বক্ষব্যাধি এবং হৃদরোগ সম্প�র্ণ আলাদা দু�টি বিষয়, যদিও এক বুকের পিঞ্জরেই সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ একে অন্যের সাথে জড়িয়ে ধরে আছে। যেমন কথায় বলে, �এক বুক জ্বালা নিয়ে জ্বলে পুড়ে মরছি।� সেই বুকের জ্বালা নিয়ে কিন্তু দু�টি বিষয়েই রয়েছে আলাদা আলাদা বিশেষজ্ঞ। কেউ বা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আবার কেউ বা বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ। তবুও বক্ষব্যাধি থেকে অনেক সময় হৃদযন্ত্র আক্রান্ত হতে পারে।
ফুসফুসের এমফাইসিমা নামে একটি রোগ রয়েছে, যা দেখা দিলে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হয়। রোগী চুপচাপ বসে থাকলে শ্বাসকষ্ট খুব একটা হয় না। কিন্তু একটু চলাফেরা করলেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। এই এমফাইসিমা রোগটি অনেক দিন ধরে আস্তে আস্তে ফুসফুসে তৈরি হতে থাকে এবং শেষ পর্যায়ে ফুসফুসের রক্তনালীগুলোর মধ্যে বাধা বাড়িয়ে দিতে থাকে। এই বাধা বৃদ্ধি শেষ পর্যায়ে হৃদযন্ত্রের ডানদিকের অংশের কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে রাইট হার্ট ফেইল্যুর সৃষ্টি করে। তাতে করে শ্বাসকষ্ট আরো বেড়ে যায়। লিভার ফুলে আরো বড় হয়ে যায় এবং পেটের ডান দিকে চাপ দিলে রোগী ব্যথা অনুভব করে, পরে পানি নেমে পা ফুলে যায়। ডান দিকের রগগুলোও ফুলে যায়। একপর্যায়ে অক্সিজেন দিয়েও খুব একটা লাভ হয় না।
তবুও আমরা হার্ট ফেইল্যুরের সনাতনী ওষুধ অর্থাৎ অক্সিজেন, ফ্রসেমাইড, ডিজিটালিস, এমনাইনোফাইলিন প্রয়োগ করে রোগীকে আরাম দেয়ার চেষ্টা করি। এই হৃদরোগটি যেহেতু একটি বক্ষব্যাধির পরিণতিস্বরূপ তাই বক্ষব্যাধি অর্থাৎ এমফাইসিমা যেন না তৈরি হয় সেটাই চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। এখন প্রশ্ন হলো, এমফাইসিমা কেন হয়? অতিরিক্ত ধূমপানের কুফলে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের সাথে সাথে এমফাইসিমা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত ধূমপানের কুফলে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের সাথে সাথে এমফাইসিমা দেখা দিতে পারে। তাই ধূমপানের অভ্যাস আজই পরিত্যাগ করুন। অনেক দিন ধরে হাঁপানি লেগে থাকলেও এমফাইসিমার সৃষ্টি হতে পারে।
হাঁপানির উপযুক্ত চিকিৎসা দিয়ে হাঁপানিকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। মনে রাখবেন ডায়াবেটিস এবং উচ্চরক্তচাপের মতো হাঁপানিকেও ক্রমাগত এবং বিরতিহীনভাবে ওষুধ খেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। যেহেতু অনেক দিন ধরে হাঁপানি থাকায় এমফাইসিমার জন্ম হয় তাই রোগী বুঝতেই পারে না শ্বাসকষ্ট কি শুধু হাঁপানির জন্যই হচ্ছে না তার ফুসফুসে এমফাইসিমা দেখা দিয়েছে। সে জন্য নিয়মিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে এক্সরে এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একজন হাঁপানি রোগীকে তার হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
এ ছাড়া বংশগত কারণেও এমফাইসিমা রোগটি দেখা দিতে পারে। জন্মগত কারণে যদি রক্তে আলফা ওয়ান এন্টিট্রিপসিনের অভাব থাকে তাহলে এমফাইসিমা দেখা দিতে পারে। তবে আমাদের দেশে ধূমপান এবং পরিবেশ দূষণের ফলেই ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস হয়ে অথবা বহু দিনের অনিয়ন্ত্রিত হাঁপানির ফলে ফুসফুসে এমফাইসিমা দেখা দিয়ে থাকে।
যদি কোনো ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের অথবা এমফাইসিমার রোগীর পায়ে পানি আসে, বুক ধড়ফড় করে, লিভার ফুলে বড় হয়ে পেটের ডান দিকে চাপ দিলে ব্যথা করে, শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, তাহলে ধরে নিতে হবে যে রোগীর হৃদযন্ত্রের ডানদিকের অংশ বিকল হয়ে ফেইল্যুর দেখা দিয়েছে। এই ফেইল্যুরকেই আমরা করপালমোনেল বলে থাকি।
সব কথার বড় কথা, যদি আপনি ধূমপায়ী হয়ে থাকেন তবে আজই ধূমপান ছেড়ে দিয়ে অধূমপায়ী হয়ে সুস্থ জীবনযাপন করুন। হাঁপানির আজকাল খুবই উন্নত চিকিৎসা বেরিয়ে গেছে। সেই উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে আপনার হাঁপানিকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
মনে রাখবেন, প্রতিরোধ রোগের চিকিৎসার চেয়ে শ্রেয়। এমফাইসিমা তৈরি না হলে করপালমোনেলের মতো জটিল রোগও তৈরি হবে না। কারণ করপালমোনেল এমন একটা শ্বাসকষ্টজনিত হৃদরোগ যা সারাতে চিকিৎসক হিমশিম খেয়ে যান।