বাংলাদেশে এসে যেন মোহাম্মদ আশরাফুল হয়ে গেছেন ক্রিস গেইল। তিন ধরণের ম্যাচ মিলিয়ে ২৫০ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার পরও শুরুটা কিভাবে করবেন তা নিয়ে এখনো সংশয়ে ভোগেন আশরাফুল। চলতি সফরে গেইলের অবস্থাও একই। তবে আশরাফুলের ক্ষেত্রে যতটা না বোলারের কৃতিত্ব তার চেয়ে বেশি দায় আশরাফুলের নিজের। কিন্তু গেইলের ব্যাপারটা কিছুটা ভিন্ন। চালিয়ে কিংবা ধরে দুই ভাবেই শুরু করেও পাখা মেলতে পারছেন না ইনিংসের। এক্ষেত্রে গেইলের ব্যর্থতার চেয়ে বাংলাদেশী বোলারদের কৃতিত্বই বেশি। শুরুতে গাজী জুজুর পর এবার যোগ দিয়েছেন পেসার মাশরাফি। ইনিংসের শুরুতে পরিকল্পনার স্পষ্ট ছাপ রেখে টানা ভালো জায়গায় বল ফেলে তৈরি করছেন চাপ। সেই চাপ আলগা করতে গিয়ে পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ফিরে যাচ্ছেন গেইল। আজও যেমনটা হল। ইনিংস শুরু করা সোহাগকে প্রথম ওভারটা মেডেন উপহার দিলেন গেইল। এরপর মাশরাফির টানা আড়াআড়ি লাইনে করা বলে কয়েকবার পরাস্ত হওয়ার পর উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন ইনিংসের ৪র্থ ওভারের শেষ বলে। এর আগে ১২ বল খেলে করতে পেরেছেন কেবল ৪ রান। আর তাতেই ২২৭ রানের পুঁজি নিয়েও জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো টাইগাররা। কিন্তু এদিন সিমন্সের জায়গায় সুযোগ পাওয়া টেস্ট সিরিজে দুই সেঞ্চুরি করা পাওয়েল ছিলেন অবিচল। দ্বিতীয় উইকেটে জুটি গড়েন আগের দুই ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া স্যামুয়েলসের সাথে। এই দুইজনের ১১১ রানের জুটিটিই মূলতঃ ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় স্বাগতিকদের। হাফসেঞ্চুরি থেকে ৩ রান দূরে থাকতে ফিরে যান পাওয়েল। ৩৪ থেকে ৪০তম ওভার পর্যন্ত ৩৮ বলের ব্যাবধানে মাত্র ২৪ রান খরচায় ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে দারুণভাবে ফিরে আসে বাংলাদেশ। কিন্তু এদিন যে হাতে তেল মেখে নেমেছিলেন টাইগাররা! ছেড়েছেন বেশ কয়েকটি ক্যাচ। এর মধ্যে ছিল স্যামুয়েলসের ক্যাচও, যিনি পরে পেয়েছেন ক্যারিয়ারের ৪র্থ সেঞ্চুরি। ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরিতে একাই ম্যাচ বের করে নিয়েছেন ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হওয়া স্যামুয়েলস। ১৪৯ বল খেলে ১২৬ রানের ইনিংস খেলে যখন আউট হয়েছেন তখন জেতার জন্য সফরকারীদের প্রয়োজন ২৩ বলে মাত্র ৬ রান।
এর আগে দুপুরে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম পাওয়ার প্লেতে দেখেশুনে খেলে ৪৪ রান যোগ করেন দুই ওপেনার তামিম ও বিজয়। মিরপুরে জনাবিশেক দর্শকের মত সারা দেশের মানুষও যখন আরেকটি বড় স্কোরের স্বপ্নে বিভোর তখন হঠাৎ করেই যেন মড়ক লাগে বাংলাদেশ শিবিরে। বিনা উইকেটে ৫৭ থেকে চোখের পলকে টাইগারদের স্কোর দাড়ায় ৭৮/৪।
দুই ওপেনারের সাথে ফিরে যান নাঈম ও নাসির। এরপর মমিনুল, মুশফিকরা প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও টিকতে পারেননি কেউই। তবে মান বাঁচিয়েছেন রিয়াদ। সোহাগ গাজীকে নিয়ে দলকে সম্মানজনক স্কোরের দেখা পাইয়ে দেওয়ার পথে সময়োপযোগী এক ইনিংস খেলে করেছেন ৫২ রান। এর আগে শুধু বল হাতে দেশ মাতানো গাজীর ব্যাটিং সত্তাও জেগে উঠেছিল এদিন। খেলেছেন ৩৬ বলে ৩০ রানের কার্যকরী ইনিংস।
সিরিজ জয়ের উৎসবের অপেক্ষায় থাকা দেশবাসীর অপেক্ষাটা তাই দীর্ঘায়িত হল আরও। তবে পরের ম্যাচে আরও কঠিন ভাবে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেল টাইগার দলপতি মুশফিকের কণ্ঠে। স্যামুয়েলসরাও নিশ্চয়ই ছেড়ে কথা বলবেন না। সিরিজের ৪র্থ ম্যাচটায় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশা তাই করাই যায়।