সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে জনগণকে ঘর ছেড়ে রাজপথে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বুধবার রাজধানীতে ১৮ দলের গণসংযোগ কর্মসূচির শুরুতে গাবতলীর পথসভায় এই আহ্বান জানান।
সরকারের নানা ব্যর্থতার সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘জালেম অত্যাচারী সরকারের হাত থেকে বাঁচতে চায় মানুষ। তাই এখন ঘরে বসে আর্তনাদ করার সময় নেই। সজাগ হতে হবে, প্রতিরোধ করতে রাজপথে নামতে হবে।’
তিনি বলেন, সরকার একটি কেলেঙ্কারি করে, সেটি ধামাচাপা দিতে আরেকটি কেলেঙ্কারির জন্ম দেয়। তাই আমরা আপনাদের অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলনে নেমেছি। কৃষকের অধিকার, গণমাধ্যমের অধিকার, গণতন্ত্রের অধিকারের জন্য আন্দোনে নেমেছি।
‘এজন্য আমরা একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল চাই। সেটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে। কারণ এই আওয়ামী লীগও বলেছিল, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না। বিএনপির অধীনে নির্বাচন হতে পারে না। তারা এজন্য আন্দোলন করেছে, লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে।’- যোগ করেন খালেদা জিয়া।
তিনি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করতে সরকার নানা ‘অপকৌশল’ অবলম্বন করেছে উল্লেখ করে এটা মেনে নেয়া হবে না বলে আবারো হুঁশিয়ারি দেন।
জনগণের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘এখন আমরা বেরিয়ে এসেছি আপনাদের সজাগ করার জন্য। আমরা বলতে চাই, সরকার তার মেয়াদ পূরণ করুক তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যথা সময়ে নির্বাচন হতে হবে। এজন্য নির্বাচনের আগে নির্দলীয় সরকার পুনর্বহাল করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।’
সরকার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজপথে নিরীহ যুবক বিশ্বজিতের কি দোষ ছিল? তাকে এই ছাত্রলীগের গুণ্ডারা হত্যা করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে।
গুম, অপহরণ, বিরোধীদলীয় নেতাদের নামে মিথ্যা মামলার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এই দিন দিন নয়, আরো দিন আছে। সব হত্যা-গুমের বিচার করা হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন আরো বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে ২৫ হাজার মামলা করা হয়েছে। কারো নামে মামলা করতে বাদ রাখেনি এই সরকার। অথচ নিজেদের নামে সাত হাজার মামলা প্রত্যাহার করেছে। মামলা প্রত্যাহার করে লাভ হবে না। আবার মামলা পুনরুত্থান করা হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ বিরোধীদলীয় নেতাদের নামে মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে জোট নেত্রী বলেন, মামলা করে নেতাদের জেলে ঢুকিয়ে পার পাওয়া যাবে না। বিএনপির আন্দোলন করবে জনগণ। ঘর থেকে বেরিয়ে তারাই বিএনপির আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে এই স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটাবে।
সরকারের দুর্নীতির শেষ নেই উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, হলমার্ক, ডেসটিনি, পুঁজিবাজার, কুইক রেন্টাল- সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এসব দুর্নীতি করা হচ্ছে। মাছের মাথায় পচন ধরেছে। সরকারের এক নম্বর ব্যক্তি এই দুর্নীতি করছে, উপরেই দুর্নীতি হচ্ছে।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সরকারের এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুবকদের সচেতন হতে হবে। যুবকদের নেশাদ্রব্য দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দুর্নীতি করবে তা হতে পারে না। তোমাদের জাগতে হবে।
তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে দেশপ্রেমকে জাগিয়ে তুলতে হবে। তোমাদের সাথে আমরা আছি। তোমাদের জন্য, তোমাদের ভবিষ্যতের জন্য আমরা পথে নেমেছি।
তরুণ সমাজের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা তোমাদের সঠিক ঠিকানায় নিয়ে যাব। তোমাদের নেতৃত্ব দিতে হবে। তোমরা বেকার থাকবে আর খুনিরা, চোরেরা তোমাদের চালাবে তা হতে পারে না।’
বিএনপির আন্দোলনকে সরকার ভিন্নখাতে নিয়ে যেতে চায় উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করলে বলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে আন্দোলনে নেমেছি। সেটাও তো (যুদ্ধাপরাধীদের বিচার) আপনারা করতে পারেননি। আমরা দেশ বাঁচানোর আন্দোলন করছি। আপনারা সঠিকভাবে বিচার করুন।’
তিনি বলেন, শুধু বিরোধী দল নয়, আওয়ামী লীগে ভেতরের যুদ্ধাপরাধীদের ধরুন। প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনকে ধরুন তাহলে বোঝা যাবে যুদ্ধপরাধীদের বিচার হচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামীর সাথে আওয়ামী লীগের সখ্যতার কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, ১৯৯৬ সালে জামায়াত যুদ্ধাপারাধী ছিল না? তখন যুদ্ধপরাধীদের নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন নেমেছিলেন কেন?
শুধু যুদ্ধাপরাধী নয়, আওয়ামী লীগের সাথে স্বৈরাচারের সখ্যতাও আছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এরশাদকে বৈধতা দিয়েছিলেন আপনি। ’৮৬ সালের নির্বাচনে কেউ যাব না বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। আপনি (শেখ হাসিনা) বলেছিলেন, যে নির্বাচনে যাবে সে জাতীয় বেঈমান হবে। সেদিন আপনিই গিয়েছিলেন সেই নির্বাচনে জামায়াতকে সাথে নিয়ে।
আওয়ামী লীগকে দেশের শত্রু আখ্যা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এই আওয়ামী লীগ জাতীয় বেঈমান। এরা দেশ বিক্রি করে দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। আওয়ামী লীগ তার স্বার্থের জন্য যা খুশি তাই করতে পারে। সাপকে বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করা যায় না।
তিনি যুবকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের স্বাধীনতায় যুবকরা এগিয়ে এসেছিল। এখনো যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। আর একবার জেগে ওঠো। তোমাদের মা-বোন হিসেবে তোমাদের কাছে এসেছি। তোমাদের মা-বোনদের জন্য নিজেদের অধিকারের জন্য তোমাদের আন্দোলনে নামতে হবে।
এজন্য বিএনপির কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, যতক্ষণ না এই সরকার বিদায় হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। গণসংযোগ শেষে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশে আইনের শাসন চলছে না, চলছে অত্যাচারী, খুনি ও জংলি শাসন। এ অবস্থায় ঘরে বসে থাকলে চলবে না। আসুন তাই আরেক বার রুখে দাঁড়াই।
এরআগে গুলশান বাসা থেকে খালেদা জিয়া রওনা হয়ে সকাল ১১টা ১০ মিনিটে গাবতলী পথ সভামঞ্চে এসে উপস্থিত হন।
প্রিয়নেত্রীর বক্তব্য কাছ থেকে শোনার জন্য বুধবার সকাল থেকে হাজারো মানুষ খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে শুরু করে গাবতলীর সাবেক বিউটি সিনেমা হলের সামনে। এ সময় বিএনপিসহ জোটের নেতা-কর্মীদের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো গাবতলী এলাকা।
জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত বড় বড় ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে যায় আশপাশের বড় বড় ভবনগুলো।
ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এ খালেকের সভাপত্বিতে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভাইস-চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল্লাহ-আল নোমান, যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।
জোট নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী অধ্যাপক মজিবুর রহমান, কর্মপরিষদ সদস্য ডা. আবদুল্লাহ মো. তাহের, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, এনপিপির সভাপতি শওকত হোসেন নিলু, কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর (অব.) ইবরাহিম বীর প্রতীক, বাংলাদেশ ন্যাপের সভাপতি জেবেল আর গানি প্রমুখ।