বাংলাদেশ টাইমসঃ সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শেষ ম্যাচে ২ উইকেটে হারিয়ে স্বাগতিক বাংলাদেশ সিরিজ জিতে নিয়েছে। ৩৬ বল হাতে রেখে টাইগাররা ২২১ রান করলে বিজয়ের মাসে পুরো দেশবাসী এই উৎসবে মাতে।
৪৪তম ওভারের শেষ বলে নাসির হোসেন বাউন্ডারি হাকালে সারা দেশের মতো ঢাকার রাস্তায় নেমে আসে ক্রিকেটপ্রেমীরা। বাশি বাজিয়ে নেচে-গেয়ে তারা রাতভর উৎসব করেন।
অবশ্য এই জয় পেতে রীতিমতো ঘাম ঝরাতে হয়েছে টাইগারদের। শেষ দিকে এসে ম্যাচ পেণ্ডুলামের মতো দুলেছে। কখনো বাংলাদেশের পক্ষে তো কখনো ক্যারিবীয়দের দিকে। এই উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তোলেন বাংলাদেশের সোহাগ গাজী ও আব্দুর রাজ্জাক। জয় থেকে মাত্র ৪ রান দূরে সোহাগ আর ৩ রান থাকতে রাজ্জাক আউট হলে এই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো স্টেডিয়ামে।
এরপর জয়ের জন্য মাত্র এক রানের সময় ৪৪তম ওভারের পঞ্চম বলে শট করেই নাসির হোসেন সেটি নিশ্চিত চার ভেবে ইলিয়াস সানীকে নিয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন। তবে বল বাউন্ডারি লাইনের বাইরে যাওয়ার আগেই তা কুড়িয়ে ফেরত দেন ক্যারিবীয় ফিল্ডার। কিন্তু নাসির এবং সানী তাদের রান পূর্ণ না করায় অপেক্ষার প্রহর আরো বেড়ে যায়, সাথে শঙ্কাও।
তবে আন্দ্রে রাসেলের ওভারের শেষ বলে নাসির বাউন্ডারি হাকিয়েই উৎসবে মেতে উঠেন। সাথে মিরপুর স্টেডিয়াম, গোটা দেশ। মাঠে উপস্থিত থেকে শেষঅব্দি বাংলাদেশ দলকে উৎসাহ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
এরআগে ২১৮ রানের জয়ের লক্ষ্যে আট রানে প্রথম তামিম ইকবাল (৮) আউট হন। এক রান বাদেই নেই আনামুল হক (০)
দলের স্কোরে ৩০ রান যোগ হতে ফিরে যান জহুরুল ইসলামও (১০)।
এ অবস্থায় ডেপুটি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। দুজনে বলের সাথে পাল্লা দিয়ে গড়েন ৯১ (৭.১৮ গড়ে) রানের কার্যকর জুটি। এরপরই রিয়াদের মনোসংযোগে চিড়, ফল সুনীল নারিনের ঘূর্ণিবলে সরাসরি বোল্ড।
আউট হওয়ার আগে রিয়াদ করেন ৪৮ রান। ৪৫ বল মোকাবেলায় তার ইনিংসে রয়েছে ৭টি বাউন্ডারি। এরপর অধিনায়ক মুশফিকও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দলীয় ১৩৩ রানে ওই নারিনের বলেই বোল্ড হয়ে যান তিনি। ৫৬ বলে মুশফিকের ইনিংসেও রয়েছে ৭টি চারের মার।
এরপর নাসির হোসেন মমিনুল হককে নিয়ে ৫৬ রানের আরেকটি মূল্যবান জুটি গড়ে তোলেন। দ্বিতীয় স্পেলে সুনীল নারিন বল হাতে এসেই মমিনুলকে এলবিডব্লিউ করে বিদায় করেন। অবশ্য আউট হওয়ার আগে মমিনুল করেন ২৫ রান।
শে দিকে নাসির হোসেন আর সোহাগ গাজী দলকে জয়ের বন্দরে প্রায় নিয়েই গিয়েছিলেন। তবে ক্রিকেট যে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা সেটির জানান দিতেই জয়ের আনন্দে বলে সোহাগ গাজীর খোঁচা দিয়ে আউট হওয়া। এরপর রাজ্জাকের ফিরে যাওয়া। তবে নাসির কোন অনিশ্চয়তাকে বাস্তবতায় পরিণত হতে দেননি।
ইলিয়াস সানীকে সাথে নিয়ে জয়ের আনন্দে মেতে ওঠেন নাসির। তিনি শেষ পর্যন্ত ৫২ বলে ২ চার এক ছক্কায় ৩৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। আর ইলিয়াস সানীর সংগ্রহ অপরাজিত এক রান। বাংলাদেশ জয় পায় ২ উইকেটে, ৩৬ বল হাতে রেখে।
বল হাতে ২ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে অধিনায়কের সাথে কার্যকরি জুটি গড়ায় ম্যাচসেরা হয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আর সিরিজ সেরা হয়েছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
পাঁচ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ প্রথম দুটিতে জয় পায়। এরপরের দুটি ম্যাচ জিতে সমতায় ফেরে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর শেষ ম্যাচের জয়ে টাইগাররা ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিলো।
এরআগে শনিবার দুপুরে মিরপুর জাতীয় স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট পাওয়া সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২১৭ রান করতে সমর্থ হয়। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৫ রান করেন পোলার্ড। এছাড়া ডুয়েন ব্রাভো করেন ৫১ রান।
৩১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার শফিউল ইসলাম। এছাড়া মাহমুদুল্লাহ ও মমিনুল হক দুটি এবং সোহাগ গাজী একটি উইকেট তুলে নেন।
[বাংলাদেশ টাইমস/আল ফয়সাল/ ঢাকা]