কে এম মিঠু, গোপালপুর :
বিয়ের দীর্ঘ ১৮ বছর পর শশুরের হাতে যৌতুকের টাকা ফেরত দিয়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন চার সন্তানের জনক টাঙ্গাইলের গোপালপুরের রহিম বাদশা।
জানা যায়, উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের হাবিবপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মো. আব্দুর রহিম বাদশা একই উপজেলার আলমনগর ইউনিয়নের নবগ্রাম দক্ষিনপাড়ার আব্দুল হালিমের মেয়ে লতা বেগমকে ২০০০ সালে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় ছেলে এবং মেয়ের বাবা গোপনে যৌতুক হিসেবে চল্লিশ হাজার টাকা লেনদেন করেন। বিয়ের প্রায় তিন বছর পর রহিম বাদশা বিষয়টি জানতে পেরে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন যেভাবেই হোক এই যৌতুকের টাকা ফেরত দিয়ে নিজেকে অপরাধ মুক্ত করার। অবশেষে দীর্ঘ ১৮ বছর পর বিয়ের সময় বরযাত্রী হিসেবে অংশ নেয়া প্রায় সবাইকে শশুর বাড়িতে দাওয়াত করে শশুরের হাতে তুলে দিলেন যৌতুকের সেই চল্লিশ হাজার টাকা। বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টিসহ প্রশংসনীয় কাজ হিসেবে সুনাম কুড়াচ্ছেন রহিম বাদশা।
এ বিষয়ে রহিম বাদশা বলেন, ২০০০ সালে বেকার অবস্থায় আমি লতা বেগমকে বিয়ে করি। সে সময় আমার অজান্তে স্থানীয় ঘটকের মাধ্যমে আমার বাবা শুশুরের কাছ থেকে যৌতুক হিসেবে চল্লিশ হাজার টাকা গ্রহন করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তখনই আমি প্রতিজ্ঞা করি যৌতুকের এই টাকা ফেরত দিয়ে নিজেকে অপরাধ মুক্ত করবো। পরবর্তীতে বেকার জীবন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে ঢাকায় গিয়ে চাকুরী পাই একটি ছোটখাটো কোম্পানিতে। নিজের এবং সংসার খরচের পর উপার্জন করা সামান্য বেতন থেকে কিছুকিছু টাকা আলাদাভাবে জমাতে শুরু করি। পরে এক সময় বেতন বৃদ্ধিসহ বাংলাদেশের নামকরা কোম্পানি ওয়ালটনে ড্রাইভার হিসেবে আমার নতুন কর্মসংস্থান হলে ধীরেধীরে ঘনিয়ে আসতে থাকে আমার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার প্রহর। অবশেষে শুক্রবার জনসম্মুখে শশুরের হাতে যৌতুকের সেই চল্লিশ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে সমাজের জন্য ব্যাধি, ধর্মীয় ও সরকার কর্তৃক একটা অপরাধ বিষয় থেকে নিজেকে মুক্ত করলাম।
ছেলের এই কাজের জন্য রহিম বাদশার মা নিজেকে একজন গর্বিত মা মনে করে বলেন, আমি চাই আর কোন বিয়েতে যেন যৌতুকের লেনদেন না হয়। আমার ছেলে যৌতুকের ঋণ পরিশোধ করায় আমি অনেক আনন্দিত।
রহিম বাদশার শশুর আব্দুল হালিম জানান, ১৮ বছর পরে হলেও মেয়ে জামাতার মধ্যে শুভবুদ্ধি উদয়সহ এমন কান্ডে এলাকাবাসী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। যৌতুক প্রথার অভিশাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করার এ বিরল ঘটনায় গ্রামে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সবারই উচিত রহিম বাদশার মতো সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়া যৌতুকের জীবাণু ধ্বংস করা।
সম্পাদক : অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন | নির্বাহী সম্পাদক : কে এম মিঠু
প্রকাশক কার্যালয় : বেবি ল্যান্ড, বাজার রোড গোপালপুর, টাঙ্গাইল -১৯৯০, বাংলাদেশ।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - ২০১৯-২০২৩