চলতি বছরের শেষমুহূর্তে এসে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দেওয়া বিশেষসাক্ষাৎকারে অংশ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। চলমানঅর্থনৈতিক মন্দা, তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণদিকসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এতে আলোচনা করেন তিনি।নতুন বছরে কর (ট্যাক্স) নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। প্রয়োজনে পরবর্তী কংগ্রেসের শুরুতেই করকমানোর জন্য আইন পাশ করানো হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
দ্বিতীয়মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর কি কি অর্জন করতে চান, এ প্রশ্নের জবাবে ওবামাবলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনা দরকার।”এছাড়া ২০১৩ সালেই আগ্নেয়াস্ত্র আইন পরিবর্তন করার জন্য প্রস্তাব জমা দেবেন বলে জানান তিনি।স্যান্ডিহুক স্কুলে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে তাঁর শাসনকালের নিকৃষ্ট দিন বলেঅভিহিত করেন ওবামা। এর স্মৃতি যেন ঝাপসা হয়ে না যায়, সেজন্য সবাইকে আহবানজানান তিনি। এর আগে ওবামা জানিয়েছিলেন, আগ্নেয়াস্ত্র আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য জানুয়ারিতেই ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনেরনেতৃত্বে নতুন একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।লিবিয়ার বেনগাজিতেযুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে চারজন আমেরিকানের নিহত হওয়ার ঘটনাকে ওবামা‘ পীড়াদায়ক’ বলে মন্তব্য করেন। তবে এতে নিহতদেরও দোষ ছিল বলে স্বীকার করেনতিনি।এছাড়া দূতাবাসগুলোকে সম্পূর্ণ নিরাপদ না করার পেছনে সরকারি দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেন তিনি।লিবিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার স্টিভেন্স সহ আরও তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় এফবিআই দ্রুত তদন্ত করছে বলে জানান তিনি।নিরাপত্তাব্যবস্থা বাড়ানো, আগুন নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বাড়ানো, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নজরদারি বাড়ানোসহ সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগনেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, “আমরা এর চেয়েও বেশি কিছু করারচেষ্টা করবো।”বেনগাজির ঘটনা তদন্তের ব্যাপারে মন্তব্য করার জন্যজাতিসংঘের প্রতিনিধি সুসান রাইসের ওপর জনগণের মৌখিক আক্রমণকে ‘বিস্ময়কর’ বলে মন্তব্য করেন ওবামা। তিনি রাইসকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে দাবি করেন।উল্লেখ্য, ঐ আক্রমণের পরদিন রাইস বলেছিলেন, অনলাইনে একটি ইসলামবিরোধী চলচ্চিত্রেরকারণেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এ মন্তব্যের জন্য প্রচুর সমালোচনার মুখোমুখি হনরাইস। এমনকই পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের তালিকা থেকেও নিজের নাম সরিয়েনিতে বাধ্য হন।যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে কেনির্বাচিত হচ্ছে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন ওবামা। তবে এর জন্যরিপাবলিকান চাক হ্যাজেলকেই বেছে নিতে পারেন তিনি। তবে হ্যাজেলকেপ্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে আপত্তি আছে সমকামী গোষ্ঠীর। এর আগেসমকামীদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাদের তোপের মুখে পড়েছিলেন হ্যাজেল। এসমকামী গোষ্ঠীই তারাই ওবামার পক্ষে জোর নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিল। ওবামার হ্যাজেলকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে সরাসরি উল্লেখ না করলেও বলেছেন, “আমিহ্যাজেলকে চিনি। সে একজন দেশপ্রেমিক। তার অসাধারণ কিছু কৃতিত্ব আছে।” হ্যাজেল সমকামীদের প্রতি বিরূপ মন্তব্যের জন্য ক্ষমাও চেয়েছে বলে জানানওবামা।পরবর্তী চার বছরে কোন কোন বিষয় গুরুত্ব পাবে, এমন প্রশ্নেরজবাবে ওবামা জানান, অভিবাসন, অর্থনীতি, শক্তি ও ঋণ কমানো। চলতি অভিবাসননীতি সংশোধন করে ২০১৩ সালে নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।যুক্তরাষ্ট্রেরঅভ্যন্তরীণ কাঠামোর ব্যাপারে তিনি বলেন, “আমরা যদি রাস্তাঘাট, সেতু, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি নির্মাণের মাধ্যমে মানুষকে কাজে ফিরিয়ে আনতেপারি, তাহলে দীর্ঘদিনের ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হওয়া শুরু হবে। এতে আমাদেরঅর্থনীতিও শক্তিশালী হবে।”
পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদনের প্রতিও যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব দেবে বলে জানান তিনি।তবেসব মিলিয়ে অর্থনৈতিক মন্দাকেই সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে স্বীকার করে তিনিবলেন, “প্রবৃদ্ধি এরকম থাকলে অর্থনীতিকে সুস্থভাবে টিকিয়ে রাখা খুবই কঠিনহবে।”