একটু বেখেয়াল হলেই কয়েক লাখ টাকা দামের গাড়িটি নিয়ে চম্পট দিতে পারে চোর! টাকার লোভে আপনার অজান্তে যাত্রী বা মালামাল বহন শুরু করতে পারে অসত্ ড্রাইভার। এমন সমস্যায় আপনার কম্পিউটারে বসেই দেখে নিন না গাড়িটি এখন কোথায় আছে। গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) প্রযুক্তির বদলৌতে প্রিয় গাড়িটির সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া যাবে বাড়িতে বা অফিসে বসেই। গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে না থাকলেও গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ, গাড়ির তেল-মবিলের হিসাবসহ যে কোনো সময় গাড়ি অচল করার ক্ষমতাও হাতে থাকবে। গাড়ি নিয়ে ভাবনার দিন বুঝি ফুরাল।
গাড়ি চুরি প্রতিরোধে জিপিএস
সম্প্রতি গাড়ি ছিনতাই প্রতিরোধে লোকেশন মনিটরিং ব্যবস্থা (জিপিএস) সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনসহ ছিনতাইয়ের হুমকি রয়েছে এমন সব ধরনের যানবাহনেই এই ব্যবস্থা সংযোজন করা হবে। যানবাহনে জিপিএস সংযোজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিআরটিএ-কে। তবে এর ব্যয় বহন করবে সংশ্লিষ্ট যানবাহনের মালিকরা। যে কোনো কোম্পানি থেকে জিপিএস ডিভাইস কিনে তা গাড়িতে সংযোজন করলে ছিনতাই বা চুরি হওয়া গাড়ি উদ্ধার করা যাবে সহজে।
গ্রামীণফোনের ভেহিকেল ট্র্যাকিং বিভাগ থেকে জানা যায়, ডিভাইসটি গাড়িতে লাগানো থাকলে যে কোনো স্থানে বসেই চুরি হওয়া গাড়ির দরজাও বন্ধ করে দেওয়া যাবে নির্ধারিত পিন কোড ব্যবহার করে। এ ছাড়া বুয়েট থেকে পরীক্ষিত গ্রামীণফোনের ভেহিকেল ট্র্যাকিংয়ের জিপিএস ডিভাইস প্রযুক্তি ব্যবহার করলে গ্রাহক তিন বছরের ওয়ারেন্টি সুবিধা পাবেন। যানবাহন চুরি ও ছিনতাই রোধে ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস, জিপ ও পণ্যবাহী ট্রাকে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) লাগানো বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। ফলে গাড়ির মালিক বা অন্য যে কোনো পক্ষ গাড়ির গন্তব্য অবস্থান নির্ণয় করতে পারবেন। পাশাপাশি ট্রাকের ড্রাইভার ও হেলপারের ছবি ও বায়োডাটা পরিবহন মালিকের কাছে সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যেসব স্থান থেকে ট্রাক পণ্য বোঝাই করবে, সেই আড়তে সংশ্লিষ্ট চালকের ছবি ও তার জীবনবৃত্তান্ত জমা দিতে হবে। এই প্রযুক্তিসেবা পাওয়া যাবে গ্রামীণফোনের সংশ্লিষ্ট যে কোনো সেবাদান কেন্দ্রে।
অটোমেটিক ভেহিকেল ট্র্যাকিং ইউনিট
গাড়ি চুরি ঠেকাতে এ মোক্ষম যন্ত্রটি ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে চালু হয়েছে নগরে। অটোমেটিক ভেহিকেল ট্র্যাকিং ইউনিট নামের একটি আলাদা ইউনিটও খোলা হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগে। নিজের গাড়িটিকে সার্বক্ষণিক চোখে চোখে রাখার এ প্রযুক্তিটি প্রথম বাজারে এনেছে নিটল-নিলয় গ্রুপের একটি কোম্পানি এনআইটিএস। এর পর ২০০৯ সাল থেকে বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ ভেহিকেল ট্র্যাকিংয়ের জন্য অনুমোদন দিয়েছে ১০টি কোম্পানিকে। এই প্রযুক্তিতে গাড়ির একটি গোপন স্থানে লাগানো থাকে ট্র্যাকারটি। আর এই ডিভাইসটি ব্যবহারের ফলে কোনো গাড়ি চুরি গেলেও গাড়ির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গাড়িটি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। মোটরগাড়ি, বাস, ট্রাক, মিনিবাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ক্ষেত্রে কার্যকর এ যন্ত্রটি। দাম ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। আর প্রতিমাসে গুনতে হবে ৭৫০ টাকা।
ইথার প্রযুক্তি
গাড়ি চুরি ও ছিনতাই রোধে উন্নত দেশগুলোতে এরই মধ্যে ব্যবহূত হচ্ছে ইথার প্রযুক্তি। বাংলাদেশও এই প্রযুক্তি নতুনভাবে গ্রহণ করেছে। দেশে মোবাইল কোম্পানিগুলোর টাওয়ার ব্যবহার করে গড়ে তোলা হবে এ প্রযুক্তির শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এর ফলে মুহূর্তেই শনাক্ত করা যাবে চুরি হয়ে যাওয়া গাড়িটির অবস্থান। মোবাইল সিম কার্ডের মতো ছোট্ট একটি ডিভাইস সংযুক্ত থাকবে গাড়িতে। কোনো গাড়ি চুরি হলে মোবাইল টাওয়ারের মাধ্যমে গাড়িটির অবস্থান শনাক্ত করা যাবে। হাইটেক এ প্রযুক্তিতে কেন্দ্রীয়ভাবে ডিভাইসটি লক করার ব্যবস্থা থাকবে। ডিভাইসটি লক করে দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে গাড়ির ইঞ্জিন। বিশেষ এই ডিভাইসটি গাড়ির এমন স্থানে লুকানো থাকবে যা খুলতেও সময় লাগবে তিন থেকে চার ঘণ্টা। গাড়ি ছিনতাই বা চুরির পর এ সময়ের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার করে ফেলতে পারবে গাড়িটি।
এনট্র্যাক প্রযুক্তি
এনট্র্যাক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শতকরা ৯৯ শতাংশ গাড়ি উদ্ধার করা সম্ভব। এনট্র্যাক সব ধরনের গাড়িতে ব্যবহার করে গাড়ি চুরি বা ছিনতাই সম্পূর্ণরূপে রোধ করা সম্ভব। ইন্টারনেটে লগ ইন করে জিআইএস ও জিপিএসের সাহায্যে গুগল আর্থ ও এনট্র্যাকের নিজস্ব ম্যাপের মাধ্যমে কম্পিউটারে দেখা যাবে গাড়ি চুরি করে চোর কোন পথে চালাচ্ছে। গাড়ি চুরি বা ছিনতাই হয়েছে জানার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই জানা যাবে গাড়িটি কোথায় কী অবস্থায় আছে। এটি গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে দেয়, ফলে চোর গাড়ির ভেতরেই আটকা পড়ে। এ ছাড়া এ প্রযুক্তিতে মোবাইল ফোন থেকে এসএমএস করে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া যায়। এনট্র্যাক মনিটরিংয়ের জন্য ডিএমপিতে এনটিএফএল ও ডিএমপির যৌথ প্রয়াসে একটি অটোমেটিক ভেহিকেল ট্র্যাকিং ইউনিট চালু করা হয়েছে। ফোন : ০১৬৭৩৫৮৪৮৪৪, ৯১২৩২৭৩।