রাজধানী নয়া দিল্লিতে প্যারামেডিকেলের এক ছাত্রীকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের প্রতিবাদে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। রোববার বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে একজন সাংবাদিকের মৃত্যু হয়।
দিল্লির গণধর্ষণের ঘটনায় সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিবে জানিয়ে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং।
সোমবার জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। বলেন, ‘সমস্ত নারীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নিবে।’
মনমোহন সিং বলেন, ‘আমি সমস্ত সচেতন নাগরিককে শান্ত হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছি। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে চায়, দেশের সব নারীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সম্ভব সব পদক্ষেপ সরকার নিতে বদ্ধপরিকর।’
এরআগে রোববার প্রধানমন্ত্রী এক বিবৃতিতে গণধর্ষণের ঘটনায় আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে গভীর দুঃখপ্রকাশ করেন। বলেন, ‘তরুণীদের ওপর এ ধরনের বর্বরতার জন্য আমরা সকলেই দায়ী, সত্যিকার অর্থেই সংক্ষুব্ধ।’
‘জনগণ সংক্ষুব্ধ এবং তাদের আন্দোলন যৌক্তিক। তবে আমরা সকলেই এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় এবং এর সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি চায়।’- যোগ করেন মনমোহন সিং।
দিল্লিতে সপ্তাহব্যাপী চলা এ অন্দোলনে একশ’জনেরও বেশি বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। তবে পুলিশের দাবি, অন্দোলন ঠেকাতে তাদেরও অন্তত ৬০ জন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
দিল্লির ওই গণধর্ষণের ঘটনায় ইতিমধ্যে সরকার ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া রাতে শহরে পুলিশের টহল জোরদার, প্রত্যক বাসের চালক এবং সহকারীদের পরিচয় সনাক্ত এবং বাসের জানালার পর্দা লাগানো নিষিদ্ধের মতো বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
তবে এ সব পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নন আন্দোলনকারীরা। তাদের দাবি, ধর্ষকদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নয়, মৃত্যুদণ্ডের বিধান করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ ডিসেম্বর চলন্ত স্কুলবাসে ফিজিওথেরাপির ২৩ বছর বয়সী এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর তাকে এবং তার ছেলেবন্ধুকে বেধড়ক মারধর করে বাস থেকে ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর থেকে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে ওই ছাত্রী আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার তলপেটে ইতিমধ্যে চারটি অপরারেশন করতে হয়েছে। আঘাতে গুরুতর আহত তার ছেলেবন্ধুও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় আটক ছয়জন ওই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। নয়াদিল্লির পুলিশ কমিশনার নিরাজ কুমার বলেছেন, ‘আমরা দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সর্বোচ্চ পর্যায় দাবি করব। এছাড়া ধর্ষকদের ফাঁসি দাবি করে সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠাব।’
ভারতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর কারাদণ্ড। দেশটিতে চাঞ্চল্যকর খুনের ক্ষেত্রে এবং দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িত থাকার অপরাধে সীমিত আকারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়।
প্রতি ২০ মিনিটে ধর্ষণ
ভারতে ধর্ষণের হার উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। দেশটিতে প্রতি ২০ মিনিটে একজন নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। রাজধানী নয়াদিল্লির ধর্ষণ পরিসংখ্যান আশঙ্কাজনক। এজন্য নয়াদিল্লি ‘রেপ ক্যাপিটাল’ হিসেবে গোটা ভারতে পরিচিত।
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর পরিসংখ্যান মতে, ২০১১ সালে ভারতে ২৪ হাজার ২০৬টি ধর্ষণের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ধর্ষণের হার আরো ১০ শতাংশ বেড়েছে। ১৯৯০ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে দেশটিতে ধর্ষণের ঘটনা দ্বিগুণ হয়েছে।