বাংলাদেশ টাইমসঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সরকার সশস্ত্র বাহিনীর সব প্রয়োজন আন্তরিকতার সাথে বিবেচনা করছে। তিনি মিরপুর সেনানিবাসের ডিএসসি মিলনায়তনে বুধবার ২০১২ সালের ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স ও আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স গ্র্যাজুয়েশনের সমাপনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের প্রশিক্ষণের মান এবং সরঞ্জামাদির আধুনিকায়নে গত চার বছর ধরেই আমরা বাজেট বাড়িয়েছি। নতুন যুদ্ধ জাহাজ কেনা হয়েছে, রানওয়ে বানানো হয়েছে, কেনা হয়েছে পর্যাপ্ত আধুনিক অস্ত্রপাতিও।’
তিনি এ সময় যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করার তৎপরতা সম্পর্কে সশস্ত্র বাহিনীকেও সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। যারা চায়নি বাঙালি জাতি বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াক, তাদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। এ কথা মনে রেখে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, প্রশাসন ও জনগণকে সজাগ থাকতে হবে।’
তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, ‘আপনাদের ও আপনাদের পরিবারের কল্যাণের জন্য নতুন নতুন চিকিৎসা সুবিধা, ভালমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উন্নত রেশন ব্যবস্থা, আবাসন, সেনানিবাসগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে।’
ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০১২ এ অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিরক্ষা বাহিনী ও প্রশাসনের বিভিন্ন শাখা থেকে আপনারা এসেছেন। একসাথে নীতি-নির্ধারণী বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, গবেষণা করেছেন। যার যার কর্মক্ষেত্রে ফিরে গিয়ে এই জ্ঞান আর অভিজ্ঞতাকে দেশ গড়ার কাজে লাগাবেন- এটা আমার কামনা।’
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং নির্যাতিত নারীদের কথা স্মরণ করেন।
সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু যে ৬ দফা দাবি পেশ করেছিলেন, তার ষষ্ঠ দাবি ছিল নিজস্ব বাহিনী গঠনের। ৬ দফার আলোচনায় বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনীতে বাঙালি অফিসারের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি তুলেছিলেন। তিনি জানতেন, অফিসারগণই একটি বাহিনীর স্তম্ভ।’
বঙ্গবন্ধু সে সময় একটি মিলিটারি একাডেমি, প্রাদেশিক নেভির সদরদপ্তর এবং সমরাস্ত্র কারখানা স্থাপনেরও দাবি জানিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০১২ এবং আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স-২০১২ এ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদ বিতরণ করেন।
অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোল্লা ফজলে আকবর স্বাগত বক্তব্য দেন।
সেনাবাহিনীর ১৮ জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, নৌ বাহিনীর দুই জন কমোডর ও এক জন ক্যাপ্টেন এবং বিমান বাহিনীর তিনজন গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার, বেসামরিক প্রশাসনের এক জন অতিরিক্ত সচিব ও নয় জন যুগ্ম সচিব, পুলিশের এক জন কর্মকর্তাসহ ৩৬জন কর্মকর্তা এবার ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্সে অংশ নেন।
ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্সে মালয়েশিয়া, তানজানিয়া, মিশর, জর্ডান, ভারত, পাকিস্তান, চীন, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, কাতার, নাইজেরিয়া, সৌদি আরব ও ব্রুনাইয়ের ২৭ জন অংশ নেন।
এছাড়া আমর্ড ফোর্সেস ওয়ার কোর্সে সেনাবাহিনীর ১৬জন লেফটেন্যান্ট কর্নেল, নৌবাহিনীর এক জন ক্যাপ্টেন ও তিন জন কমান্ডার এবং বিমান বাহিনীর এক জন গ্রুপ ক্যাপ্টেন ও তিন জন উইং কমান্ডার অংশ নেন।
অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল জহির উদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। [টাইমস নিউজ।জাকিয়া/রাকেশ/নাজমুল,ছবি-ফয়সাল]