শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া খাদ্য ও শিল্পখাতে কার্যকর দেশীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে খাদ্য ও শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। শিল্পমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে �খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিধারী জনশক্তির নিয়োগ এবং শিল্পায়নের সম্ভাবনা শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহবান জানান। ডেনমার্কের উন্নয়ন সংস্থা ড্যানিডা�র সহায়তায় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির (সিভিএএসইউ) খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ এ কর্মশালার আয়োজন করে। শিল্পমন্ত্রী বলেন, জ্ঞানভিত্তিক গুণগত শিল্পায়নের জন্য ইউনিভার্সিটি-ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্ক জোরদার করা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মৌলিক গবেষণা চালিয়ে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ও ফলাফল কারখানা পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে।
এর মাধ্যমে শিল্প উদ্যোক্তারা পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও পণ্য বৈচিত্রকরণের সুফল কাজে লাগাতে সক্ষম হবেন। তিনি দেশের শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাস্তবধর্মী পাঠ্যক্রম প্রণয়নের পরামর্শ দেন। দিলীপ বড়�য়া বলেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করতে পচনশীলতা প্রতিরোধক স্বাস্থ্যকর ফলমূলের জাত উদ্ভাবনে মৌলিক গবেষণা জোরদার করতে হবে। তিনি ফুড বায়োটেকনোলজির প্রয়োগ করে এধরনের ফলমূল ও খাদ্য পণ্য উৎপাদনে এগিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন। শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রায় ১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশ খাদ্যশিল্পের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বাজার। অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত খাদ্যপণ্য থেকে নিজেদের চাহিদা যোগান দেয়া গেলে, দেশ খাদ্য আমদানি থেকে মুক্তি পাবে। এর মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ের পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তিনি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপদ খাদ্যশিল্প গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন। এক্ষেত্রে তিনি নিজেদের মেধা ও জ্ঞান কাজে লাগানোর জন্য তরুণ খাদ্য বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু ও গুণগত মানের ফলমূল উৎপাদিত হলেও সংরক্ষণের অভাবে চাষিরা এর উপযুক্ত মূল্য পায় না।
তারা পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তি আবিষ্কার করে উৎপাদিত ফলমূল ও কৃষি পণ্যের উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন। বাংলাদেশের বিজ্ঞানিরা ইতোমধ্যে লবণাক্ততা প্রতিরোধক ধানজাত আবিষ্কার, ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ প্রজাতির ধান উদ্ভাবন, ভোজ্য তেলে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধকরণ ও লবণে আয়োডিন মিশ্রণে প্রায় সফল হয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তারা অন্যান্য খাদ্য ও ফলমূলে মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় খাদ্য অনুপ্রাণ সংমিশ্রণের কার্যকর প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দেন। সিভিএএসইউ-এর ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ.এস. মাহফুজুল বারি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. ওয়ায়েস কবির, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ ইসমাইল মোস্তফা, সিভিএএসইউ�র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. নীতীশ চন্দ্র দেবনাথসহ খাদ্য শিল্প উদ্যোক্তারা বক্তব্য রাখেন উল্লেখ্য, দিনব্যাপী আয়োজিত এ কর্মশালায় দেশের খাদ্যশিল্প উদ্যোক্তা, কৃষিবিজ্ঞানি, পুষ্টিবিজ্ঞানি, প্রযুক্তিবিদ, গবেষক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ খাদ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক শতাধিক বিশেষজ্ঞ অংশ নেন।