আজ || রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
শিরোনাম :
  গোপালপুরে মাদরাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে গণশুনানি       ভূঞাপুর মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নতুন কমিটি       গোপালপুরে ১৮ বছর পর স্বনামে ফিরলো আব্দুস সালাম পিন্টু কলেজ       গোপালপুরে বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত       ক্ষেতের আইল দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে ভোগান্তিতে শিশু শিক্ষার্থীরা       গোপালপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কমিটি গঠন       গোপালপুরে জামায়াতে ইসলামীর পৌর শাখার কর্মী সম্মেলন       ইমনরা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে: টাঙ্গাইল জেলা জামায়াত আমীর        গোপালপুরে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন       ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগকে এদেশের মানুষ মাথা তুলে দাড়াতে দিবেনা : সালাউদ্দীন আহমেদ    
 


দৃষ্টি ফেরালে

মো: শামছুল আলম চৌধুরী
যুগ্ন-সচিব (অব)

বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ। ব্রক্ষ্মপুত্রের তীরে অবস্থান। শিক্ষার শহর। প্রাচীন জনপদের ১৯০৮ সালের শতাব্দী পুরাতন আনন্দ মোহন কলেজ। সদ্য স্বাধীন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি, বাংলাদেশ । উত্তর, দক্ষিন আর হিন্দু হোস্টেলে আমরা থাকতাম। ১৯৭৩ সালে এসএসসি পাশ করে এই কলেজে ভর্তি হই। সুন্দর নির্মল পরিবেশ। কৃঞ্চচূড়ার হাতছানি। দেয়াল ঘেরা আঙ্গিনা। সবমিলিয়ে দৃষ্টি নন্দন কলেজ অবয়ব।

শ্রদ্ধাভরে স্মারণ করি হোস্টেল সুপার মরহুম ড. সেকান্দার আলীকে। যিনি আমাদের ক্লাসে মাঝে মাঝে অংক কষাতেন। প্রচন্ড গতি ছিল তাঁর কথায় ও হাতে। কথা শেষ হওয়ার আগেই হাত চলে যেত ব্লাক বোর্ডের ডান প্রান্তে। প্রখর মেধা ছিল তাঁর। আরো যাদের কথা স্মারণে আসে তাঁদের মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম, রসায়নের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, উদ্ভিদ বিদ্যার ড. আল্লা রাখা, প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক ভুপেন চন্দ্র, ব্যবস্থাপনার অধ্যাপক রেজাউল বারী জামালী (ইদ্রিস), অধ্যাপক আশরাফ উদ্দিন (ব্যবস্থাপনা) ও আরো অনেক পন্ডিত, তুখোর ও মেধাবী শিক্ষকমন্ডলী ছিলেন আমাদের এই আনন্দ মোহন কলেজে। এই সকল শিক্ষক শুধু কলেজেই না আমাদের বিশ্বাস সারা দেশেই তাঁদের পান্ডিতের সুপরিচিতি ছিল। তাঁদের ব্যক্তিত্বও ছিল অনুসরণীয়। পাঠদান পদ্ধতি ছিল অসাধা রণ।

সেই ১৯৭৪ সনে কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। সময়ের প্রখরতা পেরিয়ে দেখতে দেখেতে পঞ্চাশ বছরে সুবর্ণ জয়ন্তীর ছোঁয়া লেগেছে। একরাশ স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠে। হোস্টেলের পুকুরে স্নান করা, কর্তৃপক্ষকে ফাঁকি দিয়ে রাতের বেলায় মাছ ধরা। দীঘির মত পুকুরে স্বচ্ছ পানিতে ছিল মাছ। তারুণ্যের দূড়ন্তপনা। হাতের আঙ্গুলে সুতা জড়িয়ে এক প্রান্তে বড়শি বেঁধে দিতাম। টান পড়লে জলের মাছ লাফালাফি শুরু করত। এরপর টেনে ডাঙ্গায় তোলা। চুপিচুপি হোস্টেল কক্ষে নিয়ে রান্না করে খাওয়া। শৌচাগারের দুরস্থায় কাজ সারতে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। বিষয়টি দেয়াল পত্রিকায় স্থান পায়। তাতে করে কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে।

মাঝে মাঝেই ডাইনিং বন্ধ হয়ে যেত। সেই সময় ৩০/৪০ জন ছাত্রের অন্নের যোগান দিত, “কফিল-রশিদ” ভ্রাতৃদ্বয়। বাঁশের খাঁচায় ভাত, তরকারি, সবজি ও ডাউল সাঁজিয়ে পরিবেশন করতেন। অদ্ভুত ব্যাপার হলো যে, সকল ছাত্রের খাবারের কোন হিসাব “কফিল-রশিদ”দের কাগজে লিখা থাকতো না। তাদের মুখেই সকলের নির্ভুল হিসাব থাকতো, ভুল হতোনা কখনো। তাদের সরবরাহকৃত সেই খাবার ছিল উপাদেয় এবং দামেও সস্তা। সকালের নাস্তার জন্য মাঝে মাঝে আগের দিনে বিকাল বেলায় গাঙ্গিনা পাড়ের বেকারীতে পরিচয় পত্র নিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হতো। চারআনায় অর্ধ পাউন্ড পাউরুটি নিয়ে হোস্টেলে ফিরতাম। ১০/১১ বছরের একজন শিশু প্রায়ই আমার রুমের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। নাম তার রতন। কলেজ রোড কিংবা কাচিঝুলি এলাকায় কোন এক ডেরায় ছিল তার পরিবারের বসবাস। আর্থিক অসংগতির কারণে স্কুলে যাওয়া হয়নি। ওর যাপিত জীবনের কথা আমাকে শোনাতো। প্রায়ই তাঁর অনাহারে দিন কাটতো। মাঝে মাঝেই অনাগত ভবিষ্যৎতের দিকে উদাস হয়ে তাঁকিয়ে থাকতো। খাবারের সময় সাথে নিয়ে খেতাম। ছোট খাটো ফুট-ফরমায়েস করে দিত। আমরা কয়েকজন মিলে মাঝে মধ্যে কিছু আর্থিক সহয়তা ও কাপড়-চোপড় দিতাম। পঞ্চাশ বছর পরিয়ে জানিনা এখন কফিল-রশীদ আর রতনেরা কে কোথায় কেমন আছে। তবে, সব মিলিয়ে এসকল অম্ল-মধুর স্মৃতি আজও অম্লান।

দীর্ঘ সময় পেরিয়েছে, আমাদের মাঝে অনেকই আর বেঁচে নেই। সহপাঠিদের মধ্যে আমরা হারিয়েছি (১) রবিউল ইসলাম (বুয়েটের মেধাবী ছাত্র ছিল), উত্তর ব্লকে থাকতো, বাড়ী গুঠাইল, ইসলামপুর, জামালপুর (২) আব্দুল বারিক, অধ্যক্ষ, মহিলা কলেজ ইসলামপুর, জামালপুর, (৩) আমজাদ হোসেন, মৎস্য কর্মকর্তা উত্তর ব্লকে থাকতো, টাঙ্গাইল (৪) আলহাজ আঃ বারী চৌধুরী, উত্তর ব্লক, আলোকদিয়া, বারহাট্টা, নেত্রকোনা (৫) মোমিনুর রহমান, দক্ষিণ ব্লক রেলগেট, জামালপুর (৬) শহীদুল্লাহ, উত্তর ব্লক, ভালুকা, ময়মনসিংহ (৭) ডাঃ আলমগীর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা, শহরে থাকতো (৮) ডাঃ অনিমেশ মজুমদার, সাবেক অধ্যক্ষ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, কালি বাড়ীতে বাসা ছিল (৯) মলয় তালুকদার, যুগ্ন-সচিব (অব) মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা, হিন্দু হোস্টেল (১০) মোঃ রবিউল ইসলাম, দক্ষিণ ব্লকে থাকতো, মেলান্দহ, জামালপুর, সাবেক ডিজিএম, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এঁরা সবাই পরপারে গমন করেছেন। এসকল বন্ধুদের পবিত্র আত্মার মাখফেরাত কিংবা শান্তি কামনা করি। তাঁরা যেন বেহশতবাসী বা স্বর্গবাসী হন।

গত ১৩ জুলাই, ২০২৩, ঢাকায় এক আড্ডায় সেই ১৯৭৪/১৯৭৫ এ আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহের ইন্টারমিডিয়েট হোস্টেলের সাতজন সহপাঠি একত্রিত হয়েছিলাম। আমরা হলাম:- (১) আমি মোঃ শামছুল আলম চৌধুরী, (২) অধ্যক্ষ, ডাঃ মোঃ আব্দুল হালিম, কুমুদিনী ওমেন্স মেডিকেল কলেজ, (৩) ডাঃ হারুন-অর-রশীদ, সিনিয়র কনসালটেন্ট (৪) ডাঃ ফজলুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক, সিআইপিআরবি (৫) ডাঃ আব্দুল্লাহ হারুন, শিশু বিশেষজ্ঞ (৬) মোঃ মালেক নেওয়াজ (মুকুল), সাবেক জিএম, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (৭) প্রকৌশলী খন্দকার মোঃ মনিরুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক, কর্ণফুলি শিপ্ বিল্ডার্স লিমিটেড।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!