ডাক্তারদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল মারা গেল, নয়া দিল্লির বাসে ধর্ষিত সেই তরুণী। ওই ধর্ষণের বিচার দাবিতে ভারতজুড়ে আন্দোলনের মধ্যে শনিবার ভোরে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তার। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ওই মেডিকেল ছাত্রীর মৃত্যুর জন্য দায়ীদের শাস্তি দেয়ার অঙ্গীকার করে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বানও জানিয়েছে সরকার।
গত ১৬ ডিসেম্বর ধর্ষণ ও মারধরের পর ২৩ বছরের ওই ছাত্রীকে তার বন্ধুসহ দিল্লির রাস্তায় চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেয় ছয় পুরুষ সহযাত্রী। তারা দুজন সিনেমা দেখে ফিরছিল। গুরুতর আহত ওই তরুণীকে দিল্লির হাসপাতালে তিনটি অস্ত্রোপচারের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৭ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়, ভর্তি করা হয় মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে। ওই হাসপাতালেই আজ শনিবার ভোর পৌনে ৫টায় (স্থানীয় সময়) চিকিৎসকরা ওই তরুণীকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেলভিন লোহ এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে রোগীটি মারা গেছেন। মৃত্যুর সময় তার পাশে পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও ছিলেন ভারতের হাইকমিশনার।” মাউন্ট অফ এলিজাবেথের চিকিৎসকরা ওই তরুণীকে বাঁচানোর জন্য সর্বোত চেষ্টা চালিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের সব চেষ্টা বিফল হয়েছে।”
সিঙ্গাপুরে ভারতের হাইকমিশনার টি সি এ রাঘবন সাংবাদিকদের বলেন, মৃত্যুর পর ওিই তরুণীর পরিবার ভেঙে পড়েছে। “তার আঘাত মারাত্মক ছিল,” বলেন তিনি। ওই তরুণীর অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে শুক্রবার সকালেই হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। তখন বলা হয়, “মারাত্মক জখমে আমানতের মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, এই নিয়েই তিনি এখনো বেঁচে আছেন।
“বেঁচে থাকার জন্য খুব সাহসের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে তিনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু শারীরিক আঘাতগুলো তার বেঁচে ফিরে আসার পক্ষে খুবই মারাত্মক।”
দিল্লির হাসাপাতালে ওই তরুণীর দেহে তিনটি বড় অস্ত্রোপচার হয়, মস্তিষ্কের আঘাত ছাড়াও দিল্লির হাসপাতালে থাকাকালেই তার হৃদপিণ্ডের কার্যক্রম কিছুক্ষণের জন্য বিঘ্নিত হয়েছিল। এরপরই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।
ওই তরুণীর লাশ ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসতে দিল্লি থেকে একটি বিশেষ বিমান পাঠানো হয়েছে ।
ভারতীয় সময় বিকাল ৪টা নাগাদ তার লাশ দিল্লি পৌঁছতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ধর্ষিত তরুণীর পরিচয় এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা না হলেও ভারতের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম তাকে ‘আমানত’ নামে সম্বোধন করছে।
ওই তরুণীর মৃত্যু ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত বলেন, “আমি সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।”
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্দে নারীর নিরাপত্তায় আইন আরো কড়া করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমেই ওই তরুণীর প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে।”
ওই তরুণী ধর্ষিত হওয়ার পর ভারতজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ধর্ষণকারীদের মৃত্যুদণ্ড এবং নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে মিছিল, সমাবেশ ও বিক্ষোভ চলছে দেশটিতে। ওই তরুণীর মৃত্যুতে শোক জানানোর পাশাপাশি মনমোহন সিং ‘আবেগ’কে প্রতিরোধের শক্তিতে পরিণত করার আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। ধর্ষণে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ এই পর্যন্ত ছয় ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা বর্তমানে দিল্লির তিহার কারাগারে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে এখন হত্যার অভিযোগও আনা হচ্ছে।