পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার অস্টমনিষা ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত গুমানি নদীর উপর একটি সেতুর নির্মাণ কাজ ৫ বছরেও শেষ হয়নি। দুই উপজেলাবাসীর অনেক প্রত্যাশার এই সেতুটির নির্মাণ কাজ আদৌ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। ঠিকাদার ৩ বছর আগে কাজ ফেলে চলে গেছে। প্রায় সোয়া কোটি টাকার বিল তুলে নিয়েছে। ৩ দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ফের ৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা ও পাবনার টেবুনিয়া মহাসড়ক থেকে সিরাজগঞ্জের মান্নাননগর যমুনা সেতু সংযোগ মহাসড়কের সাথে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে সেতুটির প্রথম নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০৭-০৮ অর্থবছরে।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্র জানায়, বিশ্ব ব্যাংকের (আরটিআইপি) প্রকল্পের অর্থায়নে ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭০ হাজার ৫১৯ টাকা চুক্তি মূল্যে দ্বিতীয় দফা দরপত্রে ঢাকার ফাউন্ডেশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড কাজ পায়। ২০০৮/০৯ অর্থ বছরের শুরুতে সেতুটির নির্মাণ শুরু করে তারা। ১৫৮ দশমিক ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুটির ২টি আ্যবাটমেন্ট ওয়ালসহ ২০ ভাগ কাজ করে ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে যায়। দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী কাজটি শেষ করার মেয়াদ ছিল ২০১০ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত।
উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারদের গাফিলতির কারণে কাজটি শেষ হয়নি। তার দরপত্র বাতিল করা হয়েছে ২০১০ জুনে। তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী শতকরা ১০ ভাগ হিসাবে ৪২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আর তাকে নিয়মানুযায়ী ১ কোটি ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬৬৪ টাকা বিল শোধ করা হয়েছে। এতে সরকারের ক্ষতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতে সরকারের ক্ষতি নেই। কারণ, তারা সেতুর যে পাইলিং করে গেছে, সেখান থেকেই নতুন কাজ শুরু হবে। ৬ কোটি ৯২ লাখ টাকার প্রকল্প নতুন করে করা হয়েছে। দাতা সংস্থার সাথে চুক্তির দ্বিতীয় ফেস নবায়ন হয়েছে। এলজিইডি পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ ২০১২ এর জুন পর্যন্ত ছিল। দাতা সংস্থা বলেছে এই মেয়াদের পর চুক্তি নবায়িত হলে তারা অর্থ ছাড় করবে।
গত শনিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পিলারে লাগানো লোহার রডগুলো অনেক চুরি হয়ে গেছে। ঢালাই খসে পড়েছে। চাটমোহর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন বলেন, ব্রিজটি হলে দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটা গতি সঞ্চার হতো। ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাকি বিল্লাহ বলেন, এটা দুঃখজনক। তিন দফা টেন্ডার করেও সেতুটা শেষ করতে পারলো না এলজিইডি।
নিমাইচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল মামুন বলেন, মির্জাপুর ও অস্টমনিয়ারহাটে একটি অটোসহ ৩০টি ধানের চাতাল থেকে প্রতিদিন ১০/১৫ হাজার মণ ধান ক্রাসিং হয়ে সেই চাল নৌকায় ঢাকা যায়। সেতুটা হলে সড়ক পথে অল্প সময়ে চাল যেতো ঢাকায়। অস্টমনিষা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জিবারত আলী বলেন, এই সেতু নির্মাণ হলে পাবনার টেবুনিয়া থেকে সিরাজগঞ্জের মান্নাননগর সড়ক চালু হতো। এতে পাবনা-কুষ্টিয়ার বাসগুলো এদিক দিয়ে ৫০/৬০ কি.মি. দূরত্ব বাঁচিয়ে ঢাকা চলাচল করতে পারতো। এখন বাসগুলো বনপাড়া-বাঘাবাড়ী হয়ে ৫০ কি.মি. ঘুরে ঢাকা যায়। মির্জাপুর হাটের ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, এটা তো আমাগারে কাছে স্বপ্নের সেতু। এটা হলে এলাকার চেহারাই বদলায়ে যেতো। বহরমপুর গ্রামের কৃষক আলী আহম্মেদ বলেন, বিরিজডা হলি আমাগারে খুবই উপকার হতো। নৌকায় করে আর ফসল টানে মির্জাপুর হাটে লেওয়া লাগতো না।