নিউজ ডেক্স ।। গোপালপুর বার্তা :
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে উত্তর বিলডগা গ্রামের চাঞ্চল্যকর শামীম মেলেটারি ওরফে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য শামীমকে স্ত্রীর পরকীয়ার কারণে শ্বাসরোধে হত্যা করে হাত-পা বেঁধে সুন্দর ব্রিজের উপর থেকে বৈরাণ নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
মামলার মূল আসামি গোপালপুরের আভঙ্গী গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আকরামুল ইসলামের কাছে মঙ্গলবার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা করেন।
জবানবন্দিতে রফিকুল ইসলাম জানান, শামীম মেলেটারি ও তিনি ঘনিষ্ঠ বন্ধু। অবসরে আসার পর শামীম (৩৯) পেনশনের পুরো টাকা জুয়া খেলে হেরে যায় ও ঘটনাটি গোপন রাখে। পরে শামীম নানা জনের কাছ থেকে প্রচুর ধার-কর্জ করে। পাওনাদারদের চাপে শামীম ঢাকায় গিয়ে আত্মগোপন করে। শামীমের অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রী রাজিয়া বেগমের (৩০) সঙ্গে তার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরই মাঝে একই উপজেলার বাইশকাইল (গইজারপাড়া) গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে সুজনের সাথেও রাজিয়া বেগমের দৈহিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
পরে রাজিয়া বেগমের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট রাতে ঢাকা থেকে শামীমকে ডেকে আনা হয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাকে সদর রাস্তা দিয়ে বাড়ি যেতে না দিয়ে নদীর পাড় দিয়ে বাড়িতে নেয়ার পথে সুন্দর ব্রিজের সামান্য দূরে মুখে ওষুধমাখা রুমাল চাপা দিয়ে অজ্ঞান করা হয়। পরে আগে থেকে কিনে আনা রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে সুন্দর ব্রিজের উপর থেকে নিচে বৈরাণ নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
ওই বছরের ২৪ আগস্ট স্থানীয় লোকজন দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশে খবর দিলে লাশ উদ্ধার করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনা করেন শামীমের স্ত্রী রাজিয়া বেগম আর বাস্তবায়নে অংশ নেন রাজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম, সুজন ও আব্দুর রহিম।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-দক্ষিণ) এসআই জাহাঙ্গীর আলম জানান, গোপালপুরের সাবেক সেনা সদস্য শামীম হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রথমে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করে তার স্ত্রী রাজিয়া বেগম গোপালপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে প্রথমে বাইশকাইল (গইজারপাড়া) গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে সুজন (২৮) ও আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আব্দুর রহিমকে (৩০) গ্রেফতার করেন। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক নিহত শামীমের স্ত্রী রাজিয়া বেগমকে গ্রেফতার এবং এসআই হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে স্ত্রীসহ ৪ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত আরো ২-৩ জনকে আসামি করে গোপালপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।
পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-দক্ষিণ) এসআই মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি মো. রফিকুল ইসলামকে কৌশলে গ্রেফতার করেন।
গ্রেফতারকৃত মো. রফিকুল ইসলাম ১৬৪ ধারায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট গোপালপুর উপজেলার সুন্দর ব্রিজের কাছে বৈরাণ নদীতে কচুরিপানার নিচ থেকে উত্তর বিলডগা গ্রামের মহির উদ্দিনের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. শামীমের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়।
সম্পাদক : অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন | নির্বাহী সম্পাদক : কে এম মিঠু
প্রকাশক কার্যালয় : বেবি ল্যান্ড, বাজার রোড গোপালপুর, টাঙ্গাইল -১৯৯০, বাংলাদেশ।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - ২০১৯-২০২৩