প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ উঠেছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। পুরো বাজারকে জিম্মি করে তারা গত দু’বছর ধরে ব্যবসা করছে। এতে বাজার এবং বিনিয়োগকারীদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হলেও তারা ঠিকই মুনাফা করেছে বলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ।
তাদের মতে, গত প্রায় দু’বছরে যেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ কমেছে সেখানে লোকসান কাটাতে না পরলেও কমাতে সক্ষম হয়েছে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। কিছু কোম্পানি এ বাজারে ব্যবসা করেই মুনাফা করেছে। গত বছর শেষে কয়েকটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। তার মানে ফান্ডগুলো মুনাফা করেছে। অথচ ফান্ডগুলোর ব্যবসা পুঁজিবাজার ভিত্তিক। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও একই চিত্র।
বিনিয়োগকারীরা আরো বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর লোকসানের পরিমানও কমে এসেছে। যদিও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো লোকসানে রয়েছে তার পরও মন্দা বাজারে তারা তাদের লোকসান না বাড়ানোর চেষ্টায় সফল হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের সব সময় প্রত্যাশা বেশি। তবে গত দু’বছরে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বিনিয়োগকারীদের সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
এদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কারণ ব্যাংকগুলো আইনের মধ্যে থেকে প্রচুর পরিমান বিনিয়োগ করতে পারে। গত ২০১০ সালের ধসের আগে বাজারের ব্যাপক উত্থানের পেছনে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ছিল অন্যতম। তখন অনেক ব্যাংক সীমা অতিক্রম করেও বিনিয়োগ করেছে এবং মুনাফার পরিমানও ছিল অনেক।
অথচ বর্তমানে সব প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী মন্দা বাজারের দোহাই দিয়ে বিনিয়োগ থেকে দূরে সরে রয়েছে। এ বাজারে বিনিয়োগের ঝুঁকি যখন বেশি ছিল তখই ব্যাংকগুলো অনেক বিনিয়োগ করেছে। মার্চেন্ট ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ফান্ড আর্থিক প্রতিষ্ঠান সকল প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ব্যাপক বিনিয়োগ ও মুনাফা করেছে।
তাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে নেই এ কথা মানতে নারাজ বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগের ধরণ পাল্টে অল্প বিনিয়োগে সক্রিয়। দীর্ঘদিন বিনিয়োগবিমুখ থেকে অল্প করে শেয়ার কিনতে থাকে এবং সামান্য বাড়লেই তারা বিক্রি করে দেয়। আর তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে সে বিক্রির চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রতিষ্ঠানগুলো যদি চায় তাহলে এ ধরনের স্বল্প মেয়াদী মুনাফালোভী মনোভাব বর্জন করে একটি স্থিতিশীল বাজারের জন্য কাজ করতে পারে। সম্মিলিতভাবে বিনিয়োগের মাধ্যমে তারা বাজারকে আস্থার একটি জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। আর যদি এমন হয় যে তারা শুধু ব্যবসাই করবে তাহলে এ বিষয়ে ঘোষণা দেয়া উচিত। যাতে করে বাজারের বৃহৎ স্বার্থে তাদের দায়িত্বের কথা বার বার বলতে না হয়।
গত দু’বছরে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি যেখানে শেষ হয়ে যাবার পথে সেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের লোকসান কমিয়ে এনেছে। কারো কারো মুনাফা হয়েছে। সুতরাং বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া উচিত বলে বিনিয়োগকারীরা জানান।