ডেক্স নিউজ : পশু হত্যা আর মানবসৃষ্ট প্রতিকূলতায় যখন বাংলাদেশের বন বিপন্ন তখন “এক হও বিশ্ব, বাঁচাও হাতি” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে হাতি রক্ষায় বিশ্বজুড়ে আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ শনিবার নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব হাতি দিবস’।
ক্রমাগত আবাসস্থল ধ্বংস, খাদ্যাভাব এবং মানুষের সাথে দ্বন্দ্বে দিন দিন হাতির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। হাতি সংরক্ষণের জন্য সচেতনতা তৈরি করতে প্রতি বছর আগস্ট মাসের ১২ তারিখ পালন করা হয় বিশ্ব হাতি দিবস। পরিবেশবিদরা বলছেন হাতির আবাসস্থলের ওপর মানুষের সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় এখন যুক্ত হয়েছে হাতি। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ বলছেন, শুধু বিপন্ন নয়, হাতি এখন অতিবিপন্ন প্রাণী। বন উজাড় করে ফেলার কারণেই হারিয়ে যাচ্ছে হাতি।
সারা পৃথিবীতে স্থলবাসী প্রাণীদের মধ্যে সর্ববৃহৎ প্রাণী হাতি। পৃথিবীতে দুই প্রজাতির হাতি দেখতে পাওয়া যায়, একটি এশীয় হাতি, অপরটি আফ্রিকান। চলাফেরায় হাতি মানুষের চেয়ে স্বাধীন। এরা রাষ্ট্রের সীমানা মানে না। এরা বোঝে কোন বনে তাদের খাবার আছে, চলাফেরার ভালো পরিবেশ আছে। সেই পথ ধরেই এরা চলে, বসবাস করে। স্বভাবের এই প্রাকৃতিক নিয়মও হাতির জন্য কাল হয়ে দেখা দিয়েছে। নির্দিষ্ট পথে চলার এই স্বভাবের কারণে মানুষ এদের সহজে আক্রমণ করতে পারে।
বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞদের মতে, হাতিকে কেউ আক্রমণ করলে আত্মরক্ষায় প্রথমে বিশাল শুঁড় উঁচিয়ে চিৎকার করে শত্রুকে বিরত হতে বলে। তারপরেও শত্রু না থামলে কিছুটা সামনে এগিয়ে ভয় দেখায়। তাতেও কাজ না হলে এরা শত্রুকে আক্রমণ করে। হাতি বাঁচে মানুষের মতোই, ৬০ থেকে ৭০ বছর। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য হাতিকে ফরেস্ট ইঞ্জিনিয়ার বলা হয়, তাই হাতিকে বনের ইন্ডিকেটর স্পেসিসও বলা হয়।
কয়েক বছর ধরে দেশে মানুষের হাতে হাতির মত্যুর যে চিত্র দেখা যাচ্ছে এবং হাতির আবসস্থলের ওপর মানুষের সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় এখন যুক্ত হয়েছে হাতি। অনেকে উন্নয়নের নামে তাদের যাওয়ার পথ বা করিডোরে টাঙিয়ে রাখে বিদ্যুতের তার ও ফাঁদ।
বন বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১১ বছরে শুধু বাংলাদেশেই মানুষের হাতে ৬২টি হাতি মারা পড়েছে। তিন বছর ধরে মানুষের হাতে হাতির মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। অন্যদিকে হাতির আক্রমণে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা কমছে। বন বিভাগের হিসাবে ২০১০ সালে দেশে মানুষের হাতে মারা পড়েছে চারটি হাতি। ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ সালে পাঁচটি করে ও ২০১৪ সালে হাতি মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে সাতটিতে দাঁড়িয়েছে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, শুধু বিপন্ন নয়, হাতি এখন অতিবিপন্ন প্রাণী। বন উজাড় করে ফেলার কারণেই হারিয়ে যাচ্ছে হাতি। বন বিভাগ ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণবিষয়ক বৈশ্বিক ‘সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার’র (আইইউসিএন) চলমান হাতি জরিপের প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী দেশে বড়জোর ২০০ হাতি রয়েছে। অথচ ২০০৪ সালে ‘আইইউসিএন’র জরিপ অনুযায়ী দেশে হাতি ছিলো ২৭৯ থেকে ৩২৭টি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ায় হাতির বিচরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশের মধুপুর গড় থেকে শুরু করে গারো পাহাড়, সিলেট, চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্যাপক এলাকার পত্রঝরা ও চিরসবুজ বনে এক শতাব্দী আগে হাতি বিচরণ করত। এখন এরা শুধু চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার চিরহরিৎ বনাঞ্চলে বিচরণ করে। এদের স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে পাওয়া যায় চুনতি, টেকনাফ, ফাঁসিয়াখালী ও পাবলাখালী অভয়ারণ্য এবং কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, বাঁকখালী, রেজু, ফুলছড়ি ও মরিসা এলাকার চিরসবুজ বনাঞ্চলে।
গত বছর ‘একটি হাতির জন্য সরিষাবাড়ীর মানুষ যে সহমর্মিতা দেখিয়েছে, লোভী শিকারীদের জন্য তা লজ্জাকর’। এবার আমাদের নতুন কোনও কর্মশালা নয়, নতুন কোনও প্রকল্পও নয়, মা হারা একটি হাঁতি বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টার মধ্যে দিয়েই পালিত হল বিশ্ব হাতি দিবস। পশুহত্যা আর মানবসৃষ্ট প্রতিকূলতায় যখন বাংলাদেশের বন বিপন্ন তখন দেশে দ্বিতীয় বারের মতো ‘হাতি দিবস’ পালন করা হচ্ছে।
এশিয়ান হাতির আবাসস্থল উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিতকরণ ও মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি টেকসই ব্যবস্থপনা, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সর্বস্তরের সচেতনতা ও সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।
সম্পাদক : অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন | নির্বাহী সম্পাদক : কে এম মিঠু
প্রকাশক কার্যালয় : বেবি ল্যান্ড, বাজার রোড গোপালপুর, টাঙ্গাইল -১৯৯০, বাংলাদেশ।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - ২০১৯-২০২৩