লিওনেল মেসি সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা নেই, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোও তাঁর কাছে অচেনা। এমনকি তাঁর দেশ কখনো বিশ্বকাপও খেলেনি, তবু গুলশান বিবি নামের পাকিস্তানি এক মহিলা উদগ্রীব হয়ে আছেন ব্রাজিল বিশ্বকাপের জন্য। হবেন-ই বা না কেন, অচেনা মেসি-রোনালদোরা যে তাঁর হাতে তৈরি বল দিয়েই ফুটবল বিশ্বকে মোহিত করার অপেক্ষায় ব্রাজিলে!
ব্রাজিল বিশ্বকাপের বলের নাম 'ব্রাজুকা'। ক্রীড়া সামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস এবারও তৈরি করেছে বিশ্বকাপের বল। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের 'জাবুলানি' বল নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হওয়ায় অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে তবেই বাজারে 'ব্রাজুকা' নামিয়েছে জার্মান প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বকাপে জোগান দেওয়া সেই সব বল তৈরির দায়িত্ব তারা দিয়েছিল পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের শহর শিয়ালকোটের 'ফরোয়ার্ড স্পোর্টস'কে। যেখানে দিন-রাত পরিশ্রম করে গুলশান বিবি তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে তৈরি করেছেন অগুনতি 'ব্রাজুকা'। নিজের তৈরি বলে বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দের পায়ের জাদু দেখতে রীতিমতো মুখিয়ে আছেন গুলশান। সংবাদ সংস্থা এএফপিকে নিজের অনুভূতি জানালেন তিনি এভাবে, 'বিশ্বকাপ দেখার জন্য মুখিয়ে আছি। ইনশাআল্লাহ আমরা খেলাগুলো দেখব। আমরা মহিলারা যারা বলগুলো তৈরি করেছি, তারা সবাই ভীষণ গর্বিত।'
তা হওয়ার কথাই, ব্রাজুকা তৈরিতে ৯০ শতাংশ কর্মীই ছিলেন মহিলা। পাকিস্তানের এমনও এলাকা আছে, যেখানে মেয়েরা অবহেলা-অবজ্ঞার শিকার, সেই দেশের মহিলাদের হাতে তৈরি বল দিয়ে বিশ্বকাপে ১২ জুন মাঠে নামছে ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া। মহিলা কর্মীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় 'ফরোয়ার্ড স্পোটর্স' ফ্যাক্টরির প্রধান নির্বাহী খাজা মাসুদ আকতার বলেন, 'মহিলারা পুরুষদের চেয়ে বেশি পরিশ্রমী এবং নির্ভুলভাবে কাজ করতে পারে।' যদিও 'ব্রাজুকা' তৈরি করাটা মোটেও সহজ কাজ ছিল না পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠানটির জন্য। অ্যাডিডাসের প্রধান প্রস্তুতকারক চীনের চাহিদা মেটাতে না পারায় তড়িঘড়ি করে তারা দায়িত্ব দেয় 'ফরোয়ার্ড'কে। মাত্র এক মাসের মধ্যে পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠানটি 'ব্রাজুকা' তৈরির সব দরকারি জিনিসপত্র গুছিয়ে নেয়। কাজটা ঠিক সময়ে শেষ করতে পারায় তৃপ্তি নিয়ে ফরোয়ার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তা হাসান মাসুদ খাজা বলেন, 'এটা আমাদের জন্য অনেক বড় গর্বের বিষয়, আমরা কাজটা করতে চেয়েছিলাম।'
অ্যাডিডাসের সঙ্গে তাদের এটাই অবশ্য প্রথম কাজ নয়। ১৯৯৫ সাল থেকে ফরোয়ার্ডের সঙ্গে কাজ করে আসছে জার্মান প্রতিষ্ঠানটি। অ্যাডিডাসের সঙ্গে চুক্তিতে তারা তৈরি করেছে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও বুন্দেসলিগার বল। আর এবার বিশ্বকাপ। তাতে গুলশান বিবিদের এতটা উদগ্রীব হওয়াটা তো স্বাভাবিকই! এএফপি
সম্পাদক : অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন | নির্বাহী সম্পাদক : কে এম মিঠু
প্রকাশক কার্যালয় : বেবি ল্যান্ড, বাজার রোড গোপালপুর, টাঙ্গাইল -১৯৯০, বাংলাদেশ।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - ২০১৯-২০২৩