কে এম মিঠু, গোপালপুর :
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে এক প্রতিবন্ধী মেধাবীছাত্রের লেখাপড়ার দ্বায়িত্ব নিলেন উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো. মঞ্জুরুল হক ফরিদ।
প্রতিবন্ধী মেধাবীছাত্র মো. সাব্বির উপজেলার ডুবাইল গ্রামের অসহায় দিনমজুর মো. খালেক ও সালমা বেগমের সন্তান। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সাব্বির বড়।
অভাগা সাব্বির জন্মলগ্ন থেকেই দুই পা ও এক হাত বিকালঙ্গ হয়ে পৃথিবীর আলো দেখে। সর্বোচ্চ জেলা শহরের হাসপাতাল ও স্থানীয় কবিরাজের মাধ্যমে সাব্বিরকে নানাধরনের চিকিৎসা করানোর পর, বিকালঙ্গ হয়ে জন্ম নেয়া প্রিয় সন্তানের বোধশক্তিহীন হাত-পা আর কখনও ভালো হবেনা জেনে, সাব্বিরের চিকিৎসা চেষ্টায় ক্ষান্ত দেন তার পরিবার।
ধীরে ধীরে মায়ের কোল থেকে নেমে কাঠের পিড়িঁতে করে বাড়ির উঠোন, উঠোন থেকে বাড়ির পাশ দিয়ে হাটবাজারমূখী কাঁচা রাস্তা পর্যন্ত সীমানায় বড় হতে থাকে সাব্বির।
রাস্তায় বসে থেকে ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া দেখে, সাব্বিরও বায়না ধরে সে স্কুলে যাবে। দিনমজুর বাবা অার দুখিনী মা সন্তানের এই অাবদার ফেলে না দিয়ে পার্শ্ববর্তী অানন্দ স্কুলে প্রতিদিন কোলে করে নিয়ে যেতে থাকে। সাব্বির সাফল্যের সাথে অানন্দ স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে।
হাইস্কুলে পড়ার জন্য সাব্বিরের মধ্যে তুমুল অাগ্রহ বেড়ে গেলেও, বাড়ি থেকে হাইস্কুল প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে হওয়ায় যাতায়াত সমস্যায় সাব্বিরের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।
স্কুলে না নিয়ে যাওয়ায় একসময় সাব্বির নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিলে, অতিকষ্টে সাব্বিরের দিনমজুর বাবা ভ্যানগাড়ির মতো তিন চাকার একটি ঠেলাগাড়ি বানিয়ে দেয়। পাশের বাড়ির এক চাচাতো ভাইকে প্রতিদিন দশ টাকা করে দেয়ার বিনিময়ে চলতে থাকে সাব্বিরের হাইস্কুল জীবন।
সাব্বির এবছর স্থানীয় ডুবাইল অাদর্শ গণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করেছে।
এবার সাব্বিরের কলেজ জীবন। কিন্তু কি করে তা সম্ভব! এক- দিনমজুর বাবার পক্ষে উচ্চমাধ্যমিক লেখাপড়ার খরচ চালানো কষ্টসাধ্য। দুই- স্থানীয় কলেজ বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার।
সম্প্রতি নিউজের প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে পেরে, সাব্বিরের বাড়িতে গেলে, প্রতিবেদকে চিনতে পেরেই সাব্বিরের চোখেমুখে হাসি ফুটে উঠে! পড়াশোনা বিষয়ে সাব্বিরকে তার ইচ্ছের কথা জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠে "অাব্বা যতোদিন অামারে পড়াবো, অামিও ততোদিন পড়মু"।
পরে সংবাদ প্রতিবেদক উপজেলা ছাত্রলীগের অাহ্বায়ক মো. মঞ্জুরুল হক ফরিদকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি বলেন, অসহায় প্রতিবন্ধী সাব্বির যতোদূর পর্যন্ত পড়াশোনা করতে চায়, তার পড়াশোনার সমস্ত খরচ গোপালপুর উপজেলা ছাত্রলীগ বহণ করবে।
ছাত্রলীগ অাহ্বায়কের সহযোগিতায় সাব্বির বর্তমানে গোপালপুর কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয়ে যাতায়াত অসুবিধায় অনিয়মিতভাবে ক্লাস করছে।
সাব্বিরের দিনমজুর বাবা মো. খালেক জানান, প্রতিদিন যাতায়াত বাবদ ৭০/৮০ টাকা খরচ চালিয়ে অামার পক্ষে ছেলেকে কলেজ করানো অসম্ভব ব্যাপার। সমাজের বিত্তবান মানুষের সহযোগিতায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় সাব্বিরকে একটা ব্যাটারি চালিত হুইল চেয়ার বানিয়ে দিলে, সাব্বির নিয়মিত কলেজ করতে পারতো। অামি হৃদয়বান ভাইবোনদের কাছে অামার প্রতিবন্ধী অসহায় সাব্বিরের জন্য একটু সহযোগিতা কামনা করছি।
সম্পাদক : অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন | নির্বাহী সম্পাদক : কে এম মিঠু
প্রকাশক কার্যালয় : বেবি ল্যান্ড, বাজার রোড গোপালপুর, টাঙ্গাইল -১৯৯০, বাংলাদেশ।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - ২০১৯-২০২৩