কে এম মিঠু, গোপালপুর :
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) সংসদীয় আসনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নৌকা মার্কার মনোনয়ন প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবীর অনুসারী ও সমর্থকগোষ্ঠীরা ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে গোপালপুর-ভূঞাপুর নির্বাচনী এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ড. নুরুন নবীর এমপি প্রার্থীতার কথা জানান দিয়ে তার সমর্থকগোষ্ঠীরা নানা ধরণের পোস্টার-ফেস্টুন ও লিফলেট বিতরণ করে যাচ্ছেন।
এবিষয়ে ড. নুরুন নবী বলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের হাইকমান্ড গত সংসদ নির্বাচনে আমাকে টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) সংসদীয় আসনে এমপি প্রার্থী মনোনীত করে ডেকে পাঠালে, আমি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে গণসংযোগসহ নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণার কাজ শুরু করি। অল্প সময়ের মধ্যেই আমি জনগণের আস্থাভাজন মানুষ হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করি। কিন্তু শেষেমেষ রাজনৈতিক নাটকীয়তায় আর্কস্মিকভাবে আমি প্রার্থীতা থেকে বাদ পরি।
ড. নুরুন নবী এ প্রতিবেদককে আরও বলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের হাইকমান্ডের সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ আছে। তাদের সবুজ সংকেত পেলেই স্বদেশে ফিরে দেশ মাতৃকার ঋণ পরিশোধ করতে জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে, আমি আপমর প্রিয় গোপালপুর-ভূঞাপুরবাসীকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী কাজ শুরু করবো।
বিশস্ত সুত্রে জানা যায়, দেশের মানুষদের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা আর দায়বদ্ধতা থেকেই জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেশের জন্য কাজ করতে চান এই অকোতভয় দেশপ্রেমিক। তিনি বিদেশ থেকেই তার নির্বাচনী এলাকার সূধীজন, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, নেতৃস্থানীয় নেতাকর্মী ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। খুব শীগ্রই টাঙ্গাইল-২ আসনে নির্বাচন করার লক্ষ্যে আওয়ামীলীগের মনোনয়নপত্র কিনবেন এই প্রবীণ ‘হাইভোল্টেজ’ রাজনীতিবিদ। টাঙ্গাইল-২ আসনের সকলস্তরের গণমানুষের কাছে তিনি এবং তার সমর্থকরা দোয়া চেয়েছেন।
ড. নুরুন নবীর সংক্ষিপ্ত পরিচিত :
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী গোপালপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী খামারপাড়া গ্রামে ১৯৪৯ সালে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। হেমনগর শশীমূখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্টিকুলেশন ও ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়নে স্নাতক করে জাপানের কিয়ুশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মলিকুলার বায়োলজিতে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করে দীর্ঘদিন কোলগেট কোম্পানিতে গবেষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কোলগেট টোটালের অন্যতম আবিস্কারক তিনি । তাঁর ৫০টিরও বেশি পেটেন্ট রয়েছে।
১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত থাকাকালীন তিনি যোগ দেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেয়া ছাড়াও তিনি ছিলেন যুদ্ধ পরিকল্পনাকারী ও বার্তাবাহক। মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় কমান্ডারদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের মত গুরুত্বপূর্ন কাজ করা ছাড়াও তিনি ভারতীয় সীমান্ত পাড়ী দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রের জোগান দিতেন । ১৯৭২ সালের ৬ মে ‘ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ’ সাময়িকী সংখ্যায় মুক্তিযুদ্ধে দুঃসাহসী ভূমিকার জন্য ড. নুরুন নবীকে টাঙ্গাইল মুক্তিবাহিনীর 'মাথা' বা 'দ্য ব্রেইন' আখ্যা দেয়।
একাত্তুরের দুঃসাহসী এই মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও পটভুমি লিখছেন নিয়মিত। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও দুঃসাহসিক অভিযান নিয়ে লিখেছেন ‘বুলেটস অফ ৭১’ ‘অ্য ফ্রিডম ফাইটার’স স্টোরি’ নামে দুটি অমূল্য গ্রন্থ। তাছাড়াও তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ইতিহাসের অনেক অজানা বিষয়কে তুলে ধরে রচনা করেছেন ‘আমার একাত্তুর আমার যুদ্ধ’ ‘জন্মেছি এই বাংলায়’ ‘জন্ম ঝড়ের বাংলাদেশ’ ‘আমেরিকায় জাহানারা ইমামের শেষ দিনগুলি’ হুমায়ুন আহমেদ কাছের মানুষ’ ‘শামসুর রাহমান স্বাধীনতার কবি’ ‘কবীর চৌধুরী মৌলবাদের নির্ভীক প্রতিবাদী’ এসব গ্রন্থগুলো। যা দেশ-বিদেশে খুবই পাঠকনন্দিত ও ব্যাপক আলোচিত। এছাড়া এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি আমেরিকায় প্রবাসী বাঙালিদের খবর নিয়ে প্রকাশিত “সাপ্তাহিক প্রবাসী” পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমী এ বছর বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবীকে সম্মানসূচক ‘ফেলোশীপ’ প্রদান করে। আমেরিকার নিউজার্সীর প্লেন্সবরো টাউনশিপ কমিটির নির্বাচনে কাউন্সিলম্যান হিসাবে চতুর্থ বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন প্রবাসী এই বাংলাদেশী। জনসেবার জন্য তিনি প্লেনসবরো ডেমোক্রেটিক অর্গানাইজেশনের পুরুস্কারও লাভ করে কয়েকবার।
ব্যক্তিজীবনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে ১৯৮০ সাল থেকে সপরিবারে বসবাস করা ড. নূরন নবী ১৯৭৪ সালের ২৬ মে ড. জিনাত নবীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধহন। তার স্ত্রীও একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী। দুই ছেলে মুশফিক নবী ও আদনান নবীকে নিয়ে তাদের সংসার।
সম্পাদক : অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন | নির্বাহী সম্পাদক : কে এম মিঠু
প্রকাশক কার্যালয় : বেবি ল্যান্ড, বাজার রোড গোপালপুর, টাঙ্গাইল -১৯৯০, বাংলাদেশ।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - ২০১৯-২০২৩