গোপালপুর বার্তা ডেক্স :
মাতৃত্বকালিন ছুটি নিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কর্তৃক মহিলা শিক্ষকদের হয়রানির অভিযোগে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছেন। তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন অতিরিক্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আলী আহসান।
গত বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত গোপালপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে এ তদন্তের কাজ চলে। ভূক্তভোগী কয়েক মহিলা শিক্ষক এবং তিনজন উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসারসহ অফিসের দুই চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী অভিযোগের বিষয়ে লিখিত সাক্ষ্য দেন।
গোপালপুর উপজেলা শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল করিম জানান, মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে মহিলা শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানি করেন গোপালপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মর্জিনা পারভীন। সন্তান সম্ভবা মহিলা শিক্ষকদের তিনি একাধিকবার অফিস ডেকে পাঠান। তিনতলার সিড়ি বেয়ে অফিসে উঠার পর নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে তিনি পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখেন যে মহিলা শিক্ষক সন্তান সম্ভবা কিনা। আবার অনেক সময় সন্তান প্রসবের পর মাতৃত্বকালীন ছুটি মঞ্জুর করতে তিনি প্রসূতি ও নবজাতককে অফিসে হাজির হতে বলেন। মিডিয়ায় খবর প্রকাশের পর অতিরিক্ত জেলা শিক্ষা অফিসার আলী আহসান বৃহস্পতিবার অভিযোগ তদন্ত করতে গোপালপুর আসেন। উপজেলা শিক্ষা অফিস অভিযোগের বিষয়ে ভুক্তভোগী কয়েকজন মহিলা শিক্ষকের লিখিত জবানবন্দী নেন।
উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার রোকনুজ্জামান জানান, তদন্তের সময় উপজেলা শিক্ষা অফিসার মর্জিনা পারভীন উপস্থিত ছিলেন।
সহকারি শিক্ষা অফিসার হুমায়ুন কবীর জানান, প্রসূতিকালীন ছুটির জন্য সরকারি নিয়ম রয়েছে। সেই অনুযায়ী মহিলা শিক্ষকরা ছুটি পাওয়ার কথা। কিন্তু উপজেলা শিক্ষা অফিসার নিজের মতো করে ছুটি প্রদানের রেওয়াজ চালু করেন। অফিস অর্ডার দিয়ে তাদেরকে সেভাব কাজ করত বলেছেন। সেই অফিস অর্ডার মোতাবেক তিন সহকারি শিক্ষা অফিসার কাজ করছেন।
সাজনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাকসুদা আখতার জানান, তিনি লিখিত বক্তব্যে ছুটি নিয়ে হয়রানি এবং নবজাতককে নিয়ে অফিস হাজির হওয়ার দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন।
ভোলারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক উম্মে হাবীবা জানান, ছুটি নিয়ে চরমভাবে হয়রানির অভিযোগ তিনি লিখিত বক্তব্যে দিয়েছেন।
হিজলীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সালমা খাতুন অভিযোগ করেন, শিক্ষা অফিস থেকে মেসেজ পেয়ে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য স্বামীসহ তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসে গেলে কিছু বহিরাগত লোক তাকে সাক্ষ্য দিতে বাধা দেন। তাকে হুমকিধামকি দেন। তাদের হুমকির মুখে তিনি সাক্ষ্য দিতে না পারায় ফিরে আসেন। বাধাদানকারিরা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পক্ষ নিয়ে এমন কাজ করেছে বলে জানান তিনি। তবে তদন্তকারি কর্মকর্তারা আগামী রবিবারের মধ্যে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে লিখিত বক্তব্য জমা দেয়ার অনুমতি দিয়েছেন বলে জানান সালমা।
তদন্তকারি কর্মকর্তা আলী এহসান জানান, অনেকের মৌখিক ও লিখিত সাক্ষ্য পেয়েছি। যারা বহিরাগতদের বাধার কারণে সাক্ষ্য দিতে পারনেনি তাদেরকে আগামী রবিবার সকাল দশটার মধ্যে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে হাজির হতে বলা হয়েছে। সেখানেই তাদের সাক্ষ্য নেয়া হবে। মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে নারী শিক্ষকরা হয়রানি হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে অনুমিত হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে শিক্ষা অফিসার মর্জিনা পারভীন জানান, তিনি অসুস্থ। তাই কোন বক্তব্য দিতে পারবেননা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল আজিজ জানান, দুই তিনদিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট পাবেন। তারপর যা ব্যবস্থা নেয়ার নিবেন।