মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ তথ্য প্রকাশ করা জরুরি। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা সহজ হয়। কারণ, বিনিয়োগ থেকে অর্জিত মুনাফার উপর নির্ভর করে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের লাভ-ক্ষতি। আর যে কোম্পানিতে ফান্ডের বিনিয়োগ থাকে সে কোম্পানির শেয়ার দরের ওপর নির্ভর করে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মুনাফার বিষয়টি। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানলে ফান্ডগুলোতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের সুবিধা হতো বলে মনে করেন তারা।
বিনিয়োগকারীরা জানান, অর্জিত মুনাফা বছর শেষে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে ফান্ডগুলো। কিন্তু ফান্ডের বিনিয়োগের তথ্য না জেনে শুধুমাত্র ফান্ডের সম্পদমূল্যের ওপর ভিত্তি করেই বিনিয়োগ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ফান্ডের সম্পদ মূল্য জানা যথেষ্ট হলেও ফান্ডগুলোর বিনিয়োগ কোন কোম্পানিতে রয়েছে তা না জেনেই এক রকম অন্ধকারে বিনিয়োগ করতে হয় বিনিয়োগকারীদের। তাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ফান্ডের বিনিয়োগের তথ্য প্রকাশ করা হলে তা বাজারে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতাও বাড়বে বলে মনে করেন তারা।
একটি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে গেলে কোম্পানি সম্পর্কে অনেক তথ্য জানার সুযোগ রয়েছে বিনিয়োগকারীদের। কোম্পানির ব্যবসায়িক কর্যক্রম থেকে শুরু করে তাদের প্রডাক্ট এবং বাজারে তার চাহিদা সম্পর্কেও জানতে পারেন বিনিয়োগকারীরা। তবে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে গেলে শুধুমাত্র এনএভি দেখে বিনিয়োগ করতে হয়। আর বিনিয়োগের জন্য যা যথেষ্ট বলে মনে করেন বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু ফান্ডগুলোর বিনিয়োগের বিবরণ যদি বিনিয়োগকারীদের জানা থাকে তবে তাদের জন্য ফান্ডে বিনিয়োগ আরো সহজ হবে। পাশাপাশি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগের তথ্য প্রকাশ করা হলে এতে ফান্ডের অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা আরো বাড়বে। এর ফলে এসেট ম্যানেজাররা তাদের পছন্দমতো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারবে না। কোনো ফান্ড দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীরা ওই ফান্ডে বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকতে পারবে। এতে করে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির পরিমান অনেক কমে আসবে। পাশাপাশি যেসব ফান্ড মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবে সেসব ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে। এতে করে বাজারের স্বচ্ছতা আরো নিশ্চিত হবে।
তারা আরো বলেন, এ ধরনের তথ্য গ্রহণের জন্য নতুন কোনো পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন পড়বে না। কারণ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগের তথ্য প্রতিদিনই এসইসিতে জমা দেয় এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো। এখন ইচ্ছে করলে তা বিনিয়োগকারীদেরও দিতে পারে। তাহলে বিনিয়োগকারীদের আর অন্ধকারে থেকে বিনিয়োগ করতে হবে না।
এ প্রসঙ্গে ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. শহীদুল শেয়ারনিউজ২৪ কে বলেন, বিনিয়োগকারীদের মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের তথ্য জানার শতভাগ অধিকার রয়েছে। ফান্ডের এসেট ভ্যালুর মত বিনিয়োগের তথ্যের বিষয়টিও বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। এটি খুব সহজেই করা সম্ভব। কারণ আমরা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো আমাদের বিনিয়োগের প্রতিদিনের তথ্য এসইসিতে জমা দেই। সুতরাং এসইসি বা ডিএসই’র ওয়েবসইটে এ তথ্য প্রকাশ করা কোনো ঘটনাই নয়। বরং এটি করলে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোতে বিনিয়োগকারীরা জেনে বুঝে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবেন।
তিনি আরো বলেন, এসেট ভ্যালুর পাশাপাশি ফান্ডের বিনিয়োগ কোন কোম্পানিতে রয়েছে তা জানা থাকলে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ আরো কার্যকরী হবে। এক কথায় তাদের অন্ধকারে থেকে বিনিয়োগ করতে হবে না।
একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মোহাম্মাদ এ হাফিজ শেয়ারনিউজ২৪ কে বলেন, একটি কোম্পানির ব্যবসায়িক পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের সামনে যত তুলে ধরা হবে সেটি বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের উপর প্রভাব রাখবে। তেমনি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগের বিষয়ে বিনিয়োগকারীরা যত বেশি তথ্য জানবে সেটি তাদের বিনিয়োগের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহজ হবে। তাই এনএভির পাশাপাশি ফান্ডের বিনিয়োগের তথ্য প্রকাশের ব্যবস্থা থাকলে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে। পাশাপাশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সভাপতি রকিবুর রহমান শেয়ারনিউজ২৪ কে জানান, বাইরের দেশগুলোতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের তথ্য প্রকাশ করা হয় কিনা সে বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে এ ধরনের তথ্য প্রকাশ করা হলে বিনিয়োগকারীরা মিউচ্যুয়াল ফান্ড সম্পর্কে আরো বেশি জানতে পারবেন।
সম্পাদক : অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন | নির্বাহী সম্পাদক : কে এম মিঠু
প্রকাশক কার্যালয় : বেবি ল্যান্ড, বাজার রোড গোপালপুর, টাঙ্গাইল -১৯৯০, বাংলাদেশ।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - ২০১৯-২০২৩