজা খাতুন শিক্ষক হিসাবে বাদ পড়ে যান। হাফিজা খাতুনের অভিযোগ তিনি একজন গৃহবধূ ও শিক্ষক। কখনোই কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিলেননা। কিন্তু বাবা, ভাই, স্বামী এবং আত্মীয়স্বজনরা বিএনপির রাজনীতির সাথেযুক্ত থাকায় এবং পরিবারের সকলে সাবেক উপমন্ত্রী এডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টুর স্নেহধন্য হওয়ার অপরাধে তালিকা থেকে কৌশলে নাম বাদ দিয়ে তাকে চাকরিচ্যূত করা হয়। তিনি এ অবিচারের প্রতিকার এবং চাকরি ফেরত পাওয়ার প্রার্থনা জানান।
গোপালপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মফিজুর রহমান জিন্না জানান, এটি অনেক আগের ঘটনা। তিনি দুই বছর আগে এখানে যোগ দিয়েছেন। ঠিক কি কারণে তার নাম বাদ পড়েছে তা তিনি জানেন না। তবে খোঁজ নিয়ে পরে জানাবেন। বক্তব্য জানার জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদারের সেলফোনে রিং দিলেও তার মোবাইল নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।