কে এম মিঠু, গোপালপুর:
সারা দেশের ন্যায় টানা ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষজন বাড়তি চাপে পড়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে এসেছেন বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত উপজেলার স্বল্প আয়ের মানুষজন। এতে ভয়াবহ করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থান না হলে সংসারে বিপর্যয় নেমে আসার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
করোনাকালে কাজ হারিয়ে কেউ চালাচ্ছেন অটোরিকশা। আবার দৈনিক চুক্তিভিত্তিক কেউ কাজ করে সংসারের অভাব-অনটন দূর করতে চেষ্টা করলেও কঠোর লকডাউনে এখন আর তেমন কাজ নেই তাদের হাতে। করোনায় আতঙ্কিত চারদিকে শুধুই শূন্যতা।
উপজেলার দূরপাল্লার গণপরিবহন ঢাকা-গোপালপুর ভায়া টাঙ্গাইল ‘দ্রুতগামী’ বাস সার্ভিসের ১৪০টি বাসের প্রায় ২৭০০শত শ্রমিক কঠোর লকডাউনের ফলে কর্মহীন অলস সময় অতিবাহিত করছেন। ফলে অভাব-অনটনে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষের সঞ্চয় ইতোমধ্যে ফুরিয়ে এসেছে। এতে অর্থনৈতিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সমাজের নানা স্তরে। মানুষের মনে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে, ভর করছে এক অজানা শঙ্কা। তার ওপর কর্ম হারিয়ে বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী গ্রামে যুক্ত হওয়ায় পড়ছে কাজের আকাল। অভাব-অনটনে পড়ে অনেকেই জীবিকার তাগিদে অসৎ পথে পা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন।
গোপালপুর পৌর শহরের চায়ের দোকানগুলোতে দরজা লাগিয়ে চা বিক্রি করছেন অনেক দোকানি। ডুবাইল গ্রামের হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘কঠোর লকডাউন চলায় এহন দোকান বন্ধ। চা বেইচা আমি ৫ জনের সংসার চালাই। আয় বন্ধ থাকলে সংসার চালামু কি কইরা? গেছে লকডাউনের সময়ও দোকান বন্ধ ছিল। তহন জমানো টাকা ভাইংগা সংসার চালাইছি। ব্র্যাক থিকা নেওয়া ঋণের কিস্তি দিয়েছি। এখন ঘরে টেহাপয়সা কিছুই নাই। দিনের পর দিন দোকান বন্ধ থাকলে তো না খাইয়া মরণ লাগবো। সরকারের সাহায্য ছাড়া বাঁইচা থাকা দুরূহ হবো।’
উপজেলার বেশকিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, ‘প্রতিদিন ব্যবসা করে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার তাদের চলত। কিন্তু বর্তমানে মানুষের সমাগম বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের নির্দেশে দোকান বন্ধ। এখন আমরা গরিব মানুষ কোথায় যাব? এভাবে চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।’
লকডাউনে রাস্তায় বের হওয়া ভ্যানচালক সোলায়মান বলেন, ‘ভাই আমার সংসারে বউ পোলাপান নিয়া চারজনের সংসার। পেটের জ্বালায় রাস্তায় পু্লিশের ভয় নিয়াও ভ্যান নিয়া বাহির হইছি। আমরা গরিব মানুষ। আমাগর খবর রাখে কেরা? সকাল থেকে ভ্যান নিয়ে ঘুরতাছি। কিন্তু লকডাউনে রাস্তায় লোকজন না থাকায় কামাই রোজগার এহাবারে নাই বইলাই চলে। এহন সরকার আমাগরে কিছু সাহায্য না করলে পোলা-মেয়া নিয়া না খাইয়া থাকন লাগবো।’
গোপালপুর পৌর এলাকার মো. আব্দুল হাই, কাইয়ুম উদ্দিন, ঝিনুক আর্যসহ বেশকিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘এই করোনাকালে আমরা দরিদ্র থেকে হতদরিদ্র হয়ে পড়েছি। ভাবতে পারতেছিনা আমরা এখন সংসার চলামু কিভাবে?’
স্থানীয় বাসিন্দা সাত্তার মিয়া বলেন, ‘গত বছরের লকডাউনের শুরুতে সরকারের পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দারিদ্র মানুষদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছিল। কিন্তু এবারের কঠোর লকডাউনে ওইসব প্রতিষ্ঠান আর এগিয়ে আসছে না। সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে ভালো নেই আমার মতো নিম্ন আয়ের মানুষেরা।’
এ ব্যাপারে গোপালপুর পৌরসভার মেয়র মো. রকিবুল হক ছানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে পৌরসভার ছয়শ জনকে জিআর কার্ডের মাধ্যমে ৫০০ করে নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে। ভিজিএফ কার্ডের আওতায় ৪৬০০শ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া শুরু হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. পারভেজ মল্লিক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার হতদরিদ্র, শ্রমিক, দিনমজুরসহ নানা পেশার মানুষের কাছে সহায়তা নিয়ে যাচ্ছি।