থার্টি ফার্স্ট নাইটে অপ্রীতিকর ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে হাইপ্রোফাইল ফ্যামিলির সন্তানদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মন্ত্রী, এমপির ছেলেমেয়ে, উঠতি বয়সের অভিনেত্রী, মডেল ও বেসরকারি ইউনিভার্সিটির তরুণ-তরুণীদের কর্মকাণ্ড বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
এদিকে এই রাতে বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার আশঙ্কা উল্লেখ করে সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থা সরকারের উচ্চপর্যায়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এতে স্পর্শকাতর ও জনগুরুত্বপূর্ণ অর্ধশতাধিক পয়েন্ট শনাক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ওইসব পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনের সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, পশ্চিমা সংস্কৃতি পালন করতে গিয়ে এদেশের অনেক বিত্তশালী ও প্রভাবশালী পরিবারের অনেক তরুণ-তরুণী নেশার দিকে ঝুঁকে পড়ে। বেসরকারি বিশ্বদ্যিালয়ের তরুণ-তরুণীরা ঝুঁকিপূর্ণ উৎসবে মেতে ওঠে। অনেকে কোমল ও কড়া পানীয় ছাড়াও ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইনসহ নানা ধরনের নেশাসামগ্রী সেবন করে থাকে। বেসামাল অবস্থায় রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে।
পরোয়া গতিতে রাজধানী দাবড়িয়ে বেড়ায় মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার বাহিনী। অনেকে নারীদের ইভটিজিং ও নিপীড়নের চেষ্টা চালায়। এসব বিষয় মাথায় রেখে আগে থেকেই গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, ধানমন্ডির বিভিন্ন বাসাবাড়ি, রেস্তরাঁ ও পার্টি হাউজে নজরদারি শুরু করেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উৎসবের নামে বাড়াবাড়ি বরদাশত করা হবে না। বিশৃঙ্খল সৃষ্টিকারীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। মাতাল হয়ে গাড়ি চালানোর সময় ধরা পড়লে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের মাদকের সরবরাহ বেড়ে গেছে।
গত কয়েকদিন ধরেই মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের গ্রেপ্তার করার জন্য বিভিন্ন আস্তানায় হানা দিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আনন্দের আতিশয্যে নগরবাসীর শান্তি-শৃঙ্খলায় কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে পাকড়াও করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূত্রমতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যুদ্ধাপরাধ ইস্যুকে কেন্দ্র করে বর্ষবরণ বিদ্বেষী চক্র আতশবাজির নামে বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন টিএসসি এলাকা, ফুলার রোড, বকশি বাজার ক্রসিং, ২১শে হল ক্রসিং, শাহবাগ ক্রসিং, দোয়েল চত্বর, নীলক্ষেত মোড়, কাঁটাবন, চারুকলা ইনস্টিটিউট, ছবির হাট, মধুর কেন্টিন, বুয়েট শহীদ মিনার, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা, বেইলি রোড, গুলশান-বারিধারার বিভিন্ন ক্লাব, বাসাবাড়ি ও কূটনৈতিক জোনে নাশকতা হামলার আশঙ্কা করা হয়েছে। এছাড়া হিজড়াদের সুন্দরী তরুণীর বেশে সাজিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিও তৈরি করতে পারে কোন দুষ্টচক্র।
বিভিন্ন উৎসবস্থলে চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কাও করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া ওই প্রতিবেদনে। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের উইং কমান্ডার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নির্বিঘ্ন উৎসব উদযাপনের জন্য র্যাব সদস্যদের সতর্ক পাহারা বসানো হয়েছে। বিশৃঙ্খলাকারীদের কঠোর হাতে দমন করতে বলা হয়েছে। র্যাব জানায়, ইংরেজি নববর্ষ স্বাগত জানাতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের অনেক মানুষই প্রস্তুত। এজন্য বিভিন্ন আবাসিক-অনাবাসিক হোটেল, ক্লাব, প্রতিষ্ঠান, পাড়া-মহলা এমনকি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সন্ধ্যা থেকে পরের দিন পর্যন্ত আনন্দ-ফুর্তির আয়োজন প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে। এ সুযোগে ছিনতাই, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। তাই উল্লিখিত অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের নিমিত্তে সমগ্র দেশে র্যাবের গোয়েন্দা ও আভিযানিক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে রাজধানীতে দুই হাজার ও সারা দেশে প্রায় ৫০০০ র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। উল্লিখিত জনবল ছাড়াও রাজধানীসহ ঢাকার বাইরের ব্যাটালিয়নগুলোর নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ওই দিনসহ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে নিয়মিত টহল ইতিমধ্যে আরও জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও সকল ব্যাটালিয়ন ৩১শে ডিসেম্বর রাতে ‘নববর্ষ’ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয়ে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সকল ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকাসমূহের অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ইউনিফর্ম টহল বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানস্থল সমূহের আয়োজকদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে। রাতে কোন ব্যক্তি যাতে মাদকাসক্ত হয়ে কোনরূপ অপ্রীতিকর ঘটনা সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে আতশবাজি বিক্রয় বন্ধ করার ব্যাপারে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন সন্ত্রাসী/সন্ত্রাসীচক্র কর্তৃক যাতে কোন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ব্যাটালিয়নসমূহের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বোম্ব সুইপিং সহযোগিতা দেবে। থার্টি ফার্স্ট নাইটে বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থলে আগত মহিলাদের পথিমধ্যে যাতে কেউ টিজ করতে না পারে সে দিকে বিশেষভাবে সতর্ক দৃষ্টি রেখে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। র্যাব ব্যাটালিয়নগুলোর চাহিদা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে ডগ সুইপিং করা হবে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ‘ডগ টিম’ সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত থাকবে। সারা রাত র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ যে কোন স্থানে প্রয়োজন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। হোম পার্টির নাম দিয়ে কেউ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে অবৈধভাবে মদ কিংবা নেশা জাতীয় দ্রব্যসামগ্রী বিক্রয় করলে তার বিরূদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে দেশের কোথাও কোন রকম বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে জেলা ও মেট্রোপলিটন থানা ভিত্তিক স্থানীয় র্যাবের সহযোগিতা পেতে টিমের দায়ি ত্বপ্রাপ্ত র্যাব অধিনায়ককে অবহিত করতে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।